ই-কমার্সে অনিয়ম ও প্রতারণা বন্ধে ডিবিআইডির ব্যবস্থা করা হয়েছে। এতে ভোক্তা–ব্যবসায়ী দুই পক্ষই লাভবান হবে।
দেশে ই-কমার্স করতে হলে উদ্যোক্তাদের ডিজিটাল বিজনেস আইডেন্টিফিকেশন (ডিবিআইডি) নিতে হবে। যাঁরা ফেসবুক ব্যবহার করে ব্যবসা করবেন, তাঁদেরও এই নিবন্ধন লাগবে। এতে একদিকে গ্রাহকেরা প্রতারিত হলে প্রতিকার পাবেন, অনলাইন ব্যবসায় স্বচ্ছতাও আসবে। নিবন্ধনপ্রক্রিয়া সহজ করতে সরকার ১৩ আগস্ট ওয়েবসাইট চালু করেছে।
ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান নিবন্ধনের প্রক্রিয়া গত ৬ ফেব্রুয়ারি আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধন করা হয়। কিন্তু কোনো ওয়েবসাইট না থাকায় নিবন্ধন প্রক্রিয়ায় জটিলতা ছিল। গত ১৩ আগস্ট থেকে নতুন সফটওয়্যারের মাধ্যমে উদ্যোক্তাদের নিবন্ধন কার্যক্রম শুরু করে। এখন যেকোনো ই-কমার্স ব্যবসায়ী www.dbid.gov.bd এই ওয়েবসাইটে গিয়ে বিনা মূল্যে নিবন্ধন করতে পারবেন।
ডিবিআইডি সফটওয়্যারটির তদারকি করেছে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ ও আইসিটি বিভাগের বাস্তবায়নাধীন অ্যাসপায়ার টু ইনোভেট (এটুআই) প্রকল্প। এটুআইয়ের জাতীয় পরামর্শক আবদুল মুত্তালিব হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, আবেদন ও অনুমোদন—দুটি প্রক্রিয়াই যতটা সম্ভব সহজ রাখা হয়েছে। এর মাধ্যমে ডিজিটাল ব্যবসাকে একটি কাঠামোর মধ্যে আনা সহজ হবে।
গত কয়েক বছরে দেশে অনলাইনে ব্যবসার প্রসার ঘটেছে। কিন্তু সম্প্রতি ইভ্যালি ও ইঅরেঞ্জসহ কয়েকটি ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে গ্রাহক ও মার্চেন্টদের সঙ্গে প্রতারণার অভিযোগ ওঠে। ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরেও ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানগুলোর বিরুদ্ধে অভিযোগ বাড়ছে।
এত দিন দেশে ই-কমার্সের কোনো নীতিমালা বা নিবন্ধনের ব্যবস্থা ছিল না। গত বছরের জুলাইয়ে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ‘জাতীয় ডিজিটাল কমার্স নীতিমালা-২০২০ নামে একটি নির্দেশিকা প্রণয়ন করে। এই নীতিমালার আলোকে চলতি বছরের ২৯ জুন ‘ডিজিটাল বিজনেস আইডেন্টিটি নিবন্ধন নির্দেশিকা’ অনুমোদন দেয় সরকার।
ই-কমার্স খাতের সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, এত দিন ধরে অনলাইন ও ই-কমার্স ব্যবসায়ীরা অনিবন্ধিত ছিলেন। দেশের অর্থনীতিতে এসব উদ্যোক্তার অবদান থাকলেও ব্যবসা নিবন্ধিত না হওয়ায় একদিকে তাঁরা সরকারের দেওয়া বিভিন্ন আর্থিক সুবিধা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন, অন্যদিকে তদারকির ব্যবস্থা না থাকায় ভোক্তাদেরও প্রতারিত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। তাই ই-কমার্সে অনিয়ম ও প্রতারণা বন্ধে ডিবিআইডির ব্যবস্থা করা হয়েছে।
ই-কমার্স খাতের সংগঠন ই-কমার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ই-ক্যাব) সভাপতি শমী কায়সার বলেন, ই-ক্যাবের পক্ষ থেকে ডিবