চোর চক্রের সদস্যদের কাছ থেকে উদ্ধার করা আগ্নেয়াস্ত্র এবং এসব অবৈধ অস্ত্রের মালিক মো. শাহীন
চোর চক্রের সদস্যদের কাছ থেকে উদ্ধার করা আগ্নেয়াস্ত্র এবং এসব অবৈধ অস্ত্রের মালিক মো. শাহীন

চোর ধরে ৫টি অবৈধ অস্ত্রের মালিকের খোঁজ পেল পুলিশ

ঈদের ছুটিতে পুরান ঢাকার ইসলামবাগের একটি বাসায় হওয়া চুরির ঘটনার তদন্তে নেমে চোর চক্রের সাত সদস্যকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। তাঁদের বেশির ভাগেরই চোর হিসেবে পুলিশের তালিকায় নাম রয়েছে। কিন্তু এই চক্রের সদস্যদের কাছ থেকে ৫টি অবৈধ অস্ত্র ও ৩৯টি গুলি উদ্ধার করেন তদন্তসংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা।

অস্ত্রগুলোর মধ্যে চারটি বিদেশি পিস্তল এবং দেশে তৈরি একটি আগ্নেয়াস্ত্র রয়েছে। সাধারণ চুরির ঘটনায় জড়িত ব্যক্তিদের কাছে এসব অস্ত্র কীভাবে এল, সে প্রশ্ন দেখা দেয় পুলিশ কর্মকর্তাদের মধ্যে। তদন্তে বেরিয়ে আসে, এক বছর আগে কেরানীগঞ্জ মডেল থানা এলাকার একটি বাসা থেকে টাকা ও স্বর্ণালংকারের সঙ্গে এসব আগ্নেয়াস্ত্র চুরি করেছিলেন চক্রের সদস্যরা। পরে ওই বাসার মালিক মো. শাহীনসহ পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করা হয়।

আজ রোববার বিকেলে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান অতিরিক্ত কমিশনার (ক্রাইম অ্যান্ড অপস্) খ মহিদ উদ্দিন। তিনি বলেন, শাহীনের বাসায় চুরির ঘটনা ঘটলেও তিনি থানায় কোনো মামলা করেননি। কারণ, অস্ত্রগুলো ছিল অবৈধ।

ঘটনাটি পুলিশের কাছে স্পষ্ট হওয়ার পর ২২ থকে ২৭ এপ্রিল টানা পাঁচ দিন ধারাবাহিক অভিযান চালিয়ে শাহীন ও তাঁর চার সহযোগীকে গ্রেপ্তার করা হয়। অন্য ব্যক্তিরা হলেন মো. রাজীব হোসেন ওরফে রানা (২৮), মো. আবুল হাসান ওরফে সুজন (২৫), মো. পারভেজ নুর (৩৮) ও মানিক চন্দ্র দাস (৩৬)। পুলিশ বলছে, এই চক্রের আরও দুই সদস্য রশিদ মিয়া (৪৬) ও হাসান শাহারিয়ার পাপ্পু (৩৫) পলাতক রয়েছেন। তাঁদের মধ্যে রশিদ বিদেশে আছেন। আর দেশে থাকা শাহারিয়ারকে গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।

এ ঘটনায় গ্রেপ্তার ব্যক্তিদের মধ্যে রাজীবের বিরুদ্ধে ১০টি মামলা, হাসানের বিরুদ্ধে ১টি, মানিকের বিরুদ্ধে ৪টি ও পারভেজের বিরুদ্ধে ২টি মামলা রয়েছে। বর্তমানে তাঁরা পুলিশের রিমান্ডে জিজ্ঞাসাবাদ শেষে কারাগারে রয়েছেন।

গত এক বছরে এই অস্ত্রগুলো নানা কৌশলে হাতবদল হয়েছে উল্লেখ করে পুলিশ কর্মকর্তা মহিদ উদ্দিন বলেন, সাধারণত কোনো চক্র যখন গড়ে ওঠে, তখন তারা নানা সরঞ্জাম সংগ্রহ করে বড় ধরনের কাজ করে থাকে। তেমনি এই অস্ত্রগুলোর অপব্যবহারের সুযোগ ছিল। তবে এখন পর্যন্ত আমাদের কাছে যে তথ্য রয়েছে, তাতে অস্ত্রগুলো একাধিকবার হাতবদল হয়েছে। কেনা-বেচা হয়েছে। কিন্তু অস্ত্রগুলোর কোনো ধরনের অপব্যবহারের তথ্য পাওয়া যায়নি।

এক প্রশ্নের জবাবে ডিএমপির এই অতিরিক্ত কমিশনার বলেন, শাহীন এসব অবৈধ অস্ত্র কোথা থেকে সংগ্রহ করেছেন, কী কারণে সংগ্রহ করেছিলেন, তা তদন্ত করে দেখা হচ্ছে।

ছেলের চুরির সহযোগী মা

গত ঈদুল ফিতরের ছুটিতে ১২ এপ্রিল ইসলামবাগের বাসায় চুরির ঘটনায় গ্রেপ্তার ব্যক্তিরা হলেন মো. মামুন (৩৪) ও তাঁর মা হাসিনা বেগম (৫৭), মো. মিরাজ হোসেন (৩৫), মো. সায়মন (৩০), অমিত হাসান ইয়াসিন (২১), বরুন (৫০) ও জামিলা খাতুন হ্যাপি (১৮)।

সংবাদ সম্মেলনে পুলিশ কর্মকর্তা মহিদ উদ্দিন বলেন, মামুন দীর্ঘদিন ধরে চকবাজার এলাকায় চুরি করেন। এ কাজে মামুনের অন্যতম সহযোগী তাঁর মা হাসিনা বেগম। তাঁরা স্থানীয়ভাবেই চোর হিসেবে পরিচিত। চুরির মামলায় তাঁরা একাধিকবার গ্রেপ্তার হয়েছেন। মামুনের বিরুদ্ধে দেশের বিভিন্ন থানায় ২২টি মামলা রয়েছে। চুরির জন্য মামুনের ১০ থেকে ১২ জনের বাহিনী রয়েছে।