রাজধানীর কামরাঙ্গীরচরে ফেব্রিকস ব্যবসায়ী মো. নূর আলম হত্যাকাণ্ডে গ্রেপ্তার তিনজন। ছবিতে মাঝে ব্যবসায়ীর কর্মচারী মিরাজ মিয়া এবং তাঁর ডানে রিফাত ও বাঁয়ে শিপন
রাজধানীর কামরাঙ্গীরচরে ফেব্রিকস ব্যবসায়ী মো. নূর আলম হত্যাকাণ্ডে গ্রেপ্তার তিনজন। ছবিতে মাঝে ব্যবসায়ীর কর্মচারী মিরাজ মিয়া এবং তাঁর ডানে রিফাত ও বাঁয়ে শিপন

ব্যবসায়ীকে হত্যার পর মাটিচাপা দিয়ে ওপরে সিমেন্ট-বালুর ঢালাই দেন তাঁরা

রাজধানীর কামরাঙ্গীরচরে ফেব্রিকস ব্যবসায়ী মো. নূর আলম হত্যাকাণ্ডে তাঁর এক কর্মচারীসহ তিনজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। অপর দুজন ওই কর্মচারীর বন্ধু। জিজ্ঞাসাবাদে তাঁদের কাছ থেকে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে পুলিশ জানিয়েছে, নূর আলমের কাছ থেকে অর্থ হাতিয়ে নিতে তাঁকে হত্যা করা হয়। পরে লাশ দুই খণ্ড করে কারখানার ভেতরে মাটিচাপা দেওয়া হয়। কেউ যেন সন্দেহ না করে সে জন্য ওই জায়গায় বালু ও সিমেন্ট দিয়ে ঢালাই করে দেন তাঁরা।

কামরাঙ্গীরচরের হাসাননগর এলাকায় নূর আলমের ফেব্রিকসের কারখানা। এই ব্যবসায়ী নিখোঁজ হওয়ার চার দিনের মাথায় গতকাল মঙ্গলবার কারখানার ভেতর থেকে তাঁর লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। এর আগে নূর আলমের কর্মচারী মিরাজ মিয়া (২০) এবং তাঁর দুই বন্ধু মো. শিপন ওরফে সম্রাট (২৫) ও মো. রিফাতকে (১৯) গ্রেপ্তার করে পুলিশ। তাঁদের কাছ থেকে হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত একটি হাতুড়ি, একটি কাঁচি ও দুটি চাকু উদ্ধার করা হয় বলে পুলিশ জানিয়েছে।

আজ বুধবার রাজধানীর মিন্টো রোডে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) মিডিয়া সেন্টারে এক সংবাদ সম্মেলনে এই হত্যাকাণ্ডের তদন্তে পাওয়া তথ্য তুলে ধরা হয়। সেখানে পুলিশের লালবাগ বিভাগের উপকমিশনার মো. জসিম উদ্দিন বলেন, নূর আলম কামরাঙ্গীরচরের হাসাননগর ভান্ডারী মোড়ে একটি দোকান ভাড়া নিয়ে ফেব্রিকসের ব্যবসা করতেন। গত ৬ ডিসেম্বর নূর আলম তাঁর ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান থেকে গ্রামের বাড়ি ময়মনসিংহের গফরগাঁওয়ে যাবেন বলে তাঁর স্ত্রীকে ফোন করেন। এ সময় কয়েকজন লোকের সঙ্গে নূর আলমের কথা–কাটাকাটি হওয়ার বিষয়টি মুঠোফোনে শুনতে পান নূর আলমের স্ত্রী। এরপর নূর আলম নিখোঁজ থাকায় তাঁর জামাতা মো. আতাউল্লাহ খান সজীব কামরাঙ্গীরচর থানাকে বিষয়টি অবহিত করেন।

