বাংলাদেশে ভার্চ্যুয়াল মুদ্রা ক্রিপ্টোকারেন্সির মাধ্যমে অর্থ লেনদেনসংক্রান্ত অপরাধ বেড়েছে। এ লেনদেনে জড়িত থাকার অভিযোগে রাজধানী ঢাকায় কমপক্ষে ছয়টি মামলা দায়েরের তথ্য পাওয়া গেছে। সর্বশেষ ১১ অক্টোবর আরও একটি মামলা হয়েছে। সেই মামলায় গ্রেপ্তার হয়েছেন পাঁচজন। আর ক্রিপ্টোকারেন্সিতে লেনদেনের চারটি মামলায় বিচারের মুখোমুখি হয়েছেন কয়েকজন।
ঢাকার সাইবার ট্রাইব্যুনালের স্পেশাল পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) নজরুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, বাংলাদেশের আইনে ভার্চ্যুয়াল মুদ্রার ব্যবহার নিষিদ্ধ। দেশি–বিদেশি কোনো অ্যাপের মাধ্যমেই ভার্চ্যুয়াল লেনদেন করা যাবে না। তবে বাংলাদেশের অনেকে ভার্চ্যুয়াল মুদ্রা ক্রিপ্টোকারেন্সির ব্যবহার করছেন। ঢাকার সাইবার ট্রাইব্যুনালে এমন চারটি মামলার বিচার চলমান রয়েছে।
বিষয়টি নিয়ে একই কথা বলেন ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) সাইবার অ্যান্ড স্পেশাল ক্রাইম বিভাগের অতিরিক্ত উপকমিশনার ফজলুর রহমান। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, নিষিদ্ধ হওয়ার পরও ক্রিপ্টোকারেন্সি ব্যবহার করে অনেকে দেশ থেকে অর্থ পাচার করছেন। ইতিমধ্যেই তাঁরা চারটি চক্রকে গ্রেপ্তার করে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা করেছেন।
ক্রিপ্টোকারেন্সি একধরনের ভার্চ্যুয়াল মুদ্রা। এই মুদ্রা ইন্টারনেটে ডিজিটাল ওয়ালেটের মাধ্যমে লেনদেন করা হয়। লেনদেনের তথ্য জমা থাকে ব্লক চেইন নেটওয়ার্কে। ২০০৮ সালের শেষভাগে জাপানি নাগরিক সাতোশি নাকামোতো নামের একজন বা একদল সফটওয়্যার বিজ্ঞানী এই ক্রিপ্টোকারেন্সি উদ্ভাবন করেন। বিভিন্ন ক্রিপ্টোকারেন্সির মধ্যে সবচেয়ে জনপ্রিয় বিটকয়েন।
গত জুলাইয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের জারি করা সর্বশেষ প্রজ্ঞাপন বলছে, ক্রিপ্টোকারেন্সিতে লেনদেন করা যাবে না। এসব ভার্চ্যুয়াল মুদ্রা কোনো দেশের বৈধ কর্তৃপক্ষ ইস্যু করে না। সুতরাং এই মুদ্রার বিপরীতে কোনো আর্থিক দাবি স্বীকৃতও নয়।
ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের ৩০ ধারা অনুযায়ী, ‘কোনো ব্যাংক, বিমা বা অন্য কোনো আর্থিক প্রতিষ্ঠান বা মোবাইলে আর্থিক সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠান হতে কোনো ইলেকট্রনিক বা ডিজিটাল মাধ্যম ব্যবহার করে আইনানুগ কর্তৃত্ব ব্যতিরেকে ই-ট্রানজেকশন করা অপরাধ। এই অপরাধ প্রমাণিত হলে সর্বোচ্চ শাস্তি পাঁচ বছর কারাদণ্ড বা পাঁচ লাখ টাকা অর্থদণ্ড।’
ক্রিপ্টোকারেন্সিতে লেনদেনের অভিযোগে ১০ অক্টোবর রাজধানীর রামপুরা থেকে গোলাম কিবরিয়া এবং এস এম আরিফুল বারী ওরফে সুমনকে গ্রেপ্তার করে পুলিশের গোয়েন্দা শাখা (ডিবি)। ডিবি বলছে, কয়েক বছর ধরে তাঁরা ক্রিপ্টোকারেন্সিতে লেনদেন করে আসছিলেন। এ ঘটনায় পাঁচজনের বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা করা হয়েছে। গ্রেপ্তারের পর তাঁরা এখন কারাগারে।
গ্রেপ্তার ব্যক্তিদের কাছ থেকে জব্দ করা মুঠোফোনে পাওয়া গেছে ক্রিপ্টোকারেন্সি লেনদেনের বিভিন্ন তথ্য। গ্রেপ্তার কিবরিয়া ও সুমনের মুঠোফোনের তথ্য পর্যালোচনায় দেখা গেছে, ১৩টি অ্যাপ ব্যবহার করে তাঁরা ভার্চ্যুয়াল মুদ্রা ক্রিপ্টোকারেন্সি লেনদেন করেন। তাঁদের হোয়াটসঅ্যাপ, ফেসবুক মেসেঞ্জার ও টেলিগ্রামে ২০১৯ থেকে ২০২২ সালের মধ্যে লেনদেনসংক্রান্ত তথ্য জানতে পেরেছে ডিবি। সেগুলো মামলার আলামত হিসেবে জব্দ করে আদালতে উপস্থাপন করা হয়েছে।
ক্রিপ্টোকারেন্সি লেনদেন করা হয়, এমন একটি অ্যাপের তথ্যও পাওয়া গেছে জব্দ করা মুঠোফোনে। সেখানে দেখা যায়, গত ৫ জুলাই ১৯ হাজার ৯৩২ ডলার লেনদেন করা হয়েছে। একই দিন আরেকটি অ্যাপে লেনদেন হয়েছে আরও ৩ হাজার ৬১০ ডলার। এর আগে ১১ এপ্রিল ওই অ্যাপে লেনদেন হয় ১১ হাজার ডলার। অপর একটি অ্যাপে ১১ মে লেনদেন হয়েছে পাঁচ হাজার ডলার।
পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) বিশেষ পুলিশ সুপার হুমায়ন কবীর প্রথম আলোকে বলেন, যেসব বাংলাদেশি প্রবাসে আছেন, তাঁদের কেউ কেউ ক্রিপ্টোকারেন্সিতে লেনদেন করছেন। মূলত যাঁরা দেশের বাইরে আসা–যাওয়া করেন, তাঁরাই ক্রিপ্টোকারেন্সিতে লেনদেন করেন। তবে সংখ্যায় সেটি কত, তা তদন্তসাপেক্ষ বিষয়।