যাত্রীবাহী বাসে বিশ্বজিৎ দাশের পাশে বসেন একজন। সামনে ও পেছনের আসনে বসেন আরও দুজন। একজন নিজেকে ভেষজ ওষুধ কোম্পানির প্রতিনিধি পরিচয় দিয়ে তাঁর সঙ্গে ভাব জমান। পরে তাঁকে ওষুধের নামে হালুয়া খাওয়ার প্রস্তাব দেন। ইতিমধ্যে সামনে ও পেছনে বসা দুজন সেই হালুয়া খান। তাঁদের কিছু না হওয়ায় বিশ্বজিৎও হালুয়া খান। সেই হালুয়া খেয়েই অজ্ঞান হয়ে যান তিনি। পরে তাঁর পকেট থেকে ২২ হাজার টাকা ও মুঠোফোন নিয়ে যান অজ্ঞান পার্টির সদস্যরা।
গতকাল সোমবার রাতে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) অজ্ঞান পার্টির দুই সদস্যকে গ্রেপ্তার করেছে। পরে তাঁরা অজ্ঞান করে ছিনতাইয়ের এমন বর্ণনা দিয়েছেন। গ্রেপ্তার দুজন হলেন আবদুস সাত্তার ও মো. ইসমাইল। তাঁদের কাছ থেকে অজ্ঞান করে ছিনতাই করা ১৩টি মুঠোফোন উদ্ধার করা হয়।
অজ্ঞান পার্টির খপ্পরে পড়ে ছিনতাইয়ের শিকার বিশ্বজিৎ দাশ প্রথম আলোকে বলেন, গত ৩১ আগস্ট শিপিং জাহাজের ফার্নিচার কিনতে নগরের নিউমার্কেট থেকে ৪ নম্বর লোকাল বাসে করে তিনি সীতাকুণ্ডের ভাটিয়ারি গিয়েছিলেন। ওই দিন বাসে তাঁর পাশে ও সামনে–পেছনে মোট তিনজন যাত্রীবেশে বসে ছিলেন। তাঁদের একজন একটি ভেষজ ওষুধ কোম্পানির বিক্রয় প্রতিনিধি পরিচয় দেন। পরে তাঁর পেছনে ও সামনে যাত্রীবেশে থাকা অজ্ঞান পার্টির দুই সদস্য সেই বিক্রয় প্রতিনিধির কাছ থেকে হালুয়া খান। তাঁদের কিছু না হওয়ায় তিনি নিজেও হালুয়া খান। পরে আর কিছু বলতে পারেন না। সিএনজিচালিত একটি অটোরিকশার চালক তাঁকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যান। সেখানে চিকিৎসা নিয়ে সুস্থ হওয়ার পর তিনি মামলা করেন। পরে এটি পিবিআই তদন্ত শুরু করে।
পিবিআই চট্টগ্রাম জেলা পুলিশ সুপার নাজমুল হাসান প্রথম আলোকে বলেন, গ্রেপ্তার অজ্ঞান পার্টির দুই সদস্য শুধু ওই ঘটনায় জড়িত নন, তাঁরা সীতাকুণ্ডের ভাটিয়ারিতে গত ১ জানুয়ারি মাছ ব্যবসায়ী আবু সৈয়দ খুনের মামলায়ও জড়িত থাকার কথা স্বীকার করেছেন। তিনি বাসে করে ফেরার পথে অজ্ঞান পার্টির কবলে পড়ে মারা যান। ওই ঘটনার পর পিবিআই কয়েকজনকে গ্রেপ্তার করলেও আবদুস সাত্তার দলে নতুন নতুন সদস্য নেন। তাঁরা ৭০টির বেশি ঘটনা ঘটানোর কথা স্বীকার করেছেন।
মামলার তদন্ত কর্মকর্তা পিবিআই চট্টগ্রাম মেট্রো পরিদর্শক শাহাদাত হোসেন বলেন, গ্রেপ্তার আবদুস সাত্তার অজ্ঞান করে ছিনতাইয়ের কথা স্বীকার করে মঙ্গলবার আদালতে জবানবন্দি দিয়েছেন। পরে তাঁকে আদালতের নির্দেশে কারাগারে পাঠিয়ে দেওয়া হয়।
যাত্রীবাহী বাসে অপরিচিত কারও কাছ থেকে কোনো কিছু না খাওয়ার জন্য যাত্রীদের পরামর্শ দেন পুলিশ কর্মকর্তা নাজমুল হাসান। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, যাত্রীবেশে থাকা অজ্ঞান পার্টির সদস্যরা বাসস্ট্যান্ড ও বাসে বিক্রেতার ছদ্মবেশে থাকেন।