দেশে পুরুষের পাশাপাশি নারীদের মধ্যে আশঙ্কাজনকভাবে বাড়ছে মাদক সেবন

দেশে পুরুষের পাশাপাশি নারী মাদক গ্রহণকারীর হার আশঙ্কাজনকভাবে বাড়ছে। সামাজিক স্টিগমার (লোকলজ্জা) কারণে নারী মাদকসেবীরা চিকিৎসা গ্রহণে অনাগ্রহী। নারীদের মধ্যে মাদক গ্রহণের বিষয়টি নিয়ন্ত্রণ করা না গেলে সমাজে তা একসময় ভয়ংকর রূপ নেবে।

আজ বুধবার রাজধানী শ্যামলীতে ঢাকা আহ্ছানিয়া মিশন নারী মাদকাসক্তি চিকিৎসা ও পুনর্বাসন কেন্দ্র আয়োজিত এক আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত পরিচালক মো. জাফরুল্ল্যাহ কাজল এসব কথা বলেন।  

এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে।

ঢাকা আহ্ছানিয়া মিশনের পরিচালক (স্বাস্থ্য ও ওয়াশ) ইকবাল মাসুদ বলেন, ঢাকা আহ্‌ছানিয়া মিশন নারী মাদকাসক্তি চিকিৎসা ও পুনর্বাসন কেন্দ্রে ২০১৪ সাল থেকে এ পর্যন্ত ৬৪৭ জন নারীকে মাদক নির্ভরশীল, মানসিক ব্যাধি ও আচরণবিষয়ক চিকিৎসা দেওয়া হয়। তাঁদের মধ্যে ১২৯ জন রোগী পুনরায় চিকিৎসা গ্রহণ করেন।

চিকিৎসাসেবা গ্রহণকারী নারীদের মধ্যে ৩৩ শতাংশ ইয়াবা, ২৮ শতাংশ গাঁজা, ১৬ শতাংশ ঘুমের ওষুধ, ১৫ শতাংশ বিভিন্ন ধরনের মাদক, ২ শতাংশ মদ, ২ শতাংশ শিরায় মাদক গ্রহণকারী। মানসিক রোগের মধ্যে সিজোফ্রেনিয়া ৩৪ শতাংশ, মুড ডিজঅর্ডার ৩০ শতাংশ, বাইপোলার ১২ শতাংশ, ডিপ্রেশন ১০ শতাংশ, ওসিডিতে ৬ শতাংশ ও অন্যরা অন্যান্য মানসিক রোগে আক্রান্ত ছিলেন।

সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, এ কেন্দ্রে শুধু নারীদের দিয়েই নারী মাদকনির্ভরশীলদের চিকিৎসা দেওয়া হয়। মাদকনির্ভরশীলতা একটি অসুস্থতা, তাই মাদকাসক্তি কাটিয়ে ওঠা ব্যক্তিরা পুনরায় মাদক গ্রহণ করতে পারেন। এ জন্য পুনরায় চিকিৎসা গ্রহণে উদ্যোগী হতে হবে। সে ক্ষেত্রে সমাজের সব পর্যায় থেকে সচেতনতার কাজ করতে হবে।

মাদক গ্রহণের কারণের মধ্যে রয়েছে কৌতূহল, বন্ধুদের চাপ, একাকিত্ব, পরিবারের অন্য সদস্য বা বন্ধুবান্ধবের মাদক গ্রহণ, বিষণ্নতা, হতাশা, অতিরিক্ত রাগ-জেদ ইত্যাদি।

পারিবারিক ও সামাজিক লোকলজ্জার ভয়ে নারী মাদকনির্ভরশীলদের বিষয়টি আমাদের দেশে প্রায়ই প্রকাশ্যে আসে না, ফলে এ সমস্যার সমাধান সহজ হয় না উল্লেখ করে বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, সার্বিক বিষয় বিবেচনা করে ঢাকা আহ্ছানিয়া মিশন নারী মাদকনির্ভরশীলদের চিকিৎসায় কাজ করছে।

ইকবাল মাসুদের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন মনোরোগ বিশেষজ্ঞ ডা. আক্তারুজ্জামান সেলিম, ডা. নায়লা পারভীন, সিনিয়র সাইকোলজিস্ট রাখী গাঙ্গুলী। আরও উপস্থিত ছিলেন ঢাকা আহ্‌ছানিয়া মিশনের সহকারী পরিচালক মোখলেছুর রহমানসহ বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তা, মাদকাসক্তি থেকে ফিরে আসা ব্যক্তি ও চিকিৎসাধীন রোগীদের পরিবারের সদস্যরা।