সেই মহিষের মাংস ও পেঁয়াজ দুই মাস বন্দরে আটকা, ঘুষ চাওয়ার অভিযোগ

শিল্পের কাঁচামাল হিসেবে ভারত থেকে আসা সেই মহিষের মাংস ও পেঁয়াজ দুই মাসেও হিলি বন্দর থেকে ছাড়া হয়নি। এসব পণ্য বাজেয়াপ্তও করেনি বন্দর কর্তৃপক্ষ। হিমায়িত থাকায় মাংস এখনো ঠিক থাকলেও পেঁয়াজ নষ্ট হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা করছে আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান।

বন্দর কর্তৃপক্ষ বলছে, আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান শর্ত পূরণ না করায় পণ্যগুলো আটকে রাখা হয়েছে। অবশ্য আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান বলছে, তারা সব শর্ত পূরণ করেই আমদানি করেছে।

মাংসের চাটনি তৈরি করে দুবাইয়ে রপ্তানির জন্য এক টন হিমায়িত মহিষের মাংস এবং ২৫ টন পেঁয়াজ আমদানি করে ঢাকার সাভারের ভাকুর্তার মেডলাইফ প্যাকেজিং ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড নামের একটি প্রতিষ্ঠান। গত ১০ মে পণ্যগুলো বন্দরে এলে আটকে দেয় হিলি বন্দর কর্তৃপক্ষ।

হিলি বন্দরের উপকমিশনার (শুল্ক) মো. বায়জিদ হোসেন গতকাল শুক্রবার প্রথম আলোকে বলেন, প্রাণিজাত পণ্য (যেমন মহিষের মাংস) আমদানি করলে কোয়ারেন্টিনের বিধানাবলি প্রযোজ্য হয়। সে অনুযায়ী তারা (আমদানিকারক) নথিপত্র জমা দিতে পারেনি।

বায়জিদ হোসেন বলেন, আমদানির শর্ত পালনে প্রয়োজনীয় দলিলাদি জমা দিতে আমদানিকারক প্রতিষ্ঠানকে গত ২৫ জুন চিঠি দেওয়া হয়েছে। ১০ কার্যদিবসের মধ্যে দলিলাদি জমা দিতে না পারলে এসব পণ্য বাজেয়াপ্ত করা হবে।

গতকাল পর্যন্ত সেই চিঠি পায়নি মেডলাইফ। তবে বন্দর থেকে মালামাল খালাসকারী প্রতিষ্ঠান সেই চিঠি পেয়েছে। মেডলাইফের ব্যবস্থাপনা পরিচালক জিয়ন চৌধুরী জানান, চিঠির বিষয়টি ওই প্রতিষ্ঠান তাদের জানিয়েছে।

হিলি বন্দর

জিয়ন চৌধুরী প্রথম আলোকে বলেন, ‘তারা চিঠিতে যা বলেছে, তা আমদানি নীতি আদেশ অনুযায়ী বাণিজ্যিক খাতে আমদানির জন্য প্রযোজ্য। কিন্তু আমরা শিল্প খাতে ব্যবহারের জন্য এসব কাঁচামাল আমদানি করেছি। শিল্প খাতের জন্য বিদ্যমান সব নীতি মেনেই আমরা আমদানি করেছি।’

এদিকে বিষয়টি নিয়ে গত ২৫ জুন উচ্চ আদালতে একটি রিট করেছে মেডলাইফ প্যাকেজিং। জিয়ন চৌধুরী বলেন, রিট করার পর ২৬ জুন শুনানি হয়। আগামী সোমবার রায় হতে পারে।

আদালতের রায় অনুযায়ী কাজ করা হবে বলে জানিয়েছে হিলি বন্দর কর্তৃপক্ষ।

ঘুষ চাওয়ার অভিযোগ

সম্প্রতি রংপুর বিভাগের কাস্টমস, এক্সাইজ ও ভ্যাট কমিশনারেটের কমিশনার বরাবর একটি চিঠি দেয় মেডলাইফ। তাতে অভিযোগ করা হয়, হিলি বন্দরের বায়জিদ হোসেন এসব পণ্য ছাড় করতে ঘুষ দাবি করেন। ঘুষ দিতে অস্বীকার করায় তিনি বিষয়টি জটিল করার চেষ্টা করেছেন।

তবে বিষয়টি অস্বীকার করেছেন বায়জিদ হোসেন। তিনি বলেন, ‘এ অভিযোগ মিথ্যা। ওরা বিভিন্নভাবে কূটকৌশল চালাচ্ছে। শেষ পর্যন্ত কোনোভাবেই মাল খালাস করতে না পেরে এমন অভিযোগ দিয়েছে।’

আইন কী বলে

গত বছরের এপ্রিলে জারি হওয়া ‘আমদানি নীতি আদেশ ২০২১–২০২৪’ আইনের চতুর্থ অধ্যায়ে শিল্প খাতে আমদানির এবং পঞ্চম অধ্যায়ে বাণিজ্যিক খাতে আমদানির বিধানাবলি তুলে ধরা হয়েছে।

শিল্প খাতে আমদানি নিয়ে এই আইনে বলা আছে, ‘যেসব পণ্যের বাণিজ্যিক আমদানি নিষিদ্ধ এবং যাহাদের আমদানি, একমাত্র শিল্প খাতের জন্য বৈধ, সে সকল পণ্য নিয়মিত ভিত্তিতে অনুমোদিত শিল্প প্রতিষ্ঠান কর্তৃক নিয়মিত স্বত্ব অনুসারে আমদানি স্বত্বের সর্বাধিক ৩ গুণ পর্যন্ত আমদানি করা যাইবে।’

আর বাণিজ্যিক খাতে আমদানি নিয়ে বলা হয়েছে, ‘গরু, ছাগল ও মুরগির মাংস ও মানুষের খাওয়ার উপযোগী অন্যান্য পশুর মাংস আমদানির ক্ষেত্রে প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের পূর্বানুমতি গ্রহণ করতে হবে…।’

অর্থাৎ, দেশে মহিষের মাংস আমদানি নিষিদ্ধ নয়। তবে প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের পূর্বানুমতি গ্রহণের বিধান আছে। তবে এ বিধান শুধু বাণিজ্যিক খাতের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য।

এই মাংস ও পেঁয়াজ আটকের পরদিন এ বিষয়ে করণীয় সম্পর্কে নির্দেশনা চেয়ে আমদানি ও রপ্তানি প্রধান নিয়ন্ত্রকের দপ্তরে চিঠি দেয় হিলি বন্দর কর্তৃপক্ষ। চিঠির জবাবে এসব পণ্য বন্দর থেকে ছেড়ে দেওয়ার কথা বলা হয়।

বন্দর কর্তৃপক্ষকে সেই চিঠি দিয়েছিলেন সহকারী নিয়ন্ত্রক মোহাম্মদ সুমন মাহবুব। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘এসব পণ্য ছাড়যোগ্য। কাস্টমস কী মনে করে ছাড় করছে না, এটা আমরা পরিষ্কার নই।’