কানে হেডফোন লাগিয়ে রিকশায়, তাঁর ব্যাগ থেকে ১৬ লাখ টাকা গায়েব

প্রতীকী ছবি
প্রতীকী ছবি

ঢাকার রাস্তায় রিকশায় বসে থাকা এক ব্যক্তির ব্যাগ থেকে ১৬ লাখ টাকা চুরি হয়। কানে হেডফোন লাগিয়ে কথা বলতে থাকা ওই ব্যক্তি যখন বুঝতে পারেন ব্যাগ ফাঁকা, ততক্ষণে তাঁর আর কিছু করার থাকে না। পরে অবশ্য চুরি হওয়া টাকার মধ্যে ১৫ লাখ টাকাই উদ্ধার করেছে পুলিশ। গ্রেপ্তার করা হয়েছে চোর চক্রের তিন সদস্যকে। তাঁদের মধ্যে দুজন আবার আপন ভাই। ছোটজন অপ্রাপ্তবয়স্ক। তাকে টঙ্গীর কিশোর সংশোধনাগারে রাখা হয়েছে।

ঘটনাটি ঘটে গত ২৯ জুলাই রাজধানীর ভাটারা এলাকায়। যাঁর কাছ থেকে টাকা খোয়া যায়, সেই মো. রনি (২৫) বারিধারার একটি গাড়ির শোরুমের ব্যবস্থাপক। রাত পৌনে ১১টার দিকে টাকা নিয়ে তিনি যাচ্ছিলেন শোরুমের মালিক তাঁর ফুফাতো ভাই ইমন মিয়ার বসুন্ধরা আবাসিক এলাকার বাসায়।

এ ঘটনায় ভাটারা থানায় মামলা করার পর পুলিশ ১৫ লাখ টাকা উদ্ধার করেছে বলে শোরুমের মালিক ইমন মিয়া জানিয়েছেন। তিনি রোববার রাতে প্রথম আলোকে বলেন, পুলিশ খুব দ্রুত ঘটনার তদন্ত করে চোরদের গ্রেপ্তার এবং টাকা উদ্ধার করেছে। টাকাগুলো ফেরত পাওয়ার জন্য তিনি আদালতে আবেদন করেছেন।

ভাটারা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আবুল বাসার মুহাম্মদ আসাদুজ্জামান প্রথম আলোকে বলেন, আশপাশের সিসি ক্যামেরার ফুটেজ পর্যালোচনা করে চুরির সঙ্গে জড়িত কিশোরসহ তিনজনকে শনাক্ত করা সম্ভব হয়। এই টাকা চুরির প্রধান পরিকল্পনাকারী ছিলেন ওই কিশোরের বড় ভাই। তাঁর বিরুদ্ধে চুরি ও চোরাই মাল বেচাকেনার অভিযোগে তিনটি মামলা রয়েছে। অপর আসামি মোশাররফ হোসেনের (৩৫) নামেও চুরির মামলা রয়েছে। তাঁরা তিনজন একসঙ্গে চলাফেরা করেন। সুযোগ বুঝে তাঁরা বিভিন্ন মানুষের জিনিসপত্র চুরি করেন।

চলন্ত রিকশায় চুরি যেভাবে

তদন্ত–সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, রনি ২৯ জুলাই রাত সাড়ে ১০টার দিকে শোরুম বন্ধ করে ১৬ লাখ ২৪ হাজার টাকার একটি কালো ব্যাগে ভরেন। পরে বারিধারার ওই শোরুমের সামনে থেকে একটি রিকশায় করে ফুফাতো ভাই ইমন মিয়ার বসুন্ধরার বাসার উদ্দেশে রওনা হন। রনি যে অনেক টাকা ব্যাগে ভরে রিকশায় ওঠেন, তা তিনজন চোর দেখে ফেলেন। সঙ্গে সঙ্গে তাঁরা রনিকে বহনকারী রিকশাটি অনুসরণ করতে থাকেন। দুজন চোর একটি সাইকেলে করে তাঁর রিকশাটি অনুসরণ করছিলেন। আর ১৫ বছর বয়সী কিশোর ওই রিকশার পেছনে ছুটছিল।

রনির কানে তখন হেডফোন লাগানো। তিনি কথা বলায় ব্যস্ত ছিলেন। সুযোগ বুঝে ওই কিশোর রিকশার পেছনের লোহার ওপর দাঁড়িয়ে কৌশলে টাকাভর্তি ব্যাগের চেইন খুলে এক এক করে টাকার বান্ডিল নেয়। সে টাকার বান্ডিলগুলো নিয়ে পেছনে সাইকেলে আসতে থাকা তার বড় ভাইয়ের হাতে দিতে থাকে। এভাবে ১৬ লাখ টাকা তাঁরা সরিয়ে নেন। পরে ওই টাকা নিয়ে তাঁরা বাসায় চলে আসেন।  

রিকশার পেছনের রডের ওপর দাঁড়িয়ে কিশোরটি এতগুলো টাকা নিলেও রিকশাচালক ও রনি দুজনের কেউ কিছু টের পাননি। রিকশাটি যখন ভাটারার ছোলমাইদে ডাচ্‌–বাংলা ব্যাংকের সামনে আসে, তখন রনি খেয়াল করেন, তাঁর ব্যাগের চেইন খোলা। পরে টাকা চুরির ঘটনা রনি তাঁর ফুফাতো ভাই ইমন মিয়াকে জানান।

এ ঘটনায় অজ্ঞাতপরিচয় ব্যক্তিদের আসামি করে ৫ আগস্ট ভাটারা থানায় চুরির মামলা করেন গাড়ির শোরুমের মালিক ইমন মিয়া। এরপর বারিধারায় ইমনের গাড়ির শোরুমের সামনে থেকে ছোলমাইদ ডাচ্‌–বাংলা ব্যাংকের সামনের সড়ক পর্যন্ত থাকা ক্লোজড সার্কিট ক্যামেরার (সিসি ক্যামেরা) ফুটেজ সংগ্রহ করে পুলিশ। পরে সেসব ফুটেজ বিশ্লেষণ করে পুলিশ টাকা চুরির সঙ্গে জড়িত ওই তিনজনকে শনাক্ত করে।

ভাটারা থানার ওসি মুহাম্মদ আসাদুজ্জামান জানান, ৬ আগস্ট খিলক্ষেত থেকে মোশাররফ হোসেনকে গ্রেপ্তার করা হয়। তাঁকে জিজ্ঞাসাবাদ করে দুই ভাইয়ের সন্ধান পাওয়া যায়। তাঁদের মধ্যে বড়জনের বয়স ২৫ বছর। তাঁরা ভাটারা এলাকায় বসবাস করেন। এই দুই ভাইকেও সেদিনই গ্রেপ্তার করা। তাঁদের বাসার ওয়ার্ডরোবের নিচ থেকে চুরির ১৫ লাখ ১ হাজার টাকা উদ্ধার করা হয়। যে সাইকেলে চড়ে বড় ভাই রনির রিকশার পেছনে ছুটেছিলেন, সেই সাইকেলটিও উদ্ধার করা হয়েছে। এ ছাড়া তাঁদের কাছ থেকে মোট আটটি মুঠোফোন উদ্ধার করা হয়।

তিনজনকে আদালতে হাজির করার পরে কিশোরকে টঙ্গীর কিশোর উন্নয়ন কেন্দ্রে এবং অপর দুজনকে কারাগারে পাঠানো হয়।