গোয়েন্দা পুলিশের পর দুই ব্যক্তি মিল্টন সমাদ্দারের বিরুদ্ধে নতুন দুটি মামলা করেছেন। চাইল্ড অ্যান্ড ওল্ড এজ কেয়ার নামে মিল্টনের আশ্রয়কেন্দ্রে লোকজনকে মারধর এবং সেখানে আশ্রিত শিশুকে পাচারের অভিযোগে এই দুই মামলা হয়েছে। এ নিয়ে রাজধানীর মিরপুর মডেল থানায় মিল্টনের বিরুদ্ধে তিনটি মামলা হয়েছে।
মিল্টন সমাদ্দারের আশ্রয়কেন্দ্র ঘিরে নানা অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডের অভিযোগ নিয়ে আলোচনার মধ্যে গতকাল বুধবার রাতে তাঁকে মিরপুর এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করে গোয়েন্দা পুলিশ। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদের ভিত্তিতে গতকাল রাতে ঢাকা মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার হারুন–অর–রশীদ সাংবাদিকদের বলেন, মিল্টন সমাদ্দারের বিরুদ্ধে যেসব অভিযোগ উঠেছে, সেগুলো ভয়ংকর। তাঁকে রিমান্ডে এনে জিজ্ঞাসাবাদের মাধ্যমে এসব অভিযোগের বিষয়ে বিস্তারিত জানার চেষ্টা করা হবে।
পরে আজ সকালে ডিবির মিরপুর বিভাগের উপপরিদর্শক (এসআই) মো. কামাল পাশা মিরপুর মডেল থানায় মিল্টন সমাদ্দারের বিরুদ্ধে জালিয়াতির মাধ্যমে চিকিৎসক সেজে মৃত্যুসনদ দেওয়াসহ নানা অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে জড়িত থাকার অভিযোগে একটি মামলা করেন। ওই মামলায় জিজ্ঞাসাবাদের জন্য মিল্টনের তিন দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত।
এর মধ্যে দুপুরে মিল্টনের বিরুদ্ধে নতুন দুটি মামলা হয় বলে মিরপুর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মুন্সী ছাব্বীর আহম্মদ জানান। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, মিল্টন সমাদ্দারের আশ্রয়কেন্দ্রে লোকজনকে মারধর করার অভিযোগে দ্বিতীয় মামলা করেন নগরীর দারুস সালাম এলাকার বাসিন্দা মতিউর রহমান (মল্লিক) এবং তাঁর বিরুদ্ধে শিশু পাচারের অভিযোগে আরেকটি মামলা করেন জিগাতলার বাসিন্দা এম রকিব।
শিশু পাচারের অভিযোগে মানব পাচার প্রতিরোধ আইনে করা মামলায় এম রাকিব বলেছেন, চার বছর আগে ধানমন্ডি বয়েজ স্কুলের সামনে তিনি দুই বছরের জীর্ণশীর্ণ একটি শিশুকে দেখতে পান। তখন শিশুটিকে শেরেবাংলা নগর থানায় দিতে চাইলে পুলিশ শিশুটিকে রাখতে অনাগ্রহ দেখায়। পরে তিনি মিল্টন সমাদ্দারের মিরপুরের দক্ষিণ পাইকপাড়ায় চাইল্ড অ্যান্ড ওল্ড এজ কেয়ারে যোগাযোগ করেন। মিল্টন সমাদ্দার শিশুটিকে দেখাশোনা ও চিকিৎসার জন্য তাঁর কাছ থেকে ১০ হাজার টাকা নেন। বিভিন্ন সময়ে শিশুটির পেছনে আরও কিছু টাকা খরচ করেন তিনি। সম্প্রতি চাইল্ড অ্যান্ড ওল্ড এজ কেয়ারের পক্ষ থেকে তাঁকে জানানো হয়, আদালতের অনুমতি নিয়ে তিনি শিশুটিকে লালন-পালনের জন্য নিতে পারেন। কিছুদিন পর ওই আশ্রয়কেন্দ্র থেকে আবারও তাঁকে ফোন করে শিশুটিকে আনতে গেলে মারধর করা হবে বলে হুমকি দেওয়া হয়। পরে তিনি জানতে পারেন, তাঁকে না জানিয়েই শিশুটিকে বিক্রি বা পাচার করে দেওয়া হয়েছে।
আর চাইল্ড অ্যান্ড ওল্ড এজ কেয়ারে আটকে মারধরের অভিযোগে অপর মামলাটি করেছেন দারুস সালাম এলাকার বাসিন্দা মতিউর রহমান। এই মামলায় বলা হয়েছে, মতিউর তিন বছর আগে মিরপুর-১ নম্বরের দক্ষিণ বিশিলে মোতালেব হোসেন নামের এক দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী বৃদ্ধকে রাস্তায় পড়ে থাকতে দেখেন। তিনি এ ব্যাপারে দারুস সালাম থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করে অসহায় ওই বৃদ্ধকে সুচিকিৎসা ও দেখভাল করার জন্য মিল্টন সমাদ্দারের প্রতিষ্ঠানটিতে দেন। পরে তিনি (মতিউর রহমান) খোঁজ নিতে গিয়ে জানতে পারেন, মিল্টন সমাদ্দার ওই ব্যক্তিকে তাঁর স্বজনদের কাছে ছেড়ে দিয়েছেন। এ বিষয়ে খোঁজ নিতে ওই আশ্রয়কেন্দ্রে গেলে মিল্টন সমাদ্দার ও তাঁর সহযোগীরা মতিউর ও তাঁর দুই বন্ধুকে লাঠিপেটা করে আহত করেন। হামলাকারীরা এ সময় তাঁর (মতিউর) কাছে থাকা জিডির কপি ও মোতালেবের বিষয়ে চাইল্ড অ্যান্ড ওল্ড এজ কেয়ার থেকে যে কাগজ দেওয়া হয়েছিল, তা ছিনিয়ে নেন। মিল্টন ও তাঁর সহযোগীরা তাঁদের মুঠোফোন থেকে মারধর করার ভিডিও মুছে ফেলেন এবং সাদা কাগজে তাঁদের কাছ থেকে স্বাক্ষর নেন।