এ ঘটনায় সাজিদ হজ ট্রাভেলস অ্যান্ড ট্যুরের মালিক অহিদুল আলম ভূঁইয়া ও তাঁর ছেলে সাজিদুর রহমান কারাগারে আছেন।
ব্যবসায়ী শাহ আলম স্ত্রী, মেয়ে ও জামাতাকে নিয়ে এ বছর হজে যেতে রাজধানীর খিলক্ষেত এলাকার সাজিদ হজ ট্রাভেলস অ্যান্ড ট্যুর নামের একটি প্রতিষ্ঠানের ব্যাংক হিসাবে ২৪ লাখ টাকা জমা দেন। কিন্তু চারজনের কেউই হজে যেতে পারেননি। কারণ, নির্ধারিত সময়ের মধ্যে প্রতিষ্ঠানটির মালিক অহিদুল আলম ভূঁইয়া হজ পালনের জন্য সৌদি আরব যাওয়ার ভিসা-টিকিট দিতে পারেননি।
শুধু এ চারজনই নয়, এমন আরও ৪৪-৪৫ জন হজে যাওয়ার জন্য টাকা দিয়েছিলেন সাজিদ হজ ট্রাভেলস অ্যান্ড ট্যুরকে। এই ব্যক্তিদের প্রায় তিন কোটি আত্মসাতের অভিযোগ উঠেছে প্রতিষ্ঠানটির বিরুদ্ধে। পরে ভুক্তভোগীরা মামলা করলে প্রতিষ্ঠানের মালিক অহিদুল ও তাঁর ছেলে সাজিদুর রহমানকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।
হজ করার জন্য কষ্টার্জিত টাকা তাঁদের তুলে দিয়েছিলাম। কিন্তু তাঁদের প্রতারণার কারণে আমি হজ করতে পারিনি। এখনো একটি টাকাও ফেরত পাইনি।জাকির হোসেন, ভুক্তভোগীদের একজন
হজে যেতে না পারা ব্যবসায়ী শাহ আলমের শ্যালক ইলিয়াসুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, হজের সময় ঘনিয়ে এলে ভিসা-টিকিটের বিষয়ে খোঁজ নিতে তিনি অহিদুলের খিলক্ষেতের অফিসে যান। কিন্তু অফিস বন্ধ পান।
পরে ইলিয়াসুর খোঁজ নিয়ে জানতে পারেন, অহিদুল কেবল তাঁর বোন-জামাইয়ের টাকাই নয়, এমন আরও ৪৪-৪৫ জনের প্রায় তিন কোটি টাকা নিয়ে পালিয়েছেন। এ ঘটনায় ইলিয়াসুর বাদী হয়ে আগস্টে অহিদুল ও সাজিদুরসহ পাঁচজনের বিরুদ্ধে মামলা করেন।
ইলিয়াসুর বলেন, ‘আমার বোন ও দুলাইভাই তাঁদের মেয়ে ও জামাতাকে নিয়ে হজে যেতে চেয়েছিলেন। তাঁদের অনেক কষ্টের টাকা আমরা তুলে দিয়েছিলাম অহিদুলের হাতে। কিন্তু তিনি আমাদের সঙ্গে প্রতারণা করেছেন।’
টাকা আত্মসাতের অভিযোগে গত জুন থেকে ৩০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত অহিদুল ও সাজিদের বিরুদ্ধে ঢাকার খিলক্ষেত থানায় সাতটি মামলা করেছেন ভুক্তভোগীরা। খিলক্ষেত থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) কাজী সাহান হক প্রথম আলোকে বলেন, অহিদুল জিজ্ঞাসাবাদে একেক সময় একেক কথা বলেন। কখনো বলেন, টাকা ফিরিয়ে দেবেন আবার কখনো বলছেন, আগামী বছর এসব ব্যক্তিকে হজে পাঠাবেন।
ভুক্তভোগী এবং পুলিশের দেওয়া তথ্য বলছে, অহিদুলের গ্রামের বাড়ি নরসিংদী। গত বছরের জানুয়ারি থেকে চলতি বছরের মে মাস পর্যন্ত হজ গমনেচ্ছু ব্যক্তিদের কাছ থেকে টাকা নেয় তাঁর প্রতিষ্ঠান। কিন্তু নির্দিষ্ট সময়ে ভিসা-টিকিট না পেয়ে যোগাযোগ করলে ভুক্তভোগীরা ১ জুন থেকে অহিদুল ও তাঁর ছেলের মুঠোফোন বন্ধ পান। সরাসরি খিলক্ষেতে গিয়ে তাঁদের অফিসও বন্ধ পান। পরে হজ মন্ত্রণালয়, থানা-পুলিশ, র্যাব ও ডিবিসহ বিভিন্ন দপ্তরে বাবা-ছেলের বিরুদ্ধে লিখিতভাবে অভিযোগ জমা দেন।
গত ২৮ জুলাই সাজিদুর গ্রেপ্তার হন। আর গত ১৪ আগস্ট গ্রেপ্তার হন অহিদুল। তাঁদের কয়েক দফা রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদও করা হয়। মামলার তদন্ত কর্মকর্তা খিলক্ষেত থানার উপপরিদর্শক (এসআই) জহির রায়হান প্রথম আলোকে বলেন, অহিদুল টাকা নেওয়ার কথা অস্বীকার করেননি। তবে টাকা পরিশোধ নিয়ে গড়িমসি করছেন।
হজে পাঠানোর কথা বলে জাকির হোসেনের (৫৯) কাছ থেকে ৬ লাখ ৬১ হাজার টাকা নেন বাবা-ছেলে। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘হজ করার জন্য কষ্টার্জিত টাকা তাঁদের তুলে দিয়েছিলাম। কিন্তু তাঁদের প্রতারণার কারণে আমি হজ করতে পারিনি। এখনো একটি টাকাও ফেরত পাইনি।’
খিলক্ষেত থানার ওসি কাজী সাহান হক বলেন, ‘ভুক্তভোগীরা আমাদের কাছে এসে বলছেন, তাঁদের টাকাটা যেন ফেরত দেন অহিদুল। কিন্তু তিনি টাকা ফেরত দেওয়ার ব্যাপারে কোনো সদুত্তর দিতে পারেননি।’
এদিকে অহিদুল ও তাঁর ছেলের আইনজীবী আদালতের কাছে দাবি করেছেন, ভুক্তভোগীরা হজ মন্ত্রণালয়ে অভিযোগ না করে হয়রানির উদ্দেশ্যে তাঁর মক্কেলদের বিরুদ্ধে মামলা করেছেন।
তবে ধর্ম মন্ত্রণালয়ের হজ অনুবিভাগের প্রধান অতিরিক্ত সচিব মো. মতিউল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, সাজিদ হজ ট্রাভেলস অ্যান্ড ট্যুরের বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগের সত্যতা পাওয়া গেলে প্রতিষ্ঠানটির বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।