১৯ বছর আগে রাষ্ট্রায়ত্ত মোবাইল ফোন অপারেটর টেলিটক লিমিটেডের বিপণন বিভাগে নির্বাহী কর্মকর্তা হিসেবে যোগ দেন মীর সাইফুল ইসলাম। চাকরিতে যোগদানের আগে নিয়ম মেনে সব শিক্ষা সনদ জমা দেন। পদোন্নতির জন্য তাঁর শিক্ষা সনদ যাচাইয়ের সিদ্ধান্ত হয়। এত বছর পর টেলিটক কর্তৃপক্ষ জানতে পারল, তাঁর স্নাতক সনদ ভুয়া।
শুধু মীর সাইফুলই নন, এমন আরও তিন কর্মকর্তার খোঁজ পাওয়া গেছে, যাঁরা দেড় দশকের বেশি সময় ধরে ভুয়া সনদ দিয়ে চাকরি করে যাচ্ছিলেন। অপর তিন কর্মকর্তা হচ্ছেন পি এম মাসুদ, তোয়াবুর রহমান ও এলিয়েট লেনার্ড ফ্রেজার।
ভুয়া সনদে চাকরি নেওয়ার অভিযোগে টেলিটকের এই চার কর্মকর্তার বিরুদ্ধে রাজধানীর গুলশান থানায় মামলা করেছেন প্রতিষ্ঠানটির উপমহাব্যবস্থাপক মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম। পরে তাঁদের বরখাস্ত করা হয়। বর্তমানে এই চার কর্মকর্তা পলাতক।
জালিয়াতির মাধ্যমে সনদ সংগ্রহ করা টেলিটকের কর্মকর্তারা পালিয়ে বেড়াচ্ছেন। তাঁদের গ্রেপ্তারে বাসায় অভিযান চালানো হয়েছে।গুলশান থানার উপপরিদর্শক মোহাম্মদ রাকিবুল আলম
টেলিটকের কর্মকর্তা ও বাদী মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, কর্মকর্তাদের পদোন্নতির সিদ্ধান্ত নেয় টেলিটক। পরে পদোন্নতিযোগ্য ৩৬ জন কর্মকর্তার সনদ যাচাইয়ের সিদ্ধান্ত হয়। এর মধ্যে চারজনের সনদ ভুয়া বলে প্রমাণিত হয়েছে। তাই টেলিটক বোর্ডের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, গত ২ এপ্রিল চার কর্মকর্তার বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে।
মামলার তদন্ত কর্মকর্তা গুলশান থানার উপপরিদর্শক (এসআই) মোহাম্মদ রাকিবুল আলম প্রথম আলোকে বলেন, জালিয়াতির মাধ্যমে সনদ সংগ্রহ করা টেলিটকের কর্মকর্তারা পালিয়ে বেড়াচ্ছেন। তাঁদের গ্রেপ্তারে বাসায় অভিযান চালানো হয়েছে।
জানা গেছে, ২০০৭ সালের ৪ নভেম্বর টেলিটকের বিপণন শাখায় পি এম মাসুদ যোগ দেন। তার আগে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইংরেজি সাহিত্যে স্নাতক পাসের সনদ জমা দেন। তবে সনদ যাচাই শেষে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ টেলিটককে জানিয়েছে, পি এম মাসুদের সনদটি ভুয়া। টেলিটকের আরেক কর্মকর্তা মীর সাইফুল ইসলাম চাকরিতে যোগ দেওয়ার সময় প্রিমিয়ার ইউনিভার্সিটি অব টেকনোলজি থেকে স্নাতক পাসের সনদ জমা দেন। বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন টেলিটককে লিখিতভাবে জানিয়ে দেয়, প্রিমিয়ার ইউনিভার্সিটি অব টেকনোলজি কমিশন কর্তৃক অনুমোদিত বিশ্ববিদ্যালয় নয়।
জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, তোয়াবুর রহমানের এই সনদ ভুয়া। একইভাবে তোয়াবুর রহমান বেসরকারি রয়েল বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বিএড পাসের সনদ জমা দেন। পরে বিশ্ববিদ্যালয়টি সনদ যাচাই শেষে টেলিটককে জানিয়ে দিয়েছে, তোয়াবুরের বিএড পাসের সনদও ভুয়া।
টেলিটকের অপর কর্মকর্তা তোয়াবুর রহমান চাকরিতে যোগ দেন ২০০৮ সালের ২৩ মার্চ। তিনি জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় থেকে উদ্ভিদবিজ্ঞান বিভাগে স্নাতক পাসের সনদ জমা দেন। তবে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, তোয়াবুর রহমানের এই সনদ ভুয়া। একইভাবে তোয়াবুর রহমান বেসরকারি রয়েল বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বিএড পাসের সনদ জমা দেন। পরে বিশ্ববিদ্যালয়টি সনদ যাচাই শেষে টেলিটককে জানিয়ে দিয়েছে, তোয়াবুরের বিএড পাসের সনদও ভুয়া।
আরেক কর্মকর্তা এলিয়েট লেনার্ড ফ্রেজার টেলিটকে যোগ দেন ২০০৫ সালের ৮ নভেম্বর। তখন জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক পাসের সনদ জমা দেন তিনি। সনদে উল্লেখ রয়েছে, তিনি বিকম (পাস) করেছেন দ্বিতীয় বিভাগে। অবশ্য জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ টেলিটককে জানিয়েছে, এলিয়েট লেনার্ড ফ্রেজারের স্নাতক পাসের সনদ ভুয়া।