দিনে বাসে যাত্রী পরিবহন, রাতে ডাকাতি করতেন তাঁরা

চক্রের প্রধান মুসা আলীসহ ছয়জনকে গ্রেপ্তার করেছে র‍্যাব
ছবি: সংগৃহীত

ঢাকা-নরসিংদীতে চলাচলকারী যুব কল্যাণ এক্সপ্রেসের একটি বাস ব্যবহার করে গভীর রাতে পণ্যবাহী গাড়ি ও মালামাল লুট করছিল একটি চক্র। দিনে এ বাস দিয়ে স্বাভাবিকভাবে যাত্রী পরিবহন করলেও রাতে বাসটি ব্যবহার করা হতো ডাকাতিতে।
ডাকাত চক্রের সদস্যরাও দিনে বিভিন্ন পেশায় নিয়োজিত থাকত। রাতে তারা ডাকাতি করত। দেড় বছর ধরে এ বাস দিয়েই ডাকাতি করত তারা।

ঢাকা-চট্টগ্রাম ও ঢাকা-সিলেট মহাসড়কে দীর্ঘদিন ধরে ডাকাতি করছে—এমন একটি চক্রের প্রধান মুসা আলীসহ ছয়জনকে গ্রেপ্তারের পর এসব তথ্য জানিয়েছে র‍্যাব।

গতকাল শুক্রবার নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জ ও বন্দর এলাকা থেকে তাঁদের গ্রেপ্তার করা হয়। আজ শনিবার রাজধানীর কারওয়ান বাজারে র‍্যাবের মিডিয়া সেন্টারে সংবাদ সম্মেলনে এ বিষয়ে বিস্তারিত তথ্য তুলে ধরেন সংস্থাটির আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন।

অভিযানে ডাকাতির শিকার দুজন ভুক্তভোগীকে উদ্ধার ও লুট হওয়া পণ্য উদ্ধার করা হয়। ডাকাতির কাজে ব্যবহৃত বাসটিও জব্দ করা হয়েছে।

দেড় বছর ধরে এ বাস দিয়েই ডাকাতি করত তারা।

র‍্যাব কর্মকর্তা খন্দকার আল মঈন বলেন, ১০ থেকে ১২ জনের ডাকাত চক্রটি বেশ কয়েক বছর ধরে নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁ, রূপগঞ্জ ও আড়াইহাজার এলাকার বিভিন্ন মহাসড়কে নিয়মিত ডাকাতি করছিলেন। তাঁরা পেশায় কেউ পোশাকশ্রমিক, চালক, চালকের সহযোগী, আবার কেউ রাজমিস্ত্রি ও কাপড়ের দোকানের কাটিং মাস্টার। দিনে ভিন্ন পেশায় নিয়োজিত থাকলেও রাতে তাঁরা ডাকাতিতে অংশ নেন।

সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, চক্রটি তিনটি দলে ভাগ হয়ে ডাকাতি করত। একটি দল বিভিন্ন পোশাকে পণ্যবাহী ট্রাক ও মহাসড়কে চলাচলকারী পণ্যবাহী যানবাহন সম্পর্কে তথ্য সংগ্রহ করে। তারাই ডাকাতির জন্য সম্ভাব্য স্থান নির্ধারণ করে।

দ্বিতীয় দলটি যাত্রীবাহী বাস নিয়ে মহাসড়কে অবস্থানের পর পণ্যবাহী যানবাহনটির পিছু নেয়। সুবিধাজনক স্থানে এ চক্রের সদস্যরা যাত্রীবাহী বাস দিয়ে পণ্যবাহী পরিবহনের গতি রোধ করে। পরে পণ্যবাহী পরিবহনের চালক ও তাঁর সহকারীকে বাসে উঠিয়ে পণ্যবাহী পরিবহনটি নিয়ন্ত্রণে নেয়। বাসে তুলেই তাঁদের হাত, পা ও মুখ বেঁধে ফেলা হয়।

তৃতীয় দলে চক্রের প্রধান মুসা এবং অন্য এক সদস্য পণ্যবাহী পরিবহনটি নিয়ে সটকে পড়েন। দলের অন্য সদস্যরা চালক ও সহকারীকে জিম্মি করে কখনো কখনো মুক্তিপণ আদায় করে ছেড়ে দেন। আবার কখনো এমনিতেই কোনো নির্জনস্থানে তাঁদের ফেলে পালিয়ে যান। ডাকাত দলের প্রধান মুসা ডাকাতির পর গাড়ি পূর্বনির্ধারিত স্থানে নিয়ে মালামাল বিক্রি করে দেন। পণ্যবাহী গাড়িটিও তাঁরা বিক্রির চেষ্টা করেন। তবে বিক্রি করতে না পারলে কোনো নির্জন স্থানে গাড়িটি ফেলে যান।

চক্রের সদস্যদের বিষয়ে র‍্যাবের এই কর্মকর্তা বলেন, চক্রের প্রধান মূসা ১০ থেকে ১২ বছর ধরে বিভিন্ন মহাসড়কে ডাকাতি করছেন। সম্প্রতি ঢাকা-চট্টগ্রাম ও ঢাকা-সিলেট মহাসড়কে বেশ কয়েকটি ডাকাতির ঘটনা তাঁর নেতৃত্বে হয়েছে। প্রতিটি ডাকাতিতে তিনি অংশগ্রহণ করেন। তাঁর নামে দেশের বিভিন্ন থানায় একাধিক মামলা রয়েছে। এর আগে ডাকাতির মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে কারাভোগ করেছেন তিনি। মুসার প্রধান সহযোগী গ্রেপ্তার শামিম। তিনি ডাকাতির কাজে ব্যবহৃত বাসের চালক। তিনি এর আগে স্ত্রী হত্যার দায়ে সাত বছর কারাভোগ করেছেন। তাঁর বিরুদ্ধে বিভিন্ন থানায় ডাকাতিসহ একাধিক মামলা রয়েছে। গ্রেপ্তার রনি ডাকাতির কাজে ব্যবহৃত বাসটির চালকের সহকারী। গ্রেপ্তার নাঈম পেশায় গাড়িচালক। মামুন স্থানীয় একটি সেলাই কারখানায় কার্টিং মাস্টারের কাজ করেন। গ্রেপ্তার আবু সুফিয়ান অন্য কোনো পেশায় আছেন কি না, জানা যায়নি।