ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট (সিএমএম) আদালতে এক যুগ ধরে একটা চুরির মামলা ঝুলছে। মামলার বাদী শেখ মো. আবদুর রউফ একজন আইনজীবী। মামলাটি তদন্ত করে পুলিশ বলছে, চুরির মামলাটি সাজানো। সাবেক স্ত্রীকে হত্যার তথ্য আড়াল করতেই মামলাটি করেছিলেন আবদুর রউফ।
মামলাটি হয়েছিল ২০১১ সালের ৬ জুন, শাহবাগ থানায়। মামলায় আবদুর রউফ অভিযোগ করেন, সাবেক স্ত্রীর চল্লিশায় অংশ নিতে খুলনায় গিয়েছিলেন তিনি। ঢাকার বাসায় ফিরে দেখেন মূল্যবান কাগজপত্র, পাঁচ লাখ টাকা ও স্বর্ণালংকারের বাক্স খোয়া গেছে। বাসার চাবি মো. মহাসীন আলী মোল্লা (৩৫) নামের এক ব্যক্তির কাছে রেখে গিয়েছিলেন।
মহাসীন ও তাঁর পরিবারের আরও ছয় সদস্যকে মামলায় আসামি করা হয়। এজাহারে আবদুর রউফ বলেন, মহাসীন তাঁর প্রতিষ্ঠান ‘দ্য লইয়ার্স অ্যান্ড জুরিস্ট’–এর ব্যবস্থাপক। পাশাপাশি তাঁর ছেলেদের গৃহশিক্ষক ছিলেন। তাঁর বাসাতেই থাকতেন মহাসীন। এমনকি ওই বাসায় তাঁর বাবা–মা ও বোনদেরও অবাধ যাতায়াত ছিল।
এই মামলার সুরাহা হচ্ছে না কেন—এ প্রশ্নে শাহবাগ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মওদুত হাওলাদার প্রথম আলোকে বলেন, পুলিশের দিক থেকে কোনো গাফিলতি নেই। আবদুর রউফের করা চুরির অভিযোগ মিথ্যা জানিয়ে আদালতে পাঁচবার চূড়ান্ত প্রতিবেদন দিয়েছে পুলিশ। প্রতিবারই না রাজি দিয়েছেন মামলার বাদী।
আবদুর রউফ সাবেক স্ত্রী সালমা হত্যাকাণ্ড নিয়েও একটি মামলা করেছিলেন। সেখানে এই খুনের অভিযোগে সালমার স্বজন ও বিবাহ নিবন্ধকসহ আটজনকে আসামি করেছিলেন তিনি। সেখানে চুরির মামলার আসামি মহাসীনকেও আসামি করা হয়েছিল।
আদালতে খোঁজ নিয়ে দেখা যায়, সর্বশেষ চলতি বছরের মার্চে শাহবাগ থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মো. মাহফুজুল হক ভূঞা চূড়ান্ত প্রতিবেদন জমা দেন। এর আগে এই মামলা তদন্ত করেছেন উপপরিদর্শক (এসআই) হীরেন্দ্রনাথ প্রামাণিক ও চম্পক চক্রবর্তী এবং পরিদর্শক আরিফুর রহমান সরদার ও আবু মাহমুদ কাওসার। প্রতিবেদনে পুলিশ বলেছে, বাদী ‘কাল্পনিক, সাজানো, মিথ্যা, বানোয়াট ও ভিত্তিহীন’ ঘটনা সাজিয়ে মিথ্যা মামলা করেছেন।
বাদী কেন মিথ্যা মামলা করলেন, চূড়ান্ত প্রতিবেদনে তার একটি ব্যাখ্যা দিয়েছে পুলিশ। তাদের ভাষ্যমতে, মামলার বাদী আবদুর রউফের সাবেক স্ত্রী সালমা জেসমিন (লিপি) ২০১১ সালের ১১ এপ্রিল খুন হন। ওই মামলার ‘সন্দেহভাজন’ আসামি আবদুর রউফ। চুরির মামলার আসামি মহাসীন দীর্ঘদিন তাঁর বাসায় গৃহশিক্ষক ছিলেন। সালমা খুন হওয়া প্রসঙ্গে মহাসীন তথ্য দিতে পারেন—এমন শঙ্কা থেকে তাঁকে ও তাঁর পরিবারের সদস্যদের মামলায় জড়ান আবদুর রউফ।
