পল্লবীতে দিনের বেলায় ‘ডিবি পরিচয়ে তুলে নিয়ে টাকা লুট’, কিনারা করতে পারেনি পুলিশ

প্রতীকী ছবি
প্রতীকী ছবি

ঢাকার পল্লবীতে দিনের বেলায় গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি) পরিচয়ে একদল লোক এক ব্যবসায়ীকে গাড়িতে তুলে নির্যাতন এবং তাঁর দুই লাখ টাকা ছিনিয়ে নিয়েছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। তবে তিন সপ্তাহে এ ঘটনার কূলকিনারা করতে পারেনি পুলিশ।

অভিযোগকারী নাসির উদ্দিনের মিরপুরের কাজীপাড়ায় হার্ডওয়্যারের দোকান রয়েছে। পরিবার নিয়ে পল্লবী এলাকায় থাকেন। গত ২০ মে পল্লবী থানায় দায়ের করা মামলায় তিনি বলেছেন, ১৮ মে পল্লবীতে একটি বেসরকারি ব্যাংকের শাখা থেকে দুই লাখ টাকা তোলেন। টাকা নিয়ে সিএনজিচালিত অটোরিকশায় করে বাসায় ফিরছিলেন। তাঁকে বহনকারী অটোরিকশাটি বেলা পৌনে দুইটার দিকে পল্লবীর ঝিলপাড় পার হওয়ার সময় সাদা রঙের একটি প্রাইভেট কার তাঁদের গতি রোধ করে। গাড়ি থেকে চারজন লোক নেমে নাসির উদ্দিনের কাছে আসেন। নিজেদের ডিবি পুলিশ পরিচয় দিয়ে তাঁরা বলেন, ‘তোর নামে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা রয়েছে। গাড়িতে মাদক রয়েছে।’

তখন নাসির উদ্দিন জানতে চান, কিসের গ্রেপ্তারি পরোয়ানা। কোনো জবাব না দিয়ে ডিবি পুলিশ পরিচয় দেওয়া চারজন তাঁকে জোর করে প্রাইভেট কারে তোলেন। এরপর তাঁর দুই হাতে হতকড়া পরানো হয়। গামছা দিয়ে চোখমুখ বেঁধে ফেলে রাখা হয় গাড়িতে। এরপর নাসিরের পাজামার পকেটে থাকা দুই লাখ টাকা কেড়ে নেন তাঁদের দুজন। পরে আরও পাঁচ লাখ টাকা দাবি করেন তাঁরা। তবে নাসির টাকা দিতে অস্বীকৃতি জানালে গাড়ির ভেতরে তাঁকে বেদম মারধর করা হয়। এরপর চোখমুখ বাঁধা অবস্থায় তাঁকে নিয়ে ঘুরতে থাকেন ওই ব্যক্তিরা। বেলা আড়াইটার পরে নাসিরকে সাভারের ডেইরি ফার্ম এলাকায় গাড়ি থেকে ফেলে দিয়ে চলে যান তাঁরা। যাওয়ার আগে তাঁর মানিব্যাগও কেড়ে নেওয়া হয়। সঙ্গে থাকা মুঠোফোনের সিমও ফেলে দেন ডিবি পরিচয় দেওয়া ব্যক্তিরা।

পরে একজন পথচারীর মুঠোফোন থেকে পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করেন নাসির। মোক্তারুজ্জামান নামের ওই পথচারী গত সোমবার মুঠোফোনে প্রথম আলোকে বলেন, ‘নাসিরকে দেখে উদ্‌ভ্রান্ত মনে হচ্ছিল। তিনি আমাকে বলেছিলেন, অপহরণকারীরা আমার মাথায় আঘাত করেছে।’

যেহেতু ডিবি পরিচয়ে তুলে নেওয়া হয়েছিল, সে ক্ষেত্রে কারা সেই অপরাধী, সেটি চিহ্নিত করা জরুরি। এ ক্ষেত্রে পুলিশের আরও অনেক তৎপর হওয়া উচিত ছিল।
মো. নূর খান, নির্বাহী পরিচালক, আইন ও সালিশ কেন্দ্র

ব্যবসায়ী নাসির উদ্দিনের ভাষ্য, পথচারীদের সহায়তায় সেদিন বাড়ি ফেরেন। ঘটনায় এতটাই হতবিহ্বল হয়ে পড়েছিলেন যে কী করবেন বুঝতে পারছিলেন না। ঘটনার দুই দিন পর (২০ মে) পল্লবী থানায় গিয়ে পুরো ঘটনা খুলে বলেন। পরে অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিদের আসামি করে পল্লবী থানায় মামলা করেন তিনি।

সেদিন নাসিরকে কারা ডিবি পরিচয়ে তুলে নিয়ে নির্যাতন ও টাকা লুট করেছিল, তা এখনো বের করতে পারেনি পুলিশ। মামলার তদন্ত কর্মকর্তা পল্লবী থানার উপপরিদর্শক (এসআই) তারিক উর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, ‘ব্যবসায়ী নাসির উদ্দিনকে ডিবি পরিচয়ে কারা তুলে নিয়ে টাকা আদায় করেছে, সেটি এখন পর্যন্ত জানতে পারিনি। যে স্থান থেকে নাসির উদ্দিনকে তুলে নেওয়া হয়, সেখানকার কোনো সিসি (ক্লোজড সার্কিট) ক্যামেরার ফুটেজ পাওয়া যায়নি। ফলে কারা অপহরণে জড়িত, তাদের শনাক্ত করা সম্ভব হয়নি।’

সোর্স (তথ্যদাতা) লাগিয়ে জড়িত ব্যক্তিদের খুঁজে বের করার চেষ্টা চলছে বলে জানান এসআই তারিক উর রহমান। এদিকে নাম প্রকাশ না করার শর্তে তদন্তপ্রক্রিয়ার সঙ্গে যুক্ত থাকা দুজন পুলিশ কর্মকর্তা প্রথম আলোকে বলেছেন, পল্লবীর ঝিলপাড়ের যে স্থানে নাসির উদ্দিনকে অপহরণ করা হয়, সেখানকার আশপাশের সড়কের সিসি ক্যামেরার ভিডিও ফুটেজ সংগ্রহ করা হয়েছে।

এ বিষয়ে মামলার তদন্ত তদারক কর্মকর্তা ও ঢাকা মহানগর পুলিশের পল্লবী জোনের সহকারী কমিশনার শাহিদুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, ‘ব্যবসায়ী নাসির উদ্দিনকে ডিবি পরিচয়ে যারা তুলে নিয়ে টাকা লুট করেছে, তাদের খুঁজে বের করতে আমরা অনেক চেষ্টা করছি। ঘটনাস্থলের ফুটেজ না পেলেও মামলার তদন্তের স্বার্থে আশপাশের বেশ কিছু ফুটেজ বিশ্লেষণ করেছি। তাতে সাদা রঙের একটি প্রাইভেট কার দেখা গেছে। তবে অপরাধীদের ব্যবহৃত প্রাইভেট কারটির গাড়ির নম্বর জানা সম্ভব হয়নি।’

এ ঘটনায় সন্দেহভাজন এক ব্যক্তিকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে জানিয়ে শাহিদুল ইসলাম বলেন, তাঁর ঘটনার সঙ্গে সম্পৃক্ততার তথ্য পাওয়া যায়নি। পরে তাঁকে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে।

এ ঘটনায় ন্যায়বিচার চেয়ে নাসির উদ্দিন বলেন, ‘সেদিন কারা আমাকে ডিবি পরিচয়ে তুলে নিয়ে চোখ বেঁধে মারধর করে টাকা লুট করল, তা আমি জানতে চাই।’

দিনদুপুরে ব্যবসায়ীকে ডিবি পরিচয়ে তুলে নেওয়ার ২০ দিন পরও জড়িত ব্যক্তিদের চিহ্নিত করতে না পারাকে দুঃখজনক বলেছেন মানবাধিকার সংগঠন আইন ও সালিশ কেন্দ্রের নির্বাহী পরিচালক মো. নূর খান।

তিনি আজ বুধবার প্রথম আলোকে বলেন, ‘যেহেতু ডিবি পরিচয়ে তুলে নেওয়া হয়েছিল, সে ক্ষেত্রে কারা সেই অপরাধী, সেটি চিহ্নিত করা জরুরি। এ ক্ষেত্রে পুলিশের আরও অনেক তৎপর হওয়া উচিত ছিল। কারণ, ডিবি পরিচয়ে তুলে নিয়ে টাকা লুটের ঘটনায় জড়িত ব্যক্তিদের যদি বিচারের আওতায় না আনা যায়, সে ক্ষেত্রে ভুক্তভোগী আতঙ্কিত বোধ করবেন। তাঁর মনে নানাবিধ প্রশ্নও দেখা দিতে পারে।’