ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়

বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রকে মারধর করে আবার আলোচনায় ‘প্রলয় গ্যাং’

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় চিকিৎসাকেন্দ্রে প্রলয় গ্যাংয়ের সদস্যদের সেলফি
 ছবি: সংগৃহীত

আবার আলোচনায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একদল শিক্ষার্থীর অপরাধ চক্র ‘প্রলয় গ্যাং’। বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের এক ছাত্রকে মারধর-ছিনতাইয়ের অভিযোগে এই গ্যাংয়ের কয়েক সদস্যের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে।

৯ নভেম্বর রাজধানীর শাহবাগ থানায় মামলাটি হয়। মামলায় পাঁচ আসামির নাম উল্লেখ করা হয়েছে। এ ছাড়া ৮ থেকে ১০ জনকে করা হয়েছে অজ্ঞাতপরিচয় আসামি।

মামলার বাদী রেহেনা আক্তার। তিনি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) চিকিৎসক। তিনি মামলায় অভিযোগ করেছেন, ৮ নভেম্বর রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে ‘প্রলয় গ্যাংয়ের’ কয়েকজন সদস্যের হাতে মারধরসহ ছিনতাইয়ের শিকার হয়েছেন তাঁর বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়পড়ুয়া ছেলে মীর আলভী আরসালান।

মামলার ১ নম্বর আসামি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মুক্তিযোদ্ধা জিয়াউর রহমান হলের ছাত্র তবারক মিয়া। নাম উল্লেখ থাকা অন্য আসামিরা হলেন জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হলের মুরসালিন ফাইয়াজ, সাকিব ও জুবায়ের এবং স্যার এ এফ রহমান হলের জোবায়ের ইবনে হুমায়ুন।

প্রায় সাড়ে সাত মাস আগে প্রলয় গ্যাংয়ের সদস্যদের হাতে মারধরের শিকার হয়েছিলেন সহপাঠী হুমায়ুন। এই ঘটনার পর প্রলয় গ্যাংয়ের নানা কর্মকাণ্ড নিয়ে গণমাধ্যমে প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়।

হুমায়ুনকে মারধরের ঘটনায় সে সময় প্রলয় গ্যাংয়ের ১৯ সদস্যসহ অজ্ঞাতনামা ৬ থেকে ৭ জনের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছিল। এবার প্রলয় গ্যাংয়ের বিরুদ্ধে আরেক মামলায় হুমায়ুনই আসামি হলেন।

ক্যাম্পাস সূত্র জানায়, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষের কিছু শিক্ষার্থী মিলে আলোচিত অপরাধ চক্র ‘প্রলয় গ্যাং’ গড়ে তোলেন। এই গ্যাংয়ের সদস্যদের বিরুদ্ধে দীর্ঘদিন ধরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসসহ আশপাশের এলাকায় নানা অপকর্ম করার অভিযোগ আছে। হুমায়ুনকে মারধরের ঘটনার পর গ্যাংয়ের প্রকাশ্য অপরাধমূলক তৎপরতা কয়েক মাস সেভাবে চোখে পড়েনি। তবে গ্যাং আবার সক্রিয় হয়ে তৎপরতা চালাচ্ছে।

আলভীর মা রেহেনা আক্তারের দায়ের করা মামলার এজাহারে বলা হয়, তাঁর ছেলে ৮ নভেম্বর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের পশ্চিম পাশে বসে এক বান্ধবীর সঙ্গে গল্প করছিলেন। এ সময় তবারক, মুরসালিন, সাকিব, জুবায়ের, হুমায়ুনসহ কয়েকজন তাঁদের নানাভাবে হেনস্তা করেন, ভয়ভীতি দেখান। আলভী প্রতিবাদ জানালে তাঁকে উদ্যানের নির্জন স্থানে নিয়ে নির্যাতন করা হয়। তাঁকে রড, লাঠি ও কাঠ দিয়ে পেটানো হয়। তবারক রড দিয়ে পিটিয়ে আলভীকে রক্তাক্ত করেন। মুরসালিন লাঠি দিয়ে আঘাত করে আলভীর ডান হাতের কনুইয়ের হাড় ভেঙে ফেলেন।

আলভীর বুকে ও পিঠে লাথি মারেন জুবায়ের। সাকিবসহ কয়েকজন সিগারেটের আগুন দিয়ে আলভীর শরীর পুড়িয়ে দেন। এ ছাড়া আলভীর মুখ, মাথা, ঠোঁট ও চোখে ঘুষি দেওয়া হয়। আলভীর পকেটে থাকা ২ হাজার ৫০০ টাকা নিয়ে যান তবারক। আলভীর কাছে থাকা ২৫ হাজার টাকা দামের একটি মুঠোফোন কেড়ে নিয়ে ভেঙে ফেলেন মুরসালিন। আলভীর ড্রাইভিং লাইসেন্সসহ গুরুত্বপূর্ণ কাগজপত্র পুড়ে ফেলেন আসামিরা। গুরুতর আহত অবস্থায় আলভীকে ধানমন্ডির একটি বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। মামলা দায়েরকালে তিনি নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) চিকিৎসাধীন ছিলেন।

মামলার বিষয়ে জানতে চাইলে শাহবাগ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা নূর মোহাম্মদ প্রথম আলোকে বলেন, ‘এই ঘটনায় এখন পর্যন্ত কাউকে গ্রেপ্তার করা সম্ভব হয়নি। আমরা যথাযথ তদন্তের মাধ্যমে আইনানুগ ব্যবস্থা নেব।’

মামলা হওয়ার বিষয়টি অবগত আছেন বলে জানান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর মাকসুদুর রহমান। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘যেহেতু থানায় মামলা হয়েছে, তাই এই ঘটনায় পুলিশ যথাযথ আইনি পদক্ষেপ নেবে। আর বিশ্ববিদ্যালয়ও বিষয়টি দেখবে।’

সেই হুমায়ুন এবার আসামি

গত ২৫ মার্চ রাতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে হুমায়ুনকে পিটিয়ে রক্তাক্ত করেন প্রলয় গ্যাংয়ের সদস্যরা। এ ঘটনায় মামলা করেন হুমায়ুনের মা সাদিয়া আফরোজ খান। মামলাটি এখন আদালতে বিচারাধীন।

মূলত এই ঘটনার পরই প্রলয় গ্যাংয়ের অপরাধের নানা চিত্র গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়। সমালোচনার মুখে গ্যাংয়ের সদস্য নাইমুর রহমান ও সাকিব ফেরদৌসকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। পরে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে তাঁদের বহিষ্কার করা হয়।

এবার প্রলয় গ্যাংয়ের বিরুদ্ধে মামলার আসামি হওয়ার বিষয়ে জানতে গতকাল সোমবার হুমায়ুনের মুঠোফোনে একাধিকবার কল করা হয়। কিন্তু তাঁর মুঠোফোন নম্বরটি বন্ধ পাওয়া যায়।

হুমায়ুনের মায়ের করা মামলার ১ নম্বর আসামি তবারক। ৮ নভেম্বরের ঘটনায় দায়ের হওয়া মামলারও ১ নম্বর আসামি তিনি। মামলার অভিযোগের বিষয়ে জানতে গতকাল রাতে তাঁর মুঠোফোনে কল করা হলে তা বন্ধ পাওয়া যায়। মামলার অন্য আসামিদের সঙ্গে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি।