আফ্রিকা থেকে আনা কোকেনের গন্তব্য ছিল ভারত

বাঁ থেকে কেলভিন ইয়েং, ননসো ইজেমা পিটার ওরফে অস্কার , নুডুলে ইবুকা স্টেনলি ওরফে পোডস্কি, আসাদুজ্জামান আপেল ও সাইফুল ইসলাম ওরফে রনি। কোকেন চোরাচালানে গতকাল এই পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে
ছবি: সংগৃহীত

ঢাকায় দুই বিদেশি নাগরিকের কাছ থেকে উদ্ধার হওয়া ৮ কেজি ৫০০ গ্রাম কোকেনের গন্তব্য পাশের দেশে (ভারত) ছিল বলে জানিয়েছেন মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের (ডিএনসি) মহাপরিচালক মুস্তাকীম বিল্লাহ ফারুকী। আজ রোববার তেজগাঁওয়ে ডিএনসির ঢাকা উত্তর অঞ্চলের কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান তিনি।

তিন বিদেশিসহ কোকেন পাচার চক্রের পাঁচজনকে গ্রেপ্তারের পর এই সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে ডিএনসি। গতকাল শনিবার ঢাকার বসুন্ধরা আবাসিক এলাকায় অভিযান চালিয়ে তাঁদের গ্রেপ্তার করা হয়। গ্রেপ্তার ব্যক্তিরা হলেন ক্যামেরুনের নাগরিক কেলভিন ইয়েং (৪২), নাইজেরিয়ার নাগরিক ননসো ইজেমা পিটার ওরফে অস্কার (৩০) ও নুডুলে ইবুকা স্টেনলি ওরফে পোডস্কি (৩১), বাংলাদেশি নাগরিক সাইফুল ইসলাম ওরফে রনি (৩৪) ও আসাদুজ্জামান আপেল (২৭)।

এর আগে ২৫ জানুয়ারি ঢাকার শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে আফ্রিকার দেশ মালাউয়ির নাগরিক নমথান্দাজো টাওয়েরা সোকোর (৩৫) কাছ থেকে ৮ কেজি ৩০০ গ্রাম কোকেন উদ্ধার করা হয়। পরে একটি পাঁচ তারকা হোটেলে অভিযান চালিয়ে ২০০ গ্রাম কোকেনসহ গ্রেপ্তার করা হয়েছিল তানজানিয়ার নাগরিক মোহাম্মেদ আলীকে (৫৫)। এই দুজনকে গ্রেপ্তারের পর কোকেন পাচার চক্রের বিষয়ে তথ্য পাওয়ার কথা জানিয়েছে ডিএনসি। তাঁদের তথ্যমতে, কোকোনের এযাবৎকালের সবচেয়ে বড় ওই চালান মালাউয়ি থেকে ইথোপিয়া ও দোহা হয়ে বাংলাদেশে আসে।

সংবাদ সম্মেলনে ডিএনসির মহাপরিচালক মুস্তাকীম বিল্লাহ ফারুকী বলেন, এই চক্রের প্রধান ডন ফ্রাংকি নামে নাইজেরিয়ার এক নাগরিক। তিনি ৯ বছর ধরে বাংলাদেশে ছিলেন। তবে ৯ মাস আগে নাইজেরিয়ায় গিয়ে এখনো ফেরেননি। নামমাত্র তৈরি পোশাক ব্যবসায়ের আড়ালে তিনি কোকেন চোরাচালানে জড়িত। বাংলাদেশ নাইজেরিয়ান কমিউনিটির প্রেসিডেন্টও ডন ফ্রাংকি। ফ্রাংকির বারিধারার বাসায় অভিযান চালিয়ে এই চক্রের বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পাওয়া গেছে। তাঁর বাসা থেকে কোকেন পরিবহনের কাজে ব্যবহৃত একাধিক লাগেজ ও ৭০ গ্রাম কুশ (অপ্রচলিত মাদক) পাওয়া যায়। ডন ফ্রাংকির অনুপস্থিতিতে তাঁর ভাই উইসলি এবং ম্যানেজার আসাদুজ্জামান আপেল ওই বাসায় থেকে ব্যবসা পরিচালনা করছিলেন।

গ্রেপ্তার সাইফুল ইসলাম রনি এই চক্রের বাংলাদেশি অংশের সমন্বয়কারী উল্লেখ করে ডিএনসির মহাপরিচালক বলেন, তিনি একটি অ্যাগ্রো মেশিনারিজ কোম্পানির পরিচালক। ডন ফ্রাংকির সঙ্গে ৩ বছর ধরে সাইফুল ইসলামের লেনদেন ছিল। মাদক বহনকারীদের দেশে প্রবেশের প্রয়োজনীয় আমন্ত্রণপত্র, হোটেল ঠিক করা ও ভিসা পাওয়ার কার্যক্রম তদারকি করতেন তিনি। তিনি ম্যাসপেক্স লিমিটেড নামে অস্তিত্বহীন প্রতিষ্ঠানের অনুকূলে ভুয়া আমন্ত্রণপত্র প্রস্তুত করে ডন ফ্রাংকির কাছে পাঠাতেন। তাঁর মুঠোফোন, ল্যাপটপ ও অন্যান্য যন্ত্র বিশ্লেষণ করে একাধিক ভুয়া আমন্ত্রণপত্র পাওয়া গেছে।

ডিএনসির কর্মকর্তারা জানান, গ্রেপ্তার ইজেমা পিটার ওরফে অস্কার জিজ্ঞাসাবাদে জানিয়েছেন, ডন ফ্রাংকির ভাই উইসলি বাংলাদেশে থেকে কোকেন এ দেশে আনা এবং এখান থেকে অন্য দেশে পাঠানোর কাজটি সমন্বয় করেন। উইসলি ২-৩ দিন আগে বাংলাদেশ ত্যাগ করেছেন।