১৬ জুলাই ২টি, ১৭ জুলাই ১০টি, ১৮ জুলাই ২৫টি, ১৯ জুলাই ৪১টি ও ২০ জুলাই ২৩টি অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটে।
ফায়ার সার্ভিস এই ঘটনাগুলোকে বলছে ‘উত্তেজিত জনতা কর্তৃক অগ্নিসংযোগ’।
কোটা সংস্কার আন্দোলন ঘিরে সংঘাত-সহিংসতায় সারা দেশে ১১৩টি অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটেছে। এর মধ্যে ঢাকা অঞ্চলেই (রাজধানী ও ঢাকা জেলা) ৯০টি অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটে। বেশির ভাগ ঘটনা ঘটেছে পুলিশের অবস্থান ও তাদের স্থাপনা ঘিরে।
ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স আগুনের ঘটনাগুলো বিশ্লেষণ করে এখন পর্যন্ত এমন তথ্য পেয়েছে। সংস্থাটি বলছে, ১১৩টি আগুনের ঘটনার মধ্যে ৮৯টি ঘটনায় পর্যাপ্ত নিরাপত্তা না পাওয়ায় এবং আন্দোলনকারীদের বাধার মুখে তারা সঠিক সময়ে যেতে পারেনি। আগুন নেভাতে গিয়ে সংস্থাটির ১০টি গাড়ি ভাঙচুর ওবং ৪টি গাড়িতে ভাঙচুরের পর অগ্নিসংযোগ করা হয়েছে। এসব ঘটনায় তাদের ১৮ জন কর্মী মারধরের শিকার হন।
ফায়ার সার্ভিস জানিয়েছে, ১৬ জুলাই ২টি, ১৭ জুলাই ১০টি, ১৮ জুলাই ২৫টি, ১৯ জুলাই ৪১টি ও ২০ জুলাই ২৩টি অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটে। এর পর থেকে আগুনের ঘটনা কিছুটা কমে আসতে থাকে। ২১ জুলাই ৯টি ও ২২ জুলাই ৩টি অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটে। ঢাকার বাইরে নারায়ণগঞ্জে বেশি আগুন লাগার ঘটনা ঘটেছে। ফায়ার সার্ভিস এই ঘটনাগুলোকে বলছে ‘উত্তেজিত জনতা কর্তৃক অগ্নিসংযোগ’।
পুলিশের বিভিন্ন অবস্থান ছাড়াও বিভিন্ন সরকারি স্থাপনায় অগ্নিসংযোগ। সাত দিনে সারা দেশে ১১৩ অগ্নিসংযোগের ঘটনা, ঢাকাতেই ৯০টি।
ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের মুখপাত্র শাহজাহান শিকদার গতকাল মঙ্গলবার প্রথম আলোকে বলেন, সহিংসতার বেশির ভাগ আগুনের ঘটনাই ঘটেছে পুলিশ ও তাদের স্থাপনাকে কেন্দ্র করে। সিদ্ধিরগঞ্জে অগ্নিসংযোগ করা হয় ডাচ্-বাংলা ভবনে, যেখানে হাইওয়ে পুলিশের দুটি ফ্লোর ছিল। ওই ভবনের ছাদে আটকে পড়া পুলিশ সদস্যদের র্যাব হেলিকপ্টার দিয়ে উদ্ধার করে। এ ছাড়া অনেক সরকারি স্থাপনায়ও হামলা হয়েছে।
ফায়ার সার্ভিস বলছে, ভাঙচুর করা ও পোড়ানো তাদের ১৪টি গাড়ির মধ্যে পানিবাহী গাড়ি, আগুন নির্বাপণে ব্যবহৃত ইঞ্জিনবাহী গাড়ি (পাম্পটানা গাড়ি), বিশেষ পানিবাহী গাড়ি ও একটি অ্যাম্বুলেন্স রয়েছে। ফায়ার সার্ভিসের পানিবাহী ও বিশেষ গাড়িগুলো স্থানীয়ভাবে কেনার সুযোগ নেই। এগুলো কিনতে হলে আন্তর্জাতিক দরপত্র আহ্বান করতে হয়। এ কারণে পর্যাপ্ত নিরাপত্তা ছাড়া তারা গাড়ি বের করছে না।
বেশি সহিংসতা তিন দিনে
কোটা সংস্কারের দাবিতে শিক্ষার্থী আন্দোলন শুরু হয় ১ জুলাই। ১৫ জুলাই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগের হামলার পরদিন থেকে সারা দেশে বিক্ষোভ ছড়াতে থাকে। ১৮ থেকে ২০ জুলাই—এই তিন দিনে সবচেয়ে বেশি হতাহত হয় এবং ৮৯টি অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটে। এর মধ্যে রাষ্ট্রীয় টেলিভিশন বিটিভি, সেতু ভবন ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তরে হামলার ঘটনা ঘটে। তবে ফায়ার সার্ভিস এখনো ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ নিরূপণ করতে পারেনি।
ফায়ার সার্ভিস বলছে, আগুন নেভাতে গেলেই তাদের ওপর ‘উত্তেজিত জনতা’ হামলা করেছে। ১৮ জুলাই বেলা দেড়টার দিকে মেরুল বাড্ডার একটি আগুনের ঘটনায় বারিধারা ফায়ার স্টেশন থেকে একটি পানিবাহী গাড়ি রওনা হলে গাড়িটি ভাঙচুর করা হয়। বেলা দুইটার দিকে মিরপুরে একটি আগুন লাগে। মিরপুর ফায়ার স্টেশনের একটি পানিবাহী গাড়ি আগুন নেভাতে গেলে উত্তেজিত জনতা গাড়িটি ভাঙচুর করে এবং দুই কর্মীকে মারধর করে।
এদিন বিকেল সাড়ে চারটার দিকে নারায়ণগঞ্জের শিমরাইল এলাকার হাজীগঞ্জের পিবিআই অফিসে একটি আগুনের ঘটনা ঘটে। হাজীগঞ্জ ফায়ার স্টেশন পানিবাহী গাড়ি নিয়ে আগুন নেভাতে গেলে উত্তেজিত জনতা অগ্নিসংযোগ করে। গাড়িতে থাকা পাঁচজনকে মারধর করে। সময়মতো পুলিশ না যাওয়ায় জনতা আগুন দিয়ে জ্বালিয়ে দেয়।
১৮ জুলাই মহাখালী দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তরে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। তেজগাঁও ফায়ার স্টেশন থেকে একটি পানিবাহী গাড়ি, একটি ইঞ্জিনবাহী গাড়ি এবং একটি অ্যাম্বুলেন্সবাহী গাড়ি রওনা হয়। উত্তেজিত জনতা রাস্তায় ব্যারিকেড দিয়ে গাড়িটি আটকে ভাঙচুর করে। অ্যাম্বুলেন্সটি ভাঙচুর করে জ্বালিয়ে দেয়। এ সময় পাঁচজন কর্মকর্তা-কর্মচারী আহত হন।
একই দিন বিটিভি ভবনের আগুন নেভাতে খিলগাঁও ফায়ার স্টেশন থেকে পানিবাহী গাড়ি বের হলে রাস্তায় গাড়িটি আটকে দেয় উত্তেজিত জনতা। গাড়িতে থাকা ব্যক্তিদের মারধর করে গাড়িটিকে স্টেশনে ফিরে যেতে বাধ্য করে। চট্টগ্রামের বহদ্দারহাট পুলিশ বক্সে দেওয়া আগুন নেভাতে গেলে কালুরঘাট ফায়ার স্টেশনের পানিবাহী ও পাম্পটানা দুটি গাড়ি ভাঙচুর করে উত্তেজিত জনতা।
১৯ জুলাই সেতু ভবনের আগুন নেভাতে পানিবাহী গাড়ির পাশাপাশি একজন উপসহকারী পরিচালক আরেকটি গাড়িতে ঘটনাস্থলে যাচ্ছিলেন। এ সময় ফায়ার সার্ভিসের কর্মকর্তার গাড়িটি ভাঙচুর করা হয়। এদিন মোহাম্মদপুরের সলিমুল্লাহ রোডের একটি আগুনের ঘটনায় পানিবাহী ও পাম্পটানা গাড়ি দুটি ভাঙচুর করে অগ্নিসংযোগ করা হয়।
ফায়ার সার্ভিস সূত্র জানায়, তিন দিনে ৮৯টি অগ্নিসংযোগের ঘটনা এবং ১৮ জন কর্মী আহত হওয়ার পর পুলিশের মহাপরিদর্শক ও ঢাকা মহানগর পুলিশ কমিশনারের সঙ্গে বিষয়টি নিয়ে কথা বলেন ফায়ার সার্ভিসের মহাপরিচালক। এরপর ২১ জুলাই থেকে ফায়ার সার্ভিসের গাড়িগুলো সেনবাহিনী ও পুলিশের পাহারায় আগুন নেভাতে যাচ্ছে।