এক দিন আগে চট্টগ্রাম নগরের পতেঙ্গা সমুদ্র-উপকূলের বেড়িবাঁধ এলাকা থেকে ছুরিকাঘাতে নিহত অজ্ঞাতপরিচয় এক যুবকের লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। কিন্তু কেন, কী কারণে তাঁকে খুন করা হয়েছে, তার কোনো ক্লু (সূত্র) ছিল না। রাতে নির্জন এলাকায় এ হত্যাকাণ্ডের কোনো প্রত্যক্ষদর্শীও ছিল না। নিহতের পরিচয় জানতে না পারায় স্বজনদের কারও বক্তব্যও পাওয়া যায়নি। এ অবস্থায় মামলা হলে তদন্ত শুরু করে পুলিশ।
ঘটনার দিন ভোরে স্থানীয় এক ব্যক্তি রক্তমাখা শার্ট পরিহিত এক তরুণকে দেখে। পরে খুনের বিষয়টি জানতে পেরে পুলিশকে জানায়। পুলিশ রক্তমাখা সেই শার্টের সূত্র ধরে মো. আলমগীর (২৩) নামের ওই তরুণকে গতকাল রোববার রাতে গ্রেপ্তার করে। আজ সোমবার অজ্ঞাতপরিচয় ওই যুবককে ছুরিকাঘাতের কথা স্বীকার করে আদালতে জবানবন্দি দিয়েছেন আলমগীর।
পুলিশ ও আদালত সূত্র জানায়, জবানবন্দিতে আলমগীর স্বীকার করেন, ঘটনার রাতে পতেঙ্গা খেজুরতলা উপকূলের বেড়িবাঁধ এলাকায় ছিনতাই করতে তাঁর নেতৃত্বে ছয়জন অংশ নেয়। টাকাপয়সা আছে ভেবে তারা অজ্ঞাতপরিচয় ব্যক্তির পথ আটকায়। কিন্তু তার কাছে কিছু ছিল না। একপর্যায়ে তাদের সঙ্গে কথা-কাটাকাটিতে জড়িয়ে পড়েন ওই যুবক। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে তাঁর বুক ও পিঠে ছুরিকাঘাত করা হয়।
গতকাল রোববার দুপুরে পতেঙ্গা সমুদ্র-উপকূলের বেড়িবাঁধ এলাকায় একটি লাশ পড়ে থাকতে দেখে স্থানীয় লোকজন পুলিশে খবর দেন। লাশটি বেড়িবাঁধে হাঁটার জায়গায় পড়ে ছিল। বুক ও পিঠে ছুরিকাঘাতের চিহ্ন রয়েছে। বয়স আনুমানিক ৩৮-৪০ বছর হবে। এই ঘটনায় পুলিশ বাদী হয়ে পতেঙ্গা থানায় হত্যা মামলা করে।
পতেঙ্গা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবু জায়েদ মো. নাজমুন নুর প্রথম আলোকে বলেন, লাশের পরিচয় এখনো শনাক্ত করা যায়নি। ক্লুবিহীন এই মামলার তদন্ত করতে গিয়ে নিহতের স্বজনদের কারও কাছ থেকে কোনো তথ্য না পাওয়ায় কষ্টকর ছিল। তদন্তের একপর্যায়ে স্থানীয় এক ব্যক্তি ঘটনার দিন ভোরে রক্তমাখা শার্ট পরিহিত অবস্থায় আলমগীর নামের একজনকে দেখার কথা জানায়। আলমগীর সেদিন স্থানীয় ওই ব্যক্তিকে জানিয়েছিলেন, দুর্ঘটনার কারণে তাঁর শার্টে রক্ত লাগে। কিন্তু পুলিশ পরে এই বিষয়ে খোঁজ নিয়ে জানতে পারে আলমগীর একজন পেশাদার ছিনতাইকারী।
ঘটনার দিন তিনি কোনো দুর্ঘটনার শিকার হননি। সুস্থ রয়েছেন। একপর্যায়ে পুলিশ আলমগীরকে গ্রেপ্তার করে। পরে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে হত্যাকাণ্ডের কথা স্বীকার করেন তিনি। তাঁর কাছ থেকে রক্তমাখা ওই শার্ট মামলার আলামত হিসেবে জব্দ করা হয়। অজ্ঞাতপরিচয় ওই যুবককে ছুরিকাঘাত করতে গিয়ে তাঁর শার্টে রক্ত লাগে।
ওসি আবু জায়েদ মো. নাজমুন নুর আরও বলেন, আলমগীরের কাছ থেকে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে ঘটনায় জড়িত তার আরও পাঁচ সহযোগীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তারা হলেন তানভীর হোসেন, জাহিদ হোসেন, আলী আকবর, মো. নাসির ও মনির উদ্দিন।
পুলিশ সূত্র জানায়, মারামারির একটি মামলায় কারাগারে ছিলেন আলমগীর। হত্যাকাণ্ডের দুই দিন আগে গত বৃহস্পতিবার জামিনে বেরিয়ে আসেন তিনি। এরপরেই জড়িয়ে পড়েন অপরাধে। আজ স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেওয়ার পর তাঁকে কারাগারে পাঠিয়ে দেন আদালত। একই সঙ্গে তাঁর আরও পাঁচ সহযোগীকে কারাগারে পাঠানো হয়।