২ থেকে ৭ লাখ টাকায় বিমানের নিয়োগ পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁস: ডিবি

বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসে নিয়োগ পরীক্ষায় প্রশ্নপত্র ফাঁসকারী চক্রের সদস্যরা
ছবি: সংগৃহীত

দুই থেকে সাত লাখ টাকার বিনিময়ে পরীক্ষার্থীদের কাছে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের বিভিন্ন পদের নিয়োগ পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁস করেছে সংঘবদ্ধ প্রশ্নপত্র ফাঁসকারী চক্র। এ চক্রের সদস্যরা এর আগেও বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের প্রশ্নপত্র ফাঁসে জড়িত ছিলেন। প্রশ্নপত্র ফাঁসে জড়িত থাকার অভিযোগে গ্রেপ্তার বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের পাঁচজনকে জিজ্ঞাসাবাদ করে এসব তথ্য জানতে পেরেছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশ। প্রশ্নপত্র ফাঁসকারীদের কাছ থেকে জব্দ করা ডায়েরিতে উল্লেখ রয়েছে কার কাছ থেকে কত টাকা সংগ্রহ করা হয়েছে।  

আজ শনিবার ডিএমপির গণমাধ্যম ও গণসংযোগ বিভাগের কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান ডিএমপির অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (গোয়েন্দা) মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ।

প্রশ্নপত্র ফাঁসের অভিযোগে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের ১০টি পদের লিখিত পরীক্ষা স্থগিত করা হয় গতকাল শুক্রবার।

ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ বলেন, বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের বিভিন্ন পদে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের পর অভিযুক্ত আসামিরা ঠিক করেছিলেন, কীভাবে প্রশ্নপত্র ফাঁস করবেন? কীভাবে টাকা নেবেন? পূর্বপরিকল্পনা অনুযায়ী, নিয়োগ পরীক্ষার আগের দিন তাঁরা প্রশ্নপত্র ফাঁসের কাজটি করেছিলেন। আসামিরা প্রশ্নপত্রের হুবহু কপি পান। পরে তাঁরা হোয়াটসঅ্যাপের মাধ্যমে বিভিন্ন ব্যক্তির কাছে বিক্রি করেন। একটি প্রশ্নপত্রের বিনিময়ে তাঁরা নিয়োগ পরীক্ষার্থীদের কাছ থেকে সাত লাখ টাকা পর্যন্ত হাতিয়ে নেন। কারও কারও কাছ থেকে দুই লাখ টাকাও নিয়েছেন।

বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসে নিয়োগ পরীক্ষায় দুই থেকে সাত লাখ টাকায় প্রশ্নপত্র ফাঁস করা হয়। ডিবির উদ্ধার করা অর্থ

সংবাদ সম্মেলনে মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ বলেন, ‘জাতীয় নিরাপত্তা গোয়েন্দার সহযোগিতায় আগের দিন আমরা বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের বিভিন্ন পদে নিয়োগের প্রশ্নপত্র পেয়ে যাই। এ–সংক্রান্ত প্রশ্নপত্র যাঁরা বিলি করেছেন, যাঁরা প্রশ্নপত্র মুখস্থ করাচ্ছিলেন, সেই পাঁচজনকে আমরা গ্রেপ্তার করি। তাঁদের জিজ্ঞাসাবাদ করে আমরা জানতে পেরেছি, বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের বিভিন্ন পদমর্যাদার ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে কাজে নিয়োজিত ছিলেন এসব আসামি। ইতিমধ্যে আমরা আরও কয়েকজন কর্মকর্তাকে শনাক্ত করেছি।’

প্রশ্নপত্র ফাঁসে গ্রেপ্তার হওয়া পাঁচ আসামি হলেন বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের এমটি অপারেটর জাহাঙ্গীর আলম (৩৬), মোহাম্মদ মাহফুজ আলম ভূঁইয়া (৩১), এনামুল হক (২৭), অফিস সহায়ক  আওলাদ হোসেন (২৯) এবং হারুনুর রশিদ (৪০)। ডিবির লালবাগ বিভাগের উপকমিশনার (ডিসি) মশিউর রহমান বলেন, গ্রেপ্তার আসামিদের কাছ থেকে ফাঁস হওয়া নিয়োগ পরীক্ষার প্রশ্নপত্রসহ বিভিন্ন আলামত জব্দ করা হয়েছে।

সংঘবদ্ধ প্রশ্নপত্র ফাঁসকারী চক্র এর আগেও বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের বিভিন্ন পদের নিয়োগ পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁসে জড়িত ছিলেন বলে জানান ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ। তিনি বলেন, ‘আমরা আসামিদের কাছ থেকে কয়েকটি ডায়েরি জব্দ করেছি। তাঁরা কোন পরীক্ষার্থীর কাছ থেকে কত টাকা নিয়েছেন, সেটা আমরা জানতে পেরেছি। আর আসামিদের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদ করে জানতে পেরেছি, এর আগেও তাঁরা বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের নিয়োগ পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁসসহ নানা অনিয়ম করেছেন। সেটা তাঁরা স্বীকারও করেছেন। নিয়োগের ক্ষেত্রে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের মহাব্যবস্থাপক (জিএম), উপমহাব্যবস্থাপকদের (ডিজিএম) সমন্বয়ে কমিটি আছে। প্রশ্নপত্র ফাঁস রোধে কমিটি কাজ করবে। কিন্তু কীভাবে কমিটির চোখ ফাঁকি দিয়ে কীভাবে প্রশ্নপত্র ফাঁস করলেন, সে রহস্য উদ্‌ঘাটনের জন্য আসামিদের রিমান্ডে এনে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে।’

নিয়োগ পরীক্ষায় প্রশ্নপত্র দেওয়ার কথা বলে নেওয়া অর্থের ব্যাংক ড্রাফট

সংবাদ সম্মেলনে মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ বলেন, ‘আসামিদের রিমান্ডে এনে জিজ্ঞাসাবাদ করব। ইতিপূর্বে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের যে পরীক্ষাগুলো হয়েছিল, সেখানে কারা কারা জড়িত ছিলেন, তা আমরা খুঁজে বের করব। আসামিরা জিজ্ঞাসাবাদে স্বীকার করেছেন, ইতিপূর্বে প্রশ্নপত্র ফাঁস করে বিপুল অঙ্কের টাকা হাতিয়ে নেন এই চক্রের সদস্যরা। অনেক ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে তাঁরা ভাগ দিয়েছেন। কাকে তাঁরা ভাগ দিয়েছেন, সেটা আমরা খুঁজে বের করব।’