চূড়ান্ত প্রতিবেদনের সূত্র ধরে প্রথম আলো ১১ বছর আগের ওই হত্যা মামলার খোঁজ নেয়। জানা যায়, আবদুর রউফ সাবেক স্ত্রী সালমা হত্যাকাণ্ড নিয়েও একটি মামলা করেছিলেন। সেখানে এই খুনের অভিযোগে সালমার স্বজন ও বিবাহ নিবন্ধকসহ আটজনকে আসামি করেছিলেন তিনি। সেখানে চুরির মামলার আসামি মহাসীনকেও আসামি করা হয়েছিল।
এদিকে চুরির মামলার ১৫ দিন আগে মহাসীন শাহবাগ থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি করেছিলেন। তাতে আবদুর রউফ তাঁকে মামলায় জড়াবেন—এমন আশঙ্কা করেছিলেন।
কাগজপত্র বলছে, ২০১১ সালে খুন হওয়ার মাস দুয়েক আগে সালমা স্বামী আবদুর রউফকে তালাক দিয়ে খুলনায় চলে যান। সেখানে প্রথমে বড় ভাইয়ের বয়রার বাসায় এবং পরে ছোট ভাই আবদুল্লাহ আল মাসুমের সোনাডাঙ্গার বাসায় উঠেছিলেন তিনি।
খুলনায় সালমা প্রতিদিন ভোরে হাঁটতে বের হতেন। ১১ এপ্রিল হাঁটতে বেরিয়ে তিনি আর বাসায় ফেরেননি। সে রাতেই সালমার ভাই আবদুল্লাহ আল মাসুম সোনাডাঙ্গা থানায় একটি নিখোঁজ ডায়েরি করেন। পরদিন বটিয়াঘাটা উপজেলায় কাজীবাছা নদীতে একটি ঘেরের পাশে উলচর নামের জায়গা থেকে তাঁর মরদেহ উদ্ধার হয়।
ওই ঘটনার আগে–পরের কিছু বিষয়ের উল্লেখ পাওয়া যায় সালমা হত্যার ঘটনায় তাঁর মা মনিরা বেগমের করা মামলার এজাহারে। এর বাইরে আদালত ও পুলিশ সদর দপ্তরে মনিরা বেগম আরও কিছু তথ্য দেন।
বটিয়াঘাটা থানায় ২০১১ সালের ১২ এপ্রিল করা ওই মামলায় মনিরা বেগম লেখেন, ১৯৯২ সালে আবদুর রউফের সঙ্গে সালমার বিয়ে হয়। তখন তিনি সহকারী জজ ছিলেন। তাঁদের তিন ছেলে। ২০০০ সালে আবদুর রউফের চাকরি চলে গেলে তিনি আইন পেশায় যুক্ত হন। সালমা তখন তাঁর স্বামীর সঙ্গে কাকরাইলের ৭৩ ইস্টার্ন কমার্শিয়াল কমপ্লেক্সের বাসায় গিয়ে ওঠেন। মেয়ের সঙ্গে জামাতার ঝগড়া লেগেই ছিল।
হত্যাকাণ্ডের আনুমানিক আড়াই মাস আগে সালমা একবার খুলনায় তাঁর পরিবারের কাছে গিয়েছিলেন। দিন ১৫ থেকে আবার স্বামীর কাছে আসেন। পরে মার্চের মাঝামাঝি সময়ে সালমা তাঁর বড় ভাইয়ের বয়রার বাসায় চলে আসেন। সালমা জানান, তিনি স্বামীকে তালাক দিয়ে এসেছেন।
১১ এপ্রিল সকাল পৌনে সাতটার দিকে সালমা মুঠোফোন বাসায় রেখে হাঁটতে বের হন। পরদিন দুপুর ১২টার দিকে অজ্ঞাতনামা এক ব্যক্তি মনিরা বেগমের মুঠোফোনে ফোন করে জানান, উলচরে একজন নারীর মরদেহ পাওয়া গেছে। মরদেহের কাছ থেকে মনিরা বেগমের নম্বর পাওয়া গেছে। মরদেহটি ছিল সালমার। মরদেহটির বুকের ওপর ছিল একটি ভ্যানিটি ব্যাগ। ওই ব্যাগ থেকেই মনিরা বেগমের মুঠোফোন নম্বর পাওয়া যায়।
মনিরা বেগম মামলার এজাহারে কথা বলেন সামান্যই। তবে খুলনার আদালতে সংরক্ষিত কাগজপত্রে দেখা যায়, কেন তিনি মেয়ের সঙ্গে বিচ্ছেদ ঘটানো আবদুর রউফকে সন্দেহ করেন, তা আদালতকে বিস্তারিত জানিয়েছিলেন। ২০১১ সালের ১২ অক্টোবর এ বিষয়ে প্রতিকার চেয়ে পুলিশ সদর দপ্তরের আইজিপির কমপ্লেইন মনিটরিং সেলে বক্তব্য দিয়েছিলেন তিনি।
আদালতে মনিরা বেগম বলেন, তাঁর স্বামীর (মনিরা বেগমের) আর্থিক সহযোগিতায় সালমাকে খুলনা মেডিকেল কলেজের সামনে ১৭ শতাংশ জমি কিনে দেওয়া হয়েছিল। জমিতে বাড়িও উঠিয়ে দিয়েছিলেন তাঁর স্বামী। ওই সময় আবদুর রউফের চাকরি চলে যায়। সরকারও মেডিকেল কলেজের জন্য সালমার নামে কিনে দেওয়া জমিটি অধিগ্রহণ করে।
আবদুর রউফ ও তাঁর চাচা আজিজসহ অন্য আত্মীয়স্বজন আমাকে আবার রউফের কাছে ফিরে যেতে হুমকি দিচ্ছেন। আমার হাত–পা ভেঙে পেটের মধ্যে ঢুকিয়ে বস্তায় ভরে গুম করে দেবেন বলে চাচা আজিজ আজ রোববার সকালেও আমার মাকে মোবাইল ফোনে হুমকি দিয়েছে। কিন্তু আমি বাঁচার জন্য ওকে তালাক দিয়েছি। তাই কোনো অবস্থাতেই ফিরে যাব না।সাধারণ ডায়েরিতে লিখেছিলেন সালমা জেসমিন
আবদুর রউফ স্ত্রী সালমাকে বুঝিয়ে জমি অধিগ্রহণের বিপরীতে পাওয়া ৪০ লাখ টাকা নিয়ে নেন। মনিরা বেগমের অভিযোগ, আবদুর রউফ পরনারীতে আসক্ত ছিলেন। এমনকি সালমাকে বিয়ের আগে তিনি আরও দুটি বিয়ে করেছিলেন। এসব নিয়ে দুজনের বিরোধ ছিল চরমে। সালমা তাঁর টাকা ফেরত চান। কিন্তু আবদুর রউফ কিছুতেই টাকা ফেরত দিচ্ছিলেন না।
মনিরা বেগমের ভাষ্যমতে, এ নিয়ে আবদুর রউফ তাঁর দুই বন্ধুর উপস্থিতিতে সালমার সঙ্গে বৈঠকেও বসেন। কিন্তু সালমা তাঁর কথায় অনড় ছিলেন। তিনি তাঁর টাকা আদায় করে নেবেন বলে হুমকি দেন। এ সময় আবদুর রউফ সালমাকে শারীরিক নির্যাতন করেন। এরপর সালমা স্বামীকে তালাক দিয়ে খুলনায় চলে আসেন। তখন থেকেই আবদুর রউফ তাঁর মেয়েকে হত্যার পরিকল্পনা করেন।
সালমা খুন হলে আবদুর রউফকে আসামি করে মামলা করতে তাঁর (আবদুর রউফের) স্বজনেরা নিষেধ করেছিলেন বলে জানান মনিরা বেগম। কারণ, পুলিশের বড় বড় কর্মকর্তা ও জজ সাহেবরা আবদুর রউফের বন্ধু। তা ছাড়া আবদুর রউফ আসামি হলে তাঁদের তিন সন্তানের দায়দায়িত্ব সালমার পরিবারকে নিতে হবে। মনিরা বেগম আদালতকে বলেন, তিনি ও তাঁর শুভাকাঙ্ক্ষীরা আবদুর রউফের ভয়ে মুখ খুলতে পারছেন না।
কিন্তু হত্যাকাণ্ডে আবদুর রউফের সম্পৃক্ততা নিয়ে মনিরা বেগম এতটা নিশ্চিত হলেন কীভাবে? আদালতে মনিরা বেগম বলেন, তাঁর মেয়ের থানায় জমা না দেওয়া একটি সাধারণ ডায়েরি ও একজন গুরুত্বপূর্ণ সাক্ষী রয়েছেন।
মনিরা বেগম আদালতে তাঁর বক্তব্যের পক্ষে সালমার একটি লেখা হাজির করেন। সালমা ১০ এপ্রিল খুলনার সোনাডাঙ্গা থানার ওসি বরাবর একটি সাধারণ ডায়েরি করতে চেয়েছিলেন। সেখানে তিনি লিখেছিলেন, ‘আবদুর রউফ ও তাঁর চাচা আজিজসহ অন্য আত্মীয়স্বজন আমাকে আবার রউফের কাছে ফিরে যেতে হুমকি দিচ্ছেন। আমার হাত–পা ভেঙে পেটের মধ্যে ঢুকিয়ে বস্তায় ভরে গুম করে দেবেন বলে চাচা আজিজ আজ রোববার সকালেও আমার মাকে মোবাইল ফোনে হুমকি দিয়েছে। কিন্তু আমি বাঁচার জন্য ওকে তালাক দিয়েছি। তাই কোনো অবস্থাতেই ফিরে যাব না।’
জমা না দেওয়া ওই সাধারণ ডায়েরিতে সালমা আরও লেখেন, তিনি হাঁটতে বের হলে আবদুর রউফের আত্মীয়স্বজন ও দু–তিনজন অচেনা লোক তাঁকে অনুসরণ করে বলে মনে হয়। তাঁর আশঙ্কা, আবদুর রউফ তাঁকে হত্যার জন্য লোক লাগিয়েছেন। আকুতি জানিয়ে তিনি লেখেন, ‘আমি বাঁচতে চাই। আমার ছেলেদের ভবিষ্যতের জন্য। তাই প্রাণে বাঁচার জন্য আমার মা–ভাইয়ের আশ্রয়ে এসেছি।’
সাধারণ ডায়েরিটি জমা দেওয়ার আগেই সালমা খুন হন। জিডির লেখাটি যে সালমারই তা আদালতকে নিশ্চিত করেন পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) একজন হস্তলিপিবিশারদ।
এ ছাড়া মনিরা বেগম আদালতে গোলাম মোস্তফা নামের একজন সাক্ষী হাজির করেন। আদালতে রক্ষিত নথিতে দেখা যায়, গোলাম মোস্তফা বলেছেন, ১১ এপ্রিল (যেদিন সালমা জেসমিন নিখোঁজ হন) সকাল সোয়া সাতটার দিকে গল্লামারী ব্রিজের দক্ষিণ পাশে মাছের বাজারের সামনের রাস্তায় একটি মাইক্রোবাসে আবদুর রউফ ও তিন–চারজন লোককে তিনি জিরো পয়েন্টের দিকে যেতে দেখেছেন।
সালমার লাশ উদ্ধারের পর বটিয়াঘাটা থানার ওসি রবিউল ইসলাম আসামি আবদুর রউফের সঙ্গে কথা বলেন। তিনি বারবার রউফকে থানায় যাওয়ার জন্য অনুরোধ করেন। আবদুর রউফ সে সময় তাঁর অবস্থান সম্পর্কে একেকবার একেক কথা বলতে থাকেন।
আবদুর রউফ ২০১১ সালের ১৪ মে সালমা হত্যাকাণ্ডে তাঁর (সালমা) ছোট ভাই, মা, চাচা, ছেলেদের গৃহশিক্ষক (মহাসীন আলী মোল্লা), সালমার ছোট বোন, বোনের স্বামী, বিবাহ নিবন্ধক ও তালাকের সাক্ষীকে আসামি করে একটি মামলা করেন।
হত্যাকাণ্ডের পর পুলিশ মহাসীনকে জিজ্ঞাসাবাদ করে। তিনি পুলিশকে জানান, সালমা খুন হওয়ার পর তাঁর সন্তানদের নিয়ে তিনি ঢাকা থেকে খুলনা আসেন। এর বাইরে আর তেমন কোনো তথ্য তিনি সে সময় পুলিশকে দেননি। তবে, শাহবাগ থানায় ২০১১ সালের ২১ মে তিনি যে সাধারণ ডায়েরি করেন, সেখানে তিনি বলেন, আবদুর রউফের পক্ষে যেকোনো জঘন্য অপকর্ম করা সম্ভব।
মহাসীন ওই জিডিতে লিখেছিলেন, ২০০৩ সালে তাঁর (মহাসীনের) বিরুদ্ধে একটি পারিবারিক মামলা হয়। সুরাহার জন্য তিনি তাঁর দূর সম্পর্কের খালাতো ভাই আবদুর রউফের দ্বারস্থ হয়েছিলেন। রউফ আইনি লড়াইয়ের জন্য দুই লাখ ৬০ হাজার টাকা দাবি করেছিলেন। মামলা থাকায় মহাসীন তখন স্কুল থেকে সাময়িক বরখাস্ত। আবদুর রউফের অনুরোধে তিনি তাঁর দুই ছেলেকে মাসে ১০ হাজার টাকা চুক্তিতে পড়াতে শুরু করেন। কিন্তু আবদুর রউফ একটি টাকাও তাঁকে দেননি। উল্টো পাওনা নিয়ে বাড়াবাড়ি করলে ভালো হবে না বলে হুমকি দেন, মামলার ভয় দেখান।
প্রায় এক যুগ পর এসে মহাসীন এখন আর এই মামলা নিয়ে কোনো কথা বলতে চান না। প্রথম আলোর প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘সব তো জানেনই। আর কিছু বলার নেই।’ কথা বলেননি মহাসীনের বোনেরাও। আর সালমা জেসমিনের ভাই আবদুল্লাহ আল মাসুম প্রথম আলোকে বলেছেন, ‘মুরুব্বিদের পরামর্শে আমরা আর এ বিষয়ে এগোয়নি। কারণ, সালমার তিনটি বাচ্চাই তখন ছোট ছিল।’
শাহবাগ থানায় করা চুরির মামলার কী হলো, জানতে চাইলে আবদুর রউফ বলেন, মামলার আসামিরা তাঁরই দূরের আত্মীয়। তাঁরা সব পুলিশের লোক। সে কারণে পুলিশ তাদের পক্ষে চূড়ান্ত প্রতিবেদন দিচ্ছে। তিনিও বারবার আপিল করছেন।
সালমা খুনের ঘটনা ঢাকতে চুরির মামলা করেছেন কি না—এমন প্রশ্নে তিনি না সূচক জবাব দেন। এ ছাড়া নিহত হওয়ার আগে সালমার লেখা কিংবা তাঁর বিরুদ্ধে শাশুড়ি মনিরা বেগমের অভিযোগ সম্পর্কে জানতে চাওয়া হয়। জবাবে আবদুর রউফ বলেন, ‘কে কী লিখেছে জানি না। শাশুড়ি তো অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিদের আসামি করে মামলা করেছিলেন। পরে কার পরামর্শে কী করেছেন। আমিও তখন একটা এফআইআর করি।’
আবদুর রউফ দাবি করেন, তাঁর সন্তানেরা তাঁকে বলেছিলেন, মা যেহেতু ফিরে আসবেন না, তিনি যেন তাঁদের মামাদের সঙ্গে বিরোধ মিটিয়ে নেন। আপনার সন্তানদের মায়ের হত্যার বিচার চান কি না, এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, বিচারপ্রক্রিয়া চলছে। আপাতত হাইকোর্টের নির্দেশে স্থগিত আছে। তিনি স্ত্রী হত্যার বিচারের জন্য সবই করেছেন। মামলায় তালাকের সাক্ষী ও বিবাহ নিবন্ধকদের কেন আসামি করা হলো, সে প্রশ্নের সদুত্তর দিতে পারেননি আবদুর রউফ।
কাগজপত্র ঘেঁটে দেখা গেছে, খুন নিয়ে পাল্টাপাল্টি মামলা, চুরির মামলা, সাধারণ ডায়েরি—কোনোটিতেই কোনো আসামি কখনো গ্রেপ্তার হননি। সালমার মায়ের করা মামলায় বছর দুয়েক পরে আদালতে চূড়ান্ত প্রতিবেদন দেয় পুলিশ। খুলনা জেলার পুলিশ সুপার মাহাবুব হাসান প্রথম আলোকে বলেন, চূড়ান্ত প্রতিবেদনে বলা হয়, খুনের ঘটনা সত্য, তবে আসামি শনাক্ত হয়নি। আসামি শনাক্ত হলে আবারও বিচারকাজ চলবে।
প্রতিবেদনটি তৈরিতে তথ্য দিয়ে সহযোগিতা করেছেন প্রথম আলোর খুলনা কার্যালয়ের নিজস্ব প্রতিবেদক শেখ আল এহসান