তিনি পরিচিত ‘ল্যাংড়া হাসান’ নামে। ভারতের বসে দেশের বিভিন্ন এলাকার সোনার দোকানে নিশানা করতেন। তাঁর সহযোগীরা সেসব দোকানের বিস্তারিত তথ্য নিয়ে ডাকাতির প্রস্তুতি নিতেন। সব ঠিকঠাক হলে ল্যাংড়া হাসান ভারত থেকে এসে ডাকাতিতে যোগ দিতেন। এই ডাকাত দলে রয়েছে আট সদস্য। গতকাল বুধবার রাতে ঢাকা ও আশপাশের এলাকা থেকে হাসানসহ ছয়জনকে গ্রেপ্তারের কথা জানিয়েছে পুলিশ।
আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে রাজধানীর মিন্টো রোডে ডিএমপির মিডিয়া সেন্টারে এক সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে পুলিশ। সেখানে বলা হয়, গ্রেপ্তার ব্যক্তিরা হলেন হাসান জমাদ্দার ওরফে ল্যাংড়া হাসান, তাঁর সহযোগী মো. আরিফ (২৬), মো. আইনুল হক ওরফে ভোলা (৪২), মো. সাইফুল ইসলাম (৪৫), মো. আনসার আলী (৫০) ও মো. শাহীন (৩৫)। তাঁদের কাছ থেকে একটি পিস্তল, দুটি গুলি, পাঁচটি চাপাতি এবং ডাকাতি শেষে পালিয়ে যেতে ব্যবহার করা প্রাইভেট কার উদ্ধার করা হয়েছে।
সংবাদ সম্মেলনে ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার (ডিবি) হারুন অর রশীদ বলেন, ঢাকা, কেরানীগঞ্জ, মানিকগঞ্জ, ফেনী, চট্টগ্রাম, ময়মনসিংহের ভালুকা, বগুড়াসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় ডাকাতি করতেন এই দলের সদস্যরা। প্রথমে বোমা ফাটিয়ে এবং পরে গুলি করে আতঙ্ক সৃষ্টি করে ছয় থেকে সাত মিনিটের মধ্যে স্বর্ণালংকার লুট করতেন। পরে গাড়িতে করে পালিয়ে যেতেন। এই দলের সদস্যরাই সম্প্রতি রাজধানীর খিলগাঁওয়ে বোমা ফাটিয়ে সোনার দোকানে ডাকাতি করেছিলেন।
ডিবি কর্মকর্তা হারুন অর রশীদ বলেন, ‘চক্রটি ডাকাতির মালামাল কোথায় বিক্রি করে, সে তথ্য আমরা পেয়েছি। পুরান ঢাকার তাঁতীবাজারে কিছু চক্র রয়েছে, যারা এসব মাল কিনে থাকে। আমরা মালিক সমিতিকে অনুরোধ করব, এসব অসাধু চক্রকে প্রশ্রয় দেবেন না। তারা এসব মালামাল কেনার কারণেই দুর্ধর্ষ চক্র ডাকাতি করছে। আমরা অনেকের নাম পেয়েছি। আমরা তাদেরও আইনের আওতায় আনব।’
ডাকাত দলের হোতা ল্যাংড়া হাসান ২০০৮ সাল থেকে দেশের বিভিন্ন এলাকায় বোমা ফাটিয়ে ডাকাতি করে আসছেন বলে জানায় ডিবি। ডিবির দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, ডাকাতি করে পাওয়া মালামাল ভাগাভাগি শেষে আবারও ভারতে চলে যেতেন তিনি। ২০১২ সালে চট্টগ্রামের একটি দোকানে ডাকাতি করতে গিয়ে পায়ে গুলি লেগেছিল হাসানের। তাঁর বিরুদ্ধে ডিএমপিসহ দেশের বিভিন্ন থানায় বিরুদ্ধে ১৭টি মামলা রয়েছে।
ল্যাংড়া হাসান ডাকাতির পর কোন প্রক্রিয়ায় ভারতে যেতেন, তা জানতে চাইলে হারুন অর রশীদ বলেন, ‘ল্যাংড়া হাসানের ভারতে নাগরিক কার্ড করেছে। তাঁর পাসপোর্ট ইমিগ্রেশন থেকে ব্লক করে রাখা। তাই তিনি ব্রাহ্মণবাড়িয়ার কসবা সীমান্ত দিয়ে অবৈধভাবে ভারতে যেতেন। একইভাবে তিনি আবার দেশে ফিরতেন। তাঁর আশ্রয়দাতাদের বিষয়ে খোঁজখবর নেওয়া হবে। ভারতে তিনি কীভাবে নাগরিক হলেন, সে বিষয় আমরা লোক পাঠিয়ে খোঁজ করব।’
পুলিশ কর্মকর্তা হারুন অর রশীদ বলেন, গ্রেপ্তার চক্রের সদস্যরা জিজ্ঞাসাবাদে ডিবিকে বলেছেন, চক্রটি হাসানের নেতৃত্বে সারা দেশে ২৫ থেকে ৩০টি ডাকাতি করেছে। এই ডাকাতির মাধ্যমে হাজার হাজার ভরি সোনা ছিনিয়ে নিয়েছেন তিনি। সম্প্রতি কেরানীগঞ্জ ডাকাতির পর তিনি ফেনীতে ডাকাতি করে। সেখানে ডাকাতির সময় একজনকে গুলি করেন। সেই ব্যক্তি পরে মারা যান। খিলগাঁওয়ে ডাকাতির ঘটনায় তাঁর বিরুদ্ধে রামপুরা থানায় ডাকাতি ও অস্ত্র আইনে দুটি আলাদা মামলা হয়েছে।