শ্বাসরোধে স্ত্রীকে হত্যার পর লাশ ড্রামে ভরেন। পরদিন লাশভর্তি ড্রামটি স্বামী তাঁর কর্মস্থলের গুদামে নিয়ে যান। গুদামে ড্রামটি রেখে দুই দিন অফিস করেন। পরে ড্রামটি রাস্তার ধারে ফেলে দেন।
চট্টগ্রাম নগরের পতেঙ্গা সমুদ্রসৈকত এলাকায় ড্রামভর্তি অজ্ঞাত পরিচয়ের এক নারীর লাশ উদ্ধারের ঘটনার মামলা তদন্ত করতে গিয়ে এসব তথ্য উদ্ঘাটনের কথা বলছে পুলিশ।
পুলিশ বলছে, তারা লাশটির পরিচয় শনাক্ত করেছে। নিহত নারীর নাম আতিয়া আক্তার (১৮)। তাঁকে হত্যার ঘটনায় তাঁর স্বামী সোহানুর রহমানকে (২২) গতকাল বৃহস্পতিবার কুমিল্লা থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। তিনি আতিয়াকে হত্যার পর অন্যের সহযোগিতায় লাশ ড্রামে ভরে ফেলে দেন।
সোহানুরের কাছ থেকে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে এ ঘটনায় আরও তিন ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। তাঁরা হলেন মোহাম্মদ রুবেল, মোহাম্মদ আশিক ও লিটন।
১৩ অক্টোবর নগরের পতেঙ্গা সমুদ্রসৈকত এলাকার কালীবাড়ি সড়কের পাশ থেকে ড্রামভর্তি অজ্ঞাত পরিচয়ের নারীর লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। লাশ উদ্ধারের ঘটনায় পুলিশ বাদী হয়ে মামলা করে।
পতেঙ্গা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবু জায়েদ মোহাম্মদ নাজমুন নুর প্রথম আলোকে বলেন, দুই মাস আগে মামাতো বোন আতিয়াকে বিয়ে করেন সোহানুর। তিনি নগরের পতেঙ্গা এলাকায় একটি ভাড়া বাসায় স্ত্রীকে নিয়ে থাকতেন। অন্য নারীর সঙ্গে সম্পর্কের অভিযোগে স্ত্রীর সঙ্গে স্বামীর ঝগড়া হয়। এই ঝগড়ার জেরে সোহানুর ক্ষিপ্ত হন। তিনি ১১ অক্টোবর রাতে আতিয়াকে শ্বাসরোধে হত্যা করেন।
গ্রেপ্তার সোহানুরের ভাষ্যের বরাত দিয়ে পুলিশ বলছে, আতিয়াকে হত্যার পরদিন সকালে সোহানুর তাঁর পূর্বপরিচিত রুবেল ও আশিককে বাসায় ডেকে নেন। তাঁদের সহযোগিতায় স্ত্রীর লাশ একটি প্লাস্টিকের ড্রামে ঢুকিয়ে রাখেন। বাসার আশপাশের লোকজন সন্দেহ করতে পারেন—এমনটা ভেবে লাশভর্তি ড্রামটি সোহানুর নিয়ে যান পতেঙ্গা এলাকায়, তাঁর কর্মস্থল একটি নির্মাণকারী ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানের গুদামে। বাসা ছেড়ে দেওয়ায় কিছু সময়ের জন্য ড্রামভর্তি মালামাল কর্মস্থলের গুদামে রাখার কথা বলেন তিনি। গুদামে ড্রামভর্তি স্ত্রীর লাশ রেখে ১২ ও ১৩ অক্টোবর দুই দিন কাজ করেন সোহানুর।
সোহানুর পুলিশকে বলেছেন, ১৩ অক্টোবর রাতে বাড়ি যাওয়ার কথা বলে কর্মস্থলের গুদাম থেকে ড্রামটি বের করেন তিনি। ড্রামভর্তি লাশটি সিএনজিচালিত অটোরিকশা করে নিয়ে যান পতেঙ্গার কালীবাড়ি এলাকায়। পরে ড্রামভর্তি লাশটি সড়কের পাশে ফেলে দেন তিনি। তাঁকে এ কাজে সহযোগিতা করেন অটোরিকশাচালক লিটন। এ জন্য তাঁকে ভাড়াসহ মোট তিন হাজার টাকা দেন। স্ত্রীর লাশ ফেলে সোহানুর কুমিল্লা চলে যান।
লাশের পরিচয় ও খুনের রহস্য কীভাবে উদ্ঘাটন করলেন, জানতে চাইলে পতেঙ্গা থানার ওসি আবু জায়েদ বলেন, তাঁরা আশপাশের বিভিন্ন কারখানা ও প্রতিষ্ঠানের ছুটি নেওয়া কর্মীদের তালিকা সংগ্রহ করেন। ছুটিতে থাকা কর্মীদের ব্যাপারে খোঁজখবর নেন। সোহানুর গ্রামের বাড়ি বগুড়ার সারিয়াকান্দি যাওয়ার কথা বলে ছুটি নিয়েছিলেন। ছুটিতে যাওয়ার আগে তাঁকে একটু অস্বাভাবিক দেখেছিলেন সহকর্মীরা। তিনি যে বাসায় ভাড়া থাকতেন, সেখানে যায় পুলিশ। সেখানে গিয়ে লাশের পরিচয় জানা যায়। জানা যায়, সোহানুর বাসাটি হঠাৎ ছেড়ে দিয়েছেন। পরে তাঁকে কুমিল্লা থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। গ্রেপ্তারের পর পুলিশের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে তিনি দোষ স্বীকার করেন। ঘটনার বিবরণ দেন।
আতিয়ার বাবা আতাউর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, বিয়ের দুই মাসের মাথায় তাঁর মেয়েকে খুন করেছেন স্বামী সোহানুর। আতিয়াকে হত্যার জন্য সোহানুরের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করেন আতাউর।