উপকমিশনার জসিম উদ্দিন বলেন, কামরাঙ্গীরচর থানা-পুলিশ গোয়েন্দা তথ্য ও প্রযুক্তির সহায়তায় হত্যাকাণ্ডে জড়িত ব্যক্তিদের শনাক্ত করে। পরে ওই কারখানা থেকে কর্মচারী মিরাজকে গ্রেপ্তার করা হয়। ওই দিন কামরাঙ্গীরচরের ঝাউরাহাটি থেকে রিফাতকে এবং পুরান ঢাকার সদরঘাট এলাকা থেকে শিপনকে গ্রেপ্তার করা হয়।

ব্যবসায়ী মো. নূর আলম

উপকমিশনার জসিম উদ্দিন বলেন, জিজ্ঞাসাবাদে আসামিরা জানিয়েছেন, ৬ ডিসেম্বর ভোর সাড়ে চারটা থেকে পৌনে পাঁচটার দিকে মিরাজ, রিফাত, শিপন ও পলাতক জিহাদসহ অজ্ঞাতপরিচয় দুই-তিনজন মিলে নূর আলমের মাথায় হাতুড়ি দিয়ে পিটিয়ে এবং শরীরের বিভিন্ন স্থানে চাকু দিয়ে আঘাত করে হত্যা করেন। পরে কারখানার শৌচাগারে নিয়ে ধারালো অস্ত্র দিয়ে মরদেহ দ্বিখণ্ডিত করা হয়। নূর আলমের মৃতদেহ যাতে কেউ খুঁজে না পায়, সে জন্য মৃতদেহ গুম করার উদ্দেশ্যে মৃতদেহের খণ্ড দুটি পলিথিন ও কাপড় পেঁচিয়ে একটি বস্তায় ভরে ছাপাখানার ভেতরে টেবিলের নিচের মেঝে ভেঙে মাটিচাপা দেন তাঁরা। পরে ওই জায়গাটি বালু ও সিমেন্ট দিয়ে ঢালাই করেন।

গ্রেপ্তার তিনজনকে সঙ্গে নিয়ে তাঁদের তথ্যের ভিত্তিতে ফেব্রিকস কারখানার ভেতরের ঢালাই ভেঙে নূর আলমের দ্বিখণ্ডিত মৃতদেহ উদ্ধার করা হয় বলে জানান উপকমিশনার জসিম উদ্দিন। তিনি বলেন, মরদেহের টুকরা ময়নাতদন্তের জন্য ঢাকা মেডিকেল কলেজ মর্গে পাঠানো হয়েছে। এ ঘটনায় গতকাল নিহত নূর আলমের জামাতা আতাউল্লাহ খান সজীব বাদী হয়ে কামরাঙ্গীরচর থানায় একটি হত্যা মামলা করেন। পুলিশ কর্মকর্তা জসিম উদ্দিন বলেন, ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত ও অন্য আসামিদের গ্রেপ্তারে অভিযান অব্যাহত রয়েছে।

সংবাদ সম্মেলনের পর বিকেলে কামরাঙ্গীরচর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আমিরুল ইসলামের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, নূর আলম তাঁর কর্মচারী মিরাজ মিয়াকে নিয়ে ফেব্রিকস কারখানায় থাকতেন। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে মিরাজ বলেছেন, প্রতি মাসে নূর আলম এক থেকে দেড় লাখ টাকা সঙ্গে নিয়ে তাঁর গ্রামের বাড়িতে যেতেন। ওই টাকা দেখে মিরাজের লোভ হয় এবং তা ছিনিয়ে নিয়ে নিতে তিনি তাঁর দুই বন্ধুকে নিয়ে হত্যার পরিকল্পনা করেন।

ওসি জানান, মিরাজ ও তাঁর দুই বন্ধু শিপন ও রিফাতকে আজ ১০ দিনের রিমান্ডের আবেদন জানিয়ে ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে পাঠানো হয়। শুনানি শেষে আদালত তাঁদের চার দিন করে রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন।