ঢাকায় মামলা থেকে নাম কাটার কথা বলে ‘ঘুষ লেনদেন’, র‍্যাব সদস্যসহ আটক ৩

হত্যা মামলায় গ্রেপ্তার এবং অভিযোগপত্রে নাম অন্তর্ভুক্ত করার হুমকি দিয়ে অর্থ আদায়ের অভিযোগে তিনজনকে আটক করে যৌথ বাহিনী।হত্যা মামলায় গ্রেপ্তার এবং অভিযোগপত্রে নাম অন্তর্ভুক্ত করার হুমকি দিয়ে অর্থ আদায়ের অভিযোগে তিনজনকে আটক করে যৌথ বাহিনী
 ছবি: সংগৃহীত

রাজধানীর লালবাগের আজিমপুরের একটি এতিমখানার তত্ত্বাবধায়ককে তিনটি হত্যা মামলায় গ্রেপ্তার এবং অভিযোগপত্রে নাম অন্তর্ভুক্ত করার হুমকি দিয়ে অর্থ আদায়ের অভিযোগে তিনজনকে আটক করেছে যৌথ বাহিনী। সোমবার সন্ধ্যার পর আজিমপুরের ওই এতিমখানা থেকে তাঁদের আটক করা হয়।

আটক তিনজনের মধ্যে একজন র‍্যাবের সদস্য ল্যান্স করপোরাল শাহীন। তিনি র‍্যাব-১০–এ কর্মরত আছেন। অন্য দুজনের মধ্যে একজন সেনাবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত ল্যান্স করপোরাল সিরাজুল ইসলাম। আরেকজন হলেন উজ্জ্বল বিশ্বাস।

এ ঘটনায় র‍্যাব-১০-এর লালবাগ ক্যাম্পের এক কর্মকর্তা জড়িত বলে ওই এতিমখানার তত্ত্বাবধায়ক অভিযোগ করেছেন। রাত সাড়ে ১০টার দিকে লালবাগ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ক্যশিনু প্রথম আলোকে বলেন, তিনজনকে আটক করার পর সেনাবাহিনী তাঁদের থানায় হস্তান্তর করেছে। তাঁদের বিরুদ্ধে মামলা প্রক্রিয়াধীন। মামলায় অজ্ঞাতপরিচয় আরও কয়েকজনকে আসামি করা হচ্ছে।

এতিমখানার তত্ত্বাবধায়ক প্রথম আলোকে বলেন, ৫ আগস্টের ঘটনায় আদালতে করা একটি মামলায় তাঁকে আসামি করা হয়। বিষয়টি ওই র‍্যাব কর্মকর্তা জানতে পারেন। পরে গত ২৭ নভেম্বর এতিমখানায় ল্যান্স করপোরাল শাহীন ও অবসরপ্রাপ্ত ল্যান্স করপোরাল সিরাজুল ইসলামকে পাঠান। দুজন সাদাপোশাকে এসে তাঁকে গ্রেপ্তার করতে উদ্যত হন।

এতিমখানার তত্ত্বাবধায়ক আরও বলেন, একপর্যায়ে এ মামলায় গ্রেপ্তার এড়ানো এবং অভিযোগপত্র থেকে নাম বাদ দেওয়ার জন্য তাঁকে ১০ লাখ টাকা দিতে বলেন শাহীন ও সিরাজুল। তাৎক্ষণিকভাবে ধার করে তাঁদের দুই লাখ টাকা দেন তিনি। বাকি আট লাখ টাকার একটি চেক দেন। আজ সন্ধ্যার পর সেই চেক ফেরত দিয়ে নগদ আট লাখ টাকা নিতে আসেন তিনজন। বিষয়টি আগে থেকেই সেনাবাহিনীকে জানানো হয়েছিল। সেনাবাহিনী এসে তিনজনকে আটক করে লালবাগ থানায় নিয়ে যায়।

র‌্যাব সদস্যদের বিরুদ্ধে ঘুষ চাওয়ার প্রমাণ হিসেবে এতিমখানার তত্ত্বাবধায়ক একটি অডিও রেকর্ড হাজির করেছেন। তিনি বলেছেন, ৩০ নভেম্বরের ওই অডিও রেকর্ডে তাঁর সঙ্গে ওই র‍্যাব কর্মকর্তার কথোপকথন রয়েছে। ওই অডিও রেকর্ডে যেসব কথাবার্তা হয়েছে, তাতে দাঁড়ায়, ঢাকার যাত্রাবাড়ী, রামপুরা ও নিউমার্কেট থানার তিনটি হত্যা মামলায় ওই তত্ত্বাবধায়কের নাম এসেছে। এর মধ্যে যাত্রাবাড়ীর মামলাসংক্রান্ত বিষয়টি এরই মধ্যে সমাধান করেছেন র‌্যাব কর্মকর্তা। তিনি দ্রুত টাকা দেওয়ার জন্য তাগাদা দেন। তত্ত্বাবধায়ক তখন তাঁকে বলেন, তিনি চেষ্টা করছেন। ১ ডিসেম্বরের মধ্যে ৫ লাখ টাকার ব্যবস্থা করে জানাবেন। ওই টাকা নিতে এসেই তিনজন আটক হন।

র‍্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক লেফটেন্যান্ট কর্নেল মুনীম ফেরদৌস প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা অভিযোগটা পেয়েছি। যাচাই-বাছাই করে বিষয়টি তদন্ত করা হচ্ছে।’

এর আগে ১১ অক্টোবর গভীর রাতে রাজধানীর মোহাম্মদপুরের বেড়িবাঁধ এলাকায় তিন রাস্তার মোড়ে আবু বকর নামের এক ব্যবসায়ীর বাসায় ও কার্যালয়ে ডাকাতি হয়। সেনাবাহিনী ও র‌্যাবের পোশাক পরা ডাকাতেরা নিজেদের যৌথ বাহিনীর সদস্য বলে পরিচয় দেন। তাঁরা ৭৫ লাখ টাকা ও ৭০ ভরি সোনা লুট করেন বলে গৃহকর্তা ও পুলিশ সূত্র জানায়। ওই ঘটনায় র‍্যাবের সাবেক একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার জড়িত থাকার তথ্য পাওয়া গিয়েছিল। ওই ডাকাতিতে র‍্যাব–৪-এ কর্মরত আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কয়েকজন সদস্যেরও (নন-কমিশন্ড) নাম এসেছিল।