এক যুগ আগে এই দিনে পায়ে গুলি লেগেছিল কিশোর লিমন হোসেনের। ২০১১ সালের ২৩ মার্চ ১৬ বছরের কিশোর লিমন হোসেন র্যাবের অভিযানের সময় পায়ে গুলিবিদ্ধ হয়েছিলেন। এ ঘটনায় র্যাবের ছয় সদস্যের বিরুদ্ধে হত্যাচেষ্টার মামলা করেছিলেন লিমনের মা হেনোয়রা বেগম।
লিমনকে কারা গুলি করেছিল, তদন্ত করে এখনো তা বের করতে পারেনি পুলিশ। এর ফলে মামলার বিচারকাজও শুরু হয়নি। এ অবস্থায় ন্যায়বিচার পাবেন কি-না, তা নিয়ে আশঙ্কায় আছেন লিমন ও তাঁর পরিবার।
ঝালকাঠির রাজাপুর উপজেলার সাতুরিয়া গ্রামে র্যাব-৮-এর অভিযানের সময় কলেজছাত্র লিমন হোসেন গুলিবিদ্ধ হয়েছিলেন। এর ফলে লিমনের বাঁ পা হাঁটু থেকে কেটে ফেলতে বাধ্য হন জাতীয় অর্থোপেডিক হাসপাতাল ও পুনর্বাসন প্রতিষ্ঠানের চিকিৎসকেরা। লিমনের গুলিবিদ্ধ হওয়ার ঘটনাটি সারা দেশে চাঞ্চল্য সৃষ্টি করেছিল।
লিমনের মা হেনোয়রা বেগম বাদী হয়ে ২০১১ সালের ১০ এপ্রিল তৎকালীন র্যাব-৮-এর ডিএডি লুৎফর রহমানসহ ছয় র্যাব সদস্যের নামে ঝালকাঠির আদালতে হত্যাচেষ্টার মামলা করেন।
মামলাটি রাজাপুর থানার উপপরিদর্শক (এসআই) আবদুল হালিম তালুকদার তদন্ত করেন। তিনি ২০১২ সালের ১৪ আগস্ট আদালতে প্রতিবেদন দাখিল করে র্যাব সদস্যদের অব্যাহতির সুপারিশ করেন।
হেনোয়রা বেগম ওই প্রতিবেদনের বিরুদ্ধে ২০১২ সালের ৩০ আগস্ট ঝালকাঠির সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে নারাজি দাখিল করেন। আদালত ২০১৩ সালের ১৩ ফেব্রুয়ারি তাঁর নারাজি আবেদন খারিজ করে দেন। নারাজি খারিজ আদেশের বিরুদ্ধে জেলা ও দায়রা জজ আদালতে ২০১৩ সালের ১৮ মার্চ রিভিশন করেন হেনোয়রা বেগম।
২০১৮ সালের ১ এপ্রিল অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ এস কে এম তোফায়েল হাসান রিভিশন মঞ্জুর করেন। রিভিশন মঞ্জুর হওয়ার পর সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মো. সেলিম রেজা মামলাটি তদন্তের জন্য ২০১৮ সালের ২২ এপ্রিল পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনকে (পিবিআই) নির্দেশ দেন। দীর্ঘদিন তদন্ত শেষে পিবিআই প্রধান কার্যালয়ের সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার মো. আমিনুল ইসলাম গত বছরের ১৭ সেপ্টেম্বর আদালতে থানা-পুলিশের প্রতিবেদন সত্য বলে দাখিল করেন।
পিবিআই চূড়ান্ত প্রতিবেদনের বিরুদ্ধে আদালতে নারাজি দিয়েছেন লিমনের মা হেনোয়রা বেগম। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, র্যাব সদস্যরা লিমনকে আটক করেন এবং তাঁর সামনেই গুলি করেন। এ কারণে পুলিশের দেওয়া প্রতিবেদনে তিনি আদালতে নারাজি দিয়েছেন। তিনি ওই ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত ও বিচার দাবি করেন।
র্যাবের কথিত বন্দুকযুদ্ধে এক পা হারানো লিমন হোসেন ২০১৩ সালে এইচএসসি পাস করেন। পরে ২০১৮ সালে তিনি আইন বিষয়ে স্নাতক ও পরের বছর স্নাতকোত্তর সম্পন্ন করেন।
২০২০ সালে লিমন সাভারের গণ বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগে সহকারী প্রভাষক হিসেবে যোগ দেন। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘র্যাবের গুলিতে আমি পা হারিয়েছি, কিন্তু পুলিশের তদন্তে সেটা বারবার এড়িয়ে যাওয়া হচ্ছে। আমার গুলিবিদ্ধ হওয়ার ১২ বছর পেরিয়ে গেলেও মামলার বিচারকাজই শুরু হয়নি। এভাবে চললে ন্যায়বিচার পাব কি না, তা নিয়ে আশঙ্কায় আছি।’
লিমনকে হত্যাচেষ্টার মামলায় বাদীপক্ষের অন্যতম আইনজীবী হিসেবে কাজ করছেন আক্কাস সিকদার। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, এ মামলায় অভিযুক্ত ব্যক্তিরা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য। তাই তদন্ত প্রভাবিত হওয়াটা অস্বাভাবিক কিছু নয়। এ জন্য সত্য উদ্ঘাটনে বিচার বিভাগীয় তদন্ত হওয়া উচিত।
লিমন গুলিবিদ্ধ হওয়ার পর তাঁকে সন্ত্রাসী আখ্যা দিয়ে অস্ত্র ও বিস্ফোরক আইনে লিমনের বিরুদ্ধে পৃথক দুটি মামলা করেছিল র্যাব। সমালোচনার মধ্যে সেই মামলা থেকে লিমনকে অব্যাহতি দেওয়া হয়।