সাত বছর ধরে চড়া দামে কালোবাজারে রেলের টিকিট বিক্রি করে আসছিল একটি সংঘবদ্ধ চক্র। পাঁচ সদস্যের ওই চক্রের হোতা মো. সেলিম। টিকিট কালোবাজারি মামলায় বিভিন্ন সময়ে জেলও খেটেছেন চক্রের সদস্যরা। কিন্তু জামিনে বের হয়ে আবারও একই অপকর্ম শুরু করেন তাঁরা। আজ বৃহস্পতিবার রাজধানীর কমলাপুর রেলস্টেশনে অভিযান চালিয়ে সেলিম ও তাঁর চার সহযোগীকে গ্রেপ্তার করে র্যাব। তাঁদের কাছ থেকে ট্রেনের বিভিন্ন রুটের ৮৮টি টিকিট, ৪টি মুঠোফোন এবং টিকিট বিক্রির ১৮ হাজার ৪৪৭ টাকা উদ্ধার করা হয়।
পুরান ঢাকার টিকাটুলিতে র্যাব-৩–এর কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানানো হয়। সেখানে র্যাব-৩–এর পরিচালক লেফটেন্যান্ট কর্নেল আরিফ মহিউদ্দিন আহমেদ বলেন, কালোবাজারি চক্রের হোতা সেলিম ও তাঁর সহযোগী মো. শাহ আলম (৩৪), মো. লিটন (৩৫), আবদুর রশিদ ফকির (৩০) ও খোকন মিয়া (৫৮)। তাঁরা কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশনে লাইনে দাঁড়িয়ে একটি জাতীয় পরিচয়পত্র দিয়ে (এনআইডি) দিয়ে চারটি করে টিকিট সংগ্রহ করেন। এ ছাড়া বিভিন্ন এনআইডি ও মুঠোফোন নম্বর ব্যবহার করে অনলাইন থেকেও টিকিট সংগ্রহ করতেন চক্রের সদস্যরা।
ট্রেন ছাড়ার দুই ঘণ্টা আগে থেকে চক্রের সদস্যরা বেশি দামে টিকিট বিক্রিতে তৎপর হয়ে ওঠেন বলে জিজ্ঞাসাবাদে জানতে পেরেছে র্যাব। সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, ট্রেন ছাড়ার সময় ঘনিয়ে এলে টিকিটপ্রত্যাশীদের কাছে দ্বিগুণ মূল্যে টিকিট বিক্রি করেন তাঁরা। সময় বুঝে অনেক ক্ষেত্রে টিকিটের দাম আরও কয়েক গুণ বাড়িয়ে দেন তাঁরা। চক্রটি মূলত তিস্তা এক্সপ্রেস, এগারসিন্দুর প্রভাতী, মহানগর প্রভাতী, চট্টলা এক্সপ্রেস, জয়ন্তিকা এক্সপ্রেস, ব্রহ্মপুত্র এক্সপ্রেস, পারাবত এক্সপ্রেস—এসব ট্রেনের টিকিট কালোবাজারি করে।
লেফটেন্যান্ট কর্নেল আরিফ মহিউদ্দিন আহমেদ বলেন, সাত বছর ধরে সেলিম এই সংঘবদ্ধ চক্রের নেতৃত্ব দিচ্ছেন। কমলাপুর রেলস্টেশন থেকে বিভিন্ন জেলার রেলস্টেশনে এজেন্টদের সঙ্গে যোগসাজশের মাধ্যমে টিকিট কালোবাজারির কার্যক্রম চালিয়ে আসছিলেন তাঁরা। কমলাপুর রেলস্টেশনে অল্প টাকার বিনিময়ে রিকশাচালক ও দিনমজুরকে লাইনে দাঁড় করিয়ে তাঁদের মাধ্যমে টিকিট কেনেন। পরে চক্রের সদস্যরা রেলস্টেশনে ঘুরে ঘুরে টিকিট না পাওয়া যাত্রীদের কাছে সেসব টিকিট চড়া দামে বিক্রি করেন। ঈদসহ বিভিন্ন ছুটি ও উৎসবকে কেন্দ্র করে প্রতিটি টিকিট তিন থেকে চার গুণ বেশি দামে বিক্রি করেন তাঁরা। গত ঈদুল আজহায় ৫০০ টাকার একটি টিকিট সর্বোচ্চ ২ হাজার টাকায় বিক্রি করেন তাঁরা।
আরিফ মহিউদ্দিন আহমেদ আরও বলেন, সেলিমের বিরুদ্ধে বিশেষ ক্ষমতা আইনে মোট সাতটি মামলা আছে। তিনি এর আগে বিভিন্ন মেয়াদে জেলও খেটেছেন। তাঁর সহযোগী শাহ আলমের বিরুদ্ধে টিকিট কালোবাজারির অভিযোগে তিনটি মামলা রয়েছে। গত ঈদুল আজহার আগে গ্রেপ্তার হয়ে ৩৫ দিন আগে তিনি জেল খেটে জামিনে মুক্তি পান। এরপর তিনি আবারও টিকিট কালোবাজারিতে লিপ্ত হন। গ্রেপ্তার রশিদের বিরুদ্ধে টিকিট কালোবাজারির অভিযোগে একটি মামলা রয়েছে। চক্রের সদস্য খোকনের বিরুদ্ধে চারটি মামলা এবং লিটনের নামেও চারটি করে টিকিট কালোবাজারির মামলা রয়েছে।