মুঠোফোন আরেকজনের হাতে পড়লে সেটি ব্যবহার করে অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড করা হয়ে থাকতে পারে
মুঠোফোন আরেকজনের হাতে পড়লে সেটি ব্যবহার করে অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড করা হয়ে থাকতে পারে

গোপন ভিডিও নারীর কাছে

মুঠোফোন মেরামত করতে দোকানে রেখে আসার পর বাসায় এল পুলিশ

শাহাদাত হোসেন পেশায় নির্মাণশ্রমিক। পরিবার নিয়ে থাকেন রাজধানীর খিলগাঁও এলাকায়। সম্প্রতি তাঁর মুঠোফোনটি ঠিকভাবে কাজ করছিল না। পরে তিনি খিলগাঁওয়ে মুঠোফোন মেরামত করার কারিগর মাসুমের দোকানে যান। ঘণ্টাখানেক অপেক্ষার পর মাসুম বলেন, মুঠোফোনটি ঠিক করতে সময় লাগবে। বাধ্য হয়ে মাসুমের দোকানে মুঠোফোন রেখে আসেন শাহাদাত। এরপর একদিন হঠাৎ শাহাদাতের বাসায় আসেন পুলিশ সদস্যরা। তাঁরা জানতে চান, শাহাদাত কেন তাঁর মুঠোফোন থেকে একজন নারীর মুঠোফোনে গোসলের ভিডিও পাঠিয়েছেন?

এমন অভিযোগ শোনার পর শাহাদাত অবাক হয়ে যান। তখন শাহাদাত বলেন, যে মুঠোফোন থেকে ভিডিও পাঠানোর কথা বলা হচ্ছে, সেটি মেরামতের জন্য মাসুমের কাছে রেখে এসেছেন। পুলিশ সদস্যরা তখন মুঠোফোনের কারিগর মাসুমকে গ্রেপ্তার করে জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করেন। জিজ্ঞাসাবাদে মাসুম স্বীকার করেন, তিনিই ভুক্তভোগী নারীর গোসলের ওই ভিডিও ধারণ করেছেন।

খিলগাঁও থানার উপপরিদর্শক মো. মোজাম্মেল হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, মুঠোফোনের কারিগর মাসুমের স্বভাবচরিত্র ভালো নয়। ভুক্তভোগী নারীর সঙ্গে তাঁর আগে পরিচয় ছিল। একই এলাকায় তাঁরা বসবাস করেন। গোপনে তিনি ওই নারীর গোসলের দৃশ্য ধারণ করেন। পরে ওই নারীকে ‘ব্ল্যাকমেইল’ করতে সেই ভিডিওর দৃশ্য ওই নারীর মুঠোফোনে পাঠান।

পুলিশ কর্মকর্তা মোজাম্মেল হোসেন বলেন, মুঠোফোনের কারিগর মাসুম এতই ধূর্ত যে তিনি নিজের অপরাধ ঢাকতে শাহাদাতের মুঠোফোন নম্বর ব্যবহার করে হোয়াটসঅ্যাপে যুক্ত করেন। পরে সেই হোয়াটসঅ্যাপ থেকে ওই নারীর হোয়াটসঅ্যাপে ভিডিও পাঠান।

এ ঘটনায় ভুক্তভোগী নারী ১০ মে মাসুমের বিরুদ্ধে পর্নোগ্রাফি নিয়ন্ত্রণ আইনে মামলা করেন। ওই মামলায় ১১ মে গ্রেপ্তার হন মাসুম। পরে তিনি দোষ স্বীকার করে ঢাকার আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন। মাসুম এখন কারাগারে আছেন। সাক্ষী হিসেবে শাহাদাতও আদালতে জবানবন্দি দিয়েছেন।

ভুক্তভোগী নারীর মামলার এজাহারের তথ্য বলছে, তিনি একটি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করেন। ৯ মে অজ্ঞাত একটি হোয়াটসঅ্যাপ নম্বর থেকে তাঁর একান্ত মুহূর্তের ভিডিও দেখে মানসিকভাবে ভেঙে পড়েন। পরে সেই হোয়াটসঅ্যাপ নম্বরসহ খিলগাওঁ থানায় লিখিত অভিযোগ করেন। পরে তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তির সহায়তায় মুঠোফোন নম্বরের মালিক শাহাদাতকে খুঁজে বের করে পুলিশ। পুলিশ কর্মকর্তা মোজাম্মেল হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, এর আগেও মাসুম অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে জড়িত ছিলেন। আগেও তাঁর কাছে যাঁরা মুঠোফোন মেরামত করতে দিয়েছিলেন, তাঁদের মুঠোফোন ব্যবহার করে অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড করেছেন।

এ ধরনের ঘটনা এটাই প্রথম নয়। এর আগেও নানা ব্যক্তি মুঠোফোন মেরামত করার জন্য কারিগরের কাছে রেখে এলে সেটা দিয়ে একান্ত মুহূর্তের ছবি ও ভিডিও নিয়ে ব্ল্যাকমেইল করার ঘটনা ঘটেছে।

জানতে চাইলে ঢাকার সাইবার ট্রাইব্যুনালের স্পেশাল পাবলিক প্রসিকিউটর নজরুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, একজন গ্রাহক তাঁর মুঠোফোন মেরামত করার জন্য মুঠোফোনের কারিগরের কাছে রেখে এসেছিলেন। পরে কারিগর ওই মুঠোফোন থেকে গ্রাহকের নিকটাত্মীয় এক নারীর ছবি নিজের কাছে সরিয়ে নেন। পরে সেই ছবি ফটোশপে এডিট করে অশ্লীল ছবি বানিয়ে ওই নারীর মুঠোফোনে পাঠান। এ ঘটনায় মুঠোফোনের কারিগরের বিরুদ্ধে মামলা হয়।

নজরুল ইসলাম আরও বলেন, আরেক মুঠোফোনের কারিগর গ্রাহকের মুঠোফোনে থাকা একান্ত মুহূর্তের ছবি ও ভিডিও সরিয়ে নেন। পরে গ্রাহকের কাছে সেই ভিডিও পাঠিয়ে চাঁদা আদায় করেন। পরে ওই মুঠোফোনের কারিগরের বিরুদ্ধে মামলা হয়। তথ্যপ্রযুক্তির এই সময়ে গ্রাহক যদি সচেতন না হন, তাহলে যেকোনো মুহূর্তে তিনি বিপদে পড়বেন। তাই একমুহূর্তের জন্য নিজের মুঠোফোন অন্যের কাছে দেওয়া উচিত নয়। তাহলে অনেক ধরনের বিপদ থেকে বাঁচা সম্ভব।