কলকাতার ফ্ল্যাটে সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজীমকে খুনের পর তাঁর লাশ খণ্ড খণ্ড করে কয়েক টুকরা বাইরে ফেলা হয় এবং কিছু অংশ কমোডে ফ্ল্যাশ করা হয়। বাইরে টুকরাগুলো ফেলেন কলকাতায় গ্রেপ্তার ‘কসাই’ জিহাদ হাওলাদার ও নেপালে পলাতক ভোলার বোরহানউদ্দিনের মো. সিয়াম হোসেন।
ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশের পক্ষ থেকে পুলিশ সদর দপ্তরের ন্যাশনাল সেন্ট্রাল ব্যুরোকে (এনসিবি) দেওয়া চিঠিতে এসব বিষয় উল্লেখ করা হয়েছে। ২৫ মের এই চিঠিতে বলা হয়, আনোয়ারুল আজীমকে খুনের পর তাঁর দেহ টুকরা টুকরা করা হয়। মাংসের টুকরাগুলো দুটি টয়লেটের কমোডে ফ্ল্যাশ করা হয়। হাড় ও মাথার টুকরাগুলো একটি লাগেজে ভরে জিহাদ ও সিয়ামকে দেওয়া হয়। তাঁরা ওই টুকরাগুলো কাছাকাছি থাকা বর্জ্য খালে ফেলে দেন।
তদন্ত-সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো জানায়, ওই ফ্ল্যাটের সেপটিক ট্যাংক থেকে উদ্ধার হওয়া মাংসের টুকরাগুলোই হয়তো কমোডে ফ্ল্যাশ করা হয়েছিল। এখন বাইরে ফেলে দেওয়া খণ্ডিত অংশগুলো উদ্ধারের চেষ্টা করা হবে। এ জন্য জিহাদকে গ্রেপ্তারের পর কলকাতা পুলিশ তাঁকে নিয়ে গত এক সপ্তাহে বিভিন্ন স্থানে তল্লাশি চালিয়েছে। তবে তাঁর দেওয়া তথ্যে লাশের কোনো অংশ উদ্ধার হয়নি। এ অবস্থায় কলকাতা ও ঢাকার পুলিশের ধারণা, সিয়ামকে গ্রেপ্তার করতে পারলে লাশের বাকি অংশগুলো উদ্ধার হতে পারে। এই সিয়ামকে নিয়ে তৈরি হয়েছে রহস্য।
২৫ মের এই চিঠিতে বলা হয়, আনোয়ারুল আজীমকে খুনের পর তাঁর দেহ টুকরা টুকরা করা হয়। মাংসের টুকরাগুলো দুটি টয়লেটের কমোডে ফ্ল্যাশ করা হয়। হাড় ও মাথার টুকরাগুলো একটি লাগেজে ভরে জিহাদ ও সিয়ামকে দেওয়া হয়। তাঁরা ওই টুকরাগুলো কাছাকাছি থাকা বর্জ্য খালে ফেলে দেন।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, মো. সিয়াম হোসেনের বাড়ি ভোলার বোরহানউদ্দিনে। এলাকায় সবাই তাঁকে সাগর নামে চেনে। মূল বাড়ি বরিশালে হলেও বাবা মো. আলাউদ্দিন বালি ৪০-৪২ বছর আগে চাকরির সুবাদে বোরহানউদ্দিনে গিয়ে সেখানেই স্থায়ী হন। তাঁরা বোরহানউদ্দিন পৌরসভার ৮ নম্বর ওয়ার্ডের ভাড়া বাসায় বসবাস করতেন। চার–পাঁচ দিন আগে বাসা পরিবর্তন করে স্থানীয় একটি বাসায় ভাড়ায় ওঠেন।
সিয়াম এলাকায় সফটওয়্যার প্রকৌশলী হিসেবে পরিচিত। সিয়ামের বাবার সহকর্মী ও প্রতিবেশীরা বলেন, তাঁরা জানেন, সিয়াম ঢাকার একটি সফটওয়্যার কোম্পানিতে ভালো বেতনে চাকরি করেন এবং চাকরির সুবাদে প্রায়ই ভারত ও নেপাল যান। বরিশাল, বোরহানউদ্দিন ও ঢাকায় সিয়াম প্রচুর জমি কিনেছেন। বোরহানউদ্দিন শহরে একটি জমি কেনার জন্য তাঁর বাল্যবন্ধুর এক আত্মীয়কে চাপ প্রয়োগের বিষয়টি এলাকায় আলোচিত হয়। সম্প্রতি ২২ লাখ টাকা দিয়ে বরিশালে একটি জমি কিনেছেন।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে সিয়ামের এক বাল্যবন্ধু প্রথম আলোকে বলেন, ‘গত দু-তিন বছরে সিয়ামের জীবনযাপনে ব্যাপক পরিবর্তন আসে। এই সময়ে সে প্রচুর টাকার মালিক হয়েছে। কয়েক দিন পরপরই সে ভারত ও নেপালে যেতে থাকে। ঢাকায় কী করে জানতে চাইলে একেক সময় একেক উত্তর দিত। কিছুদিন আগেও ৪০ লাখ টাকার জমি কিনেছে বলে জানিয়েছে।’
কলকাতা ও ঢাকার পুলিশের ধারণা, সিয়ামকে গ্রেপ্তার করতে পারলে লাশের বাকি অংশগুলো উদ্ধার হতে পারে। এই সিয়ামকে নিয়ে তৈরি হয়েছে রহস্য।
সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজীম খুন হওয়া ফ্ল্যাটের সেপটিক ট্যাংক থেকে উদ্ধার হওয়া কয়েক টুকরা মাংস ডিএনএ পরীক্ষার জন্য পাঠানো হয়েছে। এই টুকরাগুলো সংসদ সদস্যের লাশের খণ্ডিত অংশ কি না, তা নিশ্চিত হতে কলকাতায় যাচ্ছেন আনোয়ারুলের কন্যা মুমতারিন ফেরদৌস।
আনোয়ারুলের পারিবারিক সূত্র জানায়, কলকাতায় পরিবারের পক্ষ থেকে চারজনের যাওয়ার কথা রয়েছে। মুমতারিন ছাড়াও আনোয়ারুলের ব্যক্তিগত সহকারী আবদুর রউফ, তাঁর বড় ভাই আলী আবেদ ও ভাতিজা সায়মনেরও যাওয়ার কথা রয়েছে। তাঁদের সঙ্গে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশও এ বিষয়ে যোগাযোগ করেছে।
আবদুর রউফ গতকাল বুধবার সন্ধ্যায় প্রথম আলোকে জানান, তিনি ও মুমতারিন ভারতের ভিসার জন্য আবেদন করেছেন। ভিসা পেলেই তাঁরা রওনা হবেন। সংসদ সদস্যের বড় ভাই ও ভাতিজার ভারতের ভিসা রয়েছে। তাঁরাও কলকাতা যাবেন।
গত দু-তিন বছরে সিয়ামের জীবনযাপনে ব্যাপক পরিবর্তন আসে। এই সময়ে সে প্রচুর টাকার মালিক হয়েছে। কয়েক দিন পরপরই সে ভারত ও নেপালে যেতে থাকে। ঢাকায় কী করে জানতে চাইলে একেক সময় একেক উত্তর দিত। কিছুদিন আগেও ৪০ লাখ টাকার জমি কিনেছে বলে জানিয়েছে।সিয়ামের এক বাল্যবন্ধু
সংসদ সদস্য খুনের কারণ নিয়ে এখনো অন্ধকারে রয়েছে ঢাকা ও কলকাতার পুলিশ। গতকাল এক অনুষ্ঠানে ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি) কমিশনার হাবিবুর রহমান বলেছেন, আনোয়ারুল আজীমকে কী কারণে হত্যা করা হয়েছে, বাংলাদেশ ও ভারতের পুলিশ তা জানতে পারেনি। খুনের মূল পরিকল্পনাকারীকে গ্রেপ্তার করতে পারলেই হত্যার মূল উদ্দেশ্য জানা সম্ভব হবে।
হত্যার মূল পরিকল্পনাকারী আক্তারুজ্জামান ওরফে শাহিনকে দেশে ফেরানোর বিষয়ে ডিএমপি কমিশনার বলেন, ‘তাঁকে ফেরানোর জন্য পুলিশের পক্ষ থেকে যে ধরনের চেষ্টা করা প্রয়োজন, তার সর্বোচ্চটা করা হবে। যদিও এখনো আমাদের সঙ্গে সেই ধরনের চুক্তি তাদের (যুক্তরাষ্ট্র) নেই, তারপরও অন্য যেকোনো মাধ্যমে বা কূটনৈতিক যেকোনো চ্যানেলে এ বিষয়ে সর্বোচ্চ চেষ্টা করা হবে।’
যুক্তরাষ্ট্র থেকে আক্তারুজ্জামানকে ফেরাতে ভারতের কোনো সহযোগিতা নেবেন কি না জানতে চাইলে ডিএমপি কমিশনার বলেন, এই খুনের ঘটনায় বাংলাদেশের আইনে বিচার হতে পারে, ভারতে ঘটনা ঘটেছে, তাই সেখানেও বিচার হতে পারে। পারস্পরিক আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে এসব বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।