‘ক্যাসিনো সাঈদ’ ফিরেছেন

এ কে এম মমিনুল হক
এ কে এম মমিনুল হক

তিন বছর আগে ক্যাসিনোবিরোধী অভিযান শুরু হওয়ার পর গোপনে দেশ ছেড়েছিলেন ঢাকা মহানগর দক্ষিণ যুবলীগের তৎকালীন যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক এ কে এম মমিনুল হক ওরফে ‘ক্যাসিনো সাঈদ’। গত ৩০ জানুয়ারি সিঙ্গাপুর থেকে দেশে ফিরলেও গ্রেপ্তার এড়াতে প্রকাশ্যে আসছেন না তিনি। থাকছেন ঢাকার বেইলি রোডের একটি ফ্ল্যাটে। যুবলীগের একটি সূত্র বিষয়টি প্রথম আলোকে নিশ্চিত করেছে।

‘ক্যাসিনো সাঈদ’ নামে পরিচিত মমিনুল হকের বিরুদ্ধে জ্ঞাত-আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের অভিযোগে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) করা মামলায় গ্রেপ্তারি পরোয়ানা রয়েছে। যুবলীগের একটি সূত্র বলছে, সরকারের উচ্চ মহল থেকে সবুজসংকেত পেলে তিনি আদালতে আত্মসমর্পণ করতে পারেন।

তবে যে সংস্থার করা মামলায় ‘ক্যাসিনো সাঈদের’ বিরুদ্ধে পরোয়ানা রয়েছে, সেই দুদকের কাছে এখন পর্যন্ত তাঁর দেশে ফেরার তথ্য নেই। এমনকি গ্রেপ্তারি পরোয়ানা বাস্তবায়নের দায়িত্ব যাদের, সেই থানা–পুলিশও জানে না তিনি গোপনে দেশে ফিরেছেন।

দুদকের কমিশনার জহুরুল হক প্রথম আলোকে বলেন, ‘মমিনুল দেশে ফিরেছেন এমন কোনো তথ্য আমার জানা নেই। দেশে ফিরে থাকলে আমরা আদালতের অনুমতি নিয়ে তাঁকে গ্রেপ্তারের চেষ্টা করব।’

২০১৫ সালে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের ৯ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর নির্বাচিত হওয়ার পর মতিঝিলের ওয়ান্ডারার্স ক্লাবে অবৈধ ক্যাসিনো ব্যবসা চালু করেছিলেন মমিনুল হক। এ ছাড়া মতিঝিল এলাকার আরও চারটি ক্লাবের ক্যাসিনোর ব্যবসাও তাঁর নিয়ন্ত্রণে ছিল। ২০১৯ সালের ১৮ সেপ্টেম্বর যুবলীগের ঢাকা মহানগর দক্ষিণ শাখার সাংগঠনিক সম্পাদক খালেদ মাহমুদ ভূঁইয়াকে গ্রেপ্তারের মধ্য দিয়ে ক্যাসিনোবিরোধী অভিযান শুরু হয়। এটি আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের কাছে ‘শুদ্ধি অভিযান’ নামে পরিচিতি পায়। ওই অভিযানে যুবলীগের প্রভাবশালী নেতা ইসমাইল হোসেন চৌধুরী ওরফে সম্রাট ও তাঁর সহযোগী এনামুল হক ওরফে আরমান, বিতর্কিত ঠিকাদার জি কে শামীমসহ মোট ১৩ জন গ্রেপ্তার হন। তবে দেশে ছেড়ে পালিয়ে যান মমিনুল হক। গত তিন বছর তিনি দুবাই, থাইল্যান্ড, সিঙ্গাপুরসহ বিভিন্ন দেশে অবস্থান করেন।

যুবলীগের একটি সূত্র বলছে, ক্যাসিনো-কাণ্ডে গ্রেপ্তারের আড়াই বছর পর গত বছরের আগস্ট মাসে জামিনে মুক্তি পেয়েছেন সম্রাট। এরপর জামিনে মুক্ত হন তাঁর সহযোগী খালেদ মাহমুদ ভূঁইয়া। তাই পরিস্থিতি বিবেচনায় নিয়ে মমিনুল হক দেশে ফিরেছেন।

‘ক্যাসিনো সাঈদের’ বিরুদ্ধে মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ আইনে ২০২১ সালের মে মাসে মতিঝিল থানায় মামলা করে পুলিশ। তদন্ত শেষে অভিযোগপত্র দিয়েছে সিআইডি। গত বছরের ১৭ নভেম্বর ঢাকার একটি আদালতে এ মামলায় তিনিসহ আটজনের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করেছেন আদালত। আর জ্ঞাত আয়ের বাইরে ৫ কোটি ৬০ লাখ টাকার সম্পদ অর্জনের মামলা তদন্ত শেষে গত বছরের মে মাসে দুদক তাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দিয়েছে। অভিযোগপত্র আমলে নিয়ে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেন আদালত।

‘ক্যাসিনো সাঈদের’ দেশে ফিরে আসার বিষয়ে মতিঝিল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মিজানুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, তিনি এখনো বিষয়টি জানেন না। তবে এ বিষয়ে খোঁজ নেবেন।