প্রতারণা ও অর্থ আত্মসাতের অভিযোগে করা মামলায় গ্রামীণ টেলিকমের শ্রমিক-কর্মচারী ইউনিয়নের সহসভাপতি মাইনুল ইসলামকে গ্রেপ্তার করেছে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) গোয়েন্দা বিভাগ। গতকাল বুধবার রাতে কুমিল্লা থেকে তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয়। এর আগে এ সংগঠনের আরও দুই নেতাকে গ্রেপ্তার করা হয়।
ডিমএপির গোয়েন্দা গুলশান বিভাগের উপকমিশনার মশিউর রহমান বলেন, আজ বৃহস্পতিবার মাইনুলকে ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট (সিএমএম) আদালতে তোলে পুলিশ। তাঁকে অর্থ আত্মসাতের মামলায় গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তিনি এ মামলার এজাহারভুক্ত ২ নম্বর আসামি। পুলিশের পক্ষ থেকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আদালতের কাছে ১০ দিনের রিমান্ড আবেদন করা হলে আদালত ৭ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।
একই মামলায় এর আগে গ্রামীণ টেলিকমের শ্রমিক-কর্মচারী ইউনিয়নের দুই নেতাকে গ্রেপ্তার করেছিল ডিবি। গত মাসে রাজধানীর রমনার আকরাম টাওয়ারের পাশ থেকে সংগঠনটির সভাপতি কামরুজ্জামান ও সাধারণ সম্পাদক ফিরোজ মহামুদ হাসানকে আটক করা হয়। পরে দুজনকে গ্রেপ্তার দেখিয়ে রিমান্ডে নেওয়া হয়।
ডিবির গুলশান বিভাগ জানায়, ৪ জুলাই গ্রামীণ টেলিকম শ্রমিক–কর্মচারী ইউনিয়নের অর্থ সম্পাদক আকতারুজ্জামান মিরপুর মডেল থানায় এ-সংক্রান্ত একটি মামলা করেন।
মামলায় বলা হয়, ২০০৬ সালের শ্রম আইন অনুযায়ী, বার্ষিক লভ্যাংশের ৫ শতাংশ ওয়াকার্স প্রফিট পার্টিসিপেশন ফান্ড, শ্রমিককল্যাণ ফান্ড ও শ্রমিককল্যাণ ফাউন্ডেশনে দেওয়ার কথা থাকলেও প্রতিষ্ঠানটি ‘কর্মচারীরা স্থায়ী নয়’ এবং ‘কোম্পানি অলাভজনক’ ইত্যাদি বলে শ্রমিকদের আইনানুগ লভ্যাংশ দেওয়া থেকে বিরত থাকে।
ডিবি কর্মকর্তারা বলেন, ২০২০ সালের ২৫ অক্টোবর গ্রামীণ টেলিকম কর্তৃপক্ষ বেআইনিভাবে একসঙ্গে ৯৯ শ্রমিককে ছাঁটাই করে। শ্রম আইন অনুযায়ী শ্রমিকদের স্থায়ীকরণ ও লভ্যাংশ দেওয়া, বেআইনিভাবে ছাঁটাইয়ের পর কোম্পানিতে পুনর্বহাল, আদালতের আদেশ অনুযায়ী পুনর্বহালের পরও দায়িত্ব না দিলে কনটেম্পট অব কোর্ট, কোম্পানির অবসায়নসহ নানা দাবিতে শ্রমিকেরা ও শ্রমিক ইউনিয়ন গ্রামীণ টেলিকমের বিরুদ্ধে বিভিন্ন সময় শ্রম আদালত ও হাইকোর্টে প্রায় ১৯০টি মামলা ও রিট পিটিশন করেন। পরে তড়িঘড়ি করে অনেকটা গোপনে এসব মামলা তুলে নেওয়া, শ্রমিকদের অর্থ দেওয়া, প্রতারণা ও অর্থ আত্মসাতের ঘটনা লক্ষ করা যায়। এর মধ্যেই গ্রামীণ টেলিকম ও টেলিকম শ্রমিক-কর্মচারী ইউনিয়নের মধ্যে একটি চুক্তিপত্র স্বাক্ষরিত হয়।
ডিবি জানায়, ওই চুক্তি অনুযায়ী গত ১০ মে ঢাকা ব্যাংকের গুলশান শাখায় একটি সেটেলমেন্ট অ্যাকাউন্ট খোলা হয়। ২০১০-২২ সাল পর্যন্ত প্রতিবছর কোম্পানির মোট লভ্যাংশের ৫ শতাংশ হারে সেই সেটেলমেন্ট অ্যাকাউন্টে প্রায় ৪৩৭ কোটি টাকা জমা দেওয়া হয়। অ্যাকাউন্ট থেকে অর্থ উত্তোলনের জন্য গ্রামীণ টেলিকমের ব্যবস্থাপনা পরিচালককে বাধ্যতামূলক সিগনেটরি, ইউনিয়নের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদককে অন্য দুই সিগনেটরি হিসেবে রাখা হয়। শ্রমিকদের সব পাওনা ওই অ্যাকাউন্ট থেকেই পরিচালিত হওয়ার কথা।
ডিবির ভাষ্য, চুক্তি অনুযায়ী সেটেলমেন্ট অ্যাকাউন্ট থেকে শ্রমিকদের পাওনা ও ৫ শতাংশ অগ্রিম কর ছাড়া অন্য কোনো অর্থ ছাড়ের সুযোগ নেই। কিন্তু বিধিবহির্ভূতভাবে কোম্পানির ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষ ও ওই দুই সিবিএ কর্মচারী ইউনিয়নের কিছু নেতার যোগসাজশে হিসাব থেকে গত ১৭ মে ও ২৫ মে ২৬ কোটি ২২ লাখ টাকা গ্রামীণ টেলিকম শ্রমিক ইউনিয়নের ডাচ্-বাংলা ব্যাংকের অ্যাকাউন্টে নিয়ে আসেন।