চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন

প্রকল্প পরিচালককে মারধরের ঘটনায় গ্রেপ্তার ৪

হামলাকারীদের দেখা যাচ্ছে ভিডিও চিত্রে।
ছবি: প্রথম আলো

চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের আড়াই হাজার কোটি টাকার উন্নয়ন প্রকল্পের পরিচালককে মারধরের ঘটনায় চার ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।

গতকাল রোববার রাতে নগরের বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালিয়ে এই চারজনকে গ্রেপ্তার করা হয়। এ তথ্য প্রথম আলোকে নিশ্চিত করেছেন নগরের খুলশী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সন্তোষ কুমার চাকমা।

গ্রেপ্তার ব্যক্তিরা হলেন শাহ আমানত ট্রেডার্সের সঞ্জয় ভৌমিক ওরফে কঙ্কন, মাসুদ এন্টারপ্রাইজের মো. ফেরদৌস, শাহ আমানত ট্রেডার্সের সুভাষ ও জনৈক মাহমুদুল্লাহ। তাঁদের মধ্যে প্রথম তিনজন মারধরের মামলার এজাহারভুক্ত আসামি।

কাজ না পেয়ে প্রকল্প পরিচালক গোলাম ইয়াজদানীকে গতকাল বিকেলে নগরের টাইগারপাসে সিটি করপোরেশনের প্রধান কার্যালয়ে তাঁর কক্ষে ঢুকে মারধর করেন একদল ঠিকাদার।

মারধরের ঘটনায় গতকাল রাতে নগরের খুলশী থানায় মামলা হয়। সিটি করপোরেশনের নিরাপত্তা কর্মকর্তা মো. কামাল উদ্দিন বাদী হয়ে মামলাটি করেন।

মামলায় আসামি হিসেবে ১০ জন ঠিকাদারের নাম উল্লেখ করা হয়েছে। ৫ থেকে ১০ জনকে অজ্ঞাতনামা আসামি করা হয়েছে।

মামলায় যাঁদের নাম উল্লেখ করা হয়েছে, তাঁরা হলেন—এসজে ট্রেডার্সের সাহাবুদ্দিন, শাহ আমানত ট্রেডার্সের সঞ্জয় ভৌমিক ওরফে কঙ্কন, মাসুদ এন্টারপ্রাইজের মো. ফেরদৌস, শাহ আমানত ট্রেডার্সের সুভাষ, মেসার্স খান করপোরেশনের হাবিব উল্ল্যাহ খান, মেসার্স নাজিম অ্যান্ড ব্রাদার্সের মো. নাজিম, মেসার্স রাকিব এন্টারপ্রাইজের মো. ফিরোজ, মো. ফরহাদ, ইফতেখার অ্যান্ড ব্রাদার্সের মো. ইউসুফ ও জ্যোতি এন্টারপ্রাইজের আশীষ।

প্রকল্প পরিচালককে মারধরের ঘটনায় সিটি করপোরেশনের রাজস্ব কর্মকর্তা সৈয়দ শামসুল তাবরীজকে প্রধান করে তিন সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি করা হয়েছে। কমিটিকে তিন দিনের মধ্যে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে।

সিটি করপোরেশনের ইতিহাসে সবচেয়ে বড় প্রকল্প হচ্ছে ‘চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের আওতায় বিমানবন্দর সড়কসহ বিভিন্ন সড়ক উন্নয়ন ও গুরুত্বপূর্ণ অবকাঠামোগত উন্নয়ন’। আড়াই হাজার কোটি টাকার এই প্রকল্প জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় অনুমোদন পায় গত বছরের ৪ জানুয়ারি। স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় থেকে এ প্রকল্পের পরিচালক হিসেবে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের (এলজিইডি) নির্বাহী প্রকৌশলী গোলাম ইয়াজদানীকে গত বছরের ১৪ আগস্ট দায়িত্ব দেওয়া হয়।

প্রকল্পের প্রথম ধাপে ৩৭টি ভাগে (লটে) ২২০ কোটি টাকার দরপত্র আহ্বান করা হয়েছিল গত নভেম্বরে। প্রকল্পের আওতায় ওভারপাস, রাস্তা, পদচারী-সেতু, কালভার্ট নির্মাণ, গোলচত্বরসহ বিভিন্ন ধরনের উন্নয়নকাজ হবে।

সিটি করপোরেশন সূত্র জানায়, প্রকল্পের কাজ নিয়ে পরিচালকের ওপর আগে থেকে ক্ষুব্ধ ছিলেন ঠিকাদারেরা। দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে প্রকল্পের দরপত্র নিয়ম মেনেই করার উদ্যোগ নিয়েছিলেন তিনি। কিন্তু ঠিকাদারেরা চেয়েছিলেন ভাগাভাগি করে নিতে। এ জন্য করেছিলেন তদবিরও। কিন্তু তা মানেননি প্রকল্প পরিচালক। এতে প্রথম ধাপের ২২০ কোটি টাকার কাজেই নিয়মের কড়াকড়িতে বাদ পড়তে যাচ্ছেন বেশ কয়েকজন ঠিকাদার। এটা জেনেই তাঁর ওপর জোট বেঁধে হামলা করেন ঠিকাদারেরা। যাঁদের মধ্যে বেশির ভাগই আওয়ামী লীগ ও বিএনপির সমর্থক।

সিটি করপোরেশনের প্রকৌশল দপ্তরের প্রকৌশলী ও কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, গতকালের হামলায় নেতৃত্ব দিয়েছেন মো. সাহাবুদ্দিন। তিনি বিএনপি সমর্থক ঠিকাদার। হামলায় অংশ নিয়েছেন অন্তত ১৫ জন। তাঁদের মধ্যে সাবেক ছাত্রলীগ নেতাসহ আওয়ামী লীগ সমর্থক ঠিকাদারও আছেন। হামলায় অংশ নেওয়া সঞ্জয় ভৌমিক ওরফে কঙ্কন চট্টগ্রাম নগর ছাত্রলীগের সাবেক পাঠাগার সম্পাদক। আর ফেরদৌস, সুভাষ ও হাবিব আওয়ামী লীগ সমর্থক।