সংবাদকর্মী শবনম শারমিনের লাশ অন্তত পাঁচ দিন ধরে ফ্যানের সঙ্গে ঝুলছিল। সেই খবর স্বজন ও সহকর্মীদের কেউ জানতে পারেনি। পুলিশ যখন ঢাকার মগবাজারের একটি ফ্ল্যাট থেকে শারমিনের (৩০) লাশ উদ্ধার করে, ততক্ষণে পচন ধরেছে।
লাশ উদ্ধারের পর থেকে শারমিনের স্বামী সাইদুল ইসলামের কোনো খোঁজ নেই। তিনিও একটি বেসরকারি টেলিভিশনের সংবাদকর্মী বলে জানা গেছে। পুলিশ জানায়, গতকাল মঙ্গলবার রাতে মগবাজারের একটি পাঁচতলা ভবনের পঞ্চম তলার ফ্ল্যাট থেকে শারমিনের গলিত লাশ উদ্ধার করা হয়। লাশের অবস্থা দেখে মনে হয়েছে পাঁচ–সাত দিন আগে ওই নারীর মৃত্যু হয়েছে। গত মার্চ থেকে শারমিন ও তাঁর স্বামী সাইদুল ইসলাম এই ফ্ল্যাটে ছিলেন।
এ ঘটনায় আজ বুধবার আত্মহত্যার প্ররোচনার অভিযোগ এনে শারমিনের স্বামী সাইদুল ইসলামের বিরুদ্ধে হাতিরঝিল থানায় মামলা করেছেন বোন শবনম পারভীন। তবে এটি হত্যা নাকি আত্মহত্যা, সেটি ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন পেলে নিশ্চিত হওয়া যাবে বলে জানিয়েছে পুলিশ।
পুলিশ সূত্র বলছে, তবে বিয়ের পর থেকেই শারমিন ও সাইদুলের মধ্যে টানাপোড়েন চলছিল। ঘটনার পর থেকে শারমিনের স্বামী সাইদুলের আচরণ রহস্যজনক। স্ত্রীর লাশ উদ্ধারের পর সাইদুলের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি ঢাকার বাইরে আছেন বলে জানিয়েছেন। তিনি মুঠোফোন বন্ধ করে পালিয়েছেন।
মামলায় শারমিনের বোন শবনম পারভীন উল্লেখ করেন, শারমিন একটি অনলাইন নিউজ পোর্টালে কাজ করেন। গত মার্চে শারমিনের সঙ্গে সাইদুলের বিয়ে হয় বলে জানতে পারেন তাঁরা। তবে শারমিনের সঙ্গে তাঁদের তেমন যোগাযোগ ছিল না। শারমিন কোথায় থাকতেন, সেটিও তাঁরা জানতেন না। সর্বশেষ গত ১৮ ডিসেম্বর মুঠোফোনে শারমিনের সঙ্গে বড় বোন পারভীনের কথা হয়েছিল। তবে ২৩ ডিসেম্বর শারমিনের মুঠোফোনে কল করা হলে সেটি কেউ রিসিভ করছিলেন না। পরে সাইদুলের মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলেও তিনি কিছু জানাননি।
শবনম পারভীন জানান, দুদিন পর (২৫ ডিসেম্বর) আবারও সাইদুলের সঙ্গে মুঠোফোনে যোগাযোগ করেন তিনি। কিন্তু শারমিনের কোনো খোঁজ দেননি সাইদুল। পরে শারমিনের কর্মস্থলে যোগাযোগ করেন তিনি। সেখান থেকে জানানো হয়, দুই সপ্তাহ ধরে ছুটিতে আছেন শারমিন। স্বামীর সঙ্গে তিনি মগবাজার এলাকায় থাকেন। তবে বাসার ঠিকানা তাঁরা দিতে পারেননি। পরে সাইদুলের সঙ্গে আবারও যোগাযোগ করে বাসার ঠিকানা নেন। গতকাল রাতে বাসায় গিয়ে দরজা বন্ধ পান। ভেতর থেকে পচা গন্ধ আসায় হাতিরঝিল থানা-পুলিশকে খবর দেওয়া হয়। পুলিশ এসে শারমিনের লাশ উদ্ধার করে।
পুলিশের তেজগাঁও শিল্পাঞ্চল অঞ্চলের অতিরিক্ত উপকমিশনার (এডিসি) হাফিজ আল ফারুক প্রথম আলোকে বলেন, শবনম শারমিনের স্বামী সাইদুর রহমানের আচরণ রহস্যজনক। তাঁকে গ্রেপ্তার করে জিজ্ঞাসাবাদ করা গেলে অনেক রহস্যের জট খুলতে পারে।
শবনম শারমিনের সহকর্মী গোলাম রব্বানী প্রথম আলোকে বলেন, শারমিন এক বছর ধরে ওই অনলাইন পোর্টালে কাজ করছেন। তিনি ওই অনলাইন পোর্টালে অ্যাসাইনমেন্ট এডিটর হিসেবে কর্মরত ছিলেন। তিনি নভেম্বরে বিয়ে করেছেন বলে জানিয়েছেন। স্বামীকে নিয়ে ঘুরতে যাওয়ার কথা বলে তিনি দুই সপ্তাহ আগে ছুটি নিয়েছিলেন।
পুলিশ জানায়, শারমিন ঘুরতে যাওয়ার কথা বলে ছুটি নিলেও ঢাকাতেই ছিলেন। মার্চে বিয়ে করলেও সেটি সহকর্মীদের কাছে গোপন রেখেছিলেন। শারমিনের গ্রামের বাড়ি ঝিনাইদহ। এক যুগের বেশি সময় ধরে পরিবারের সঙ্গে তাঁর তেমন কোনো যোগাযোগ ছিল না। তাঁর স্বামী সাইদুল ইসলাম সম্পর্কে শারমিনের স্বজনেরা তেমন কিছু জানেন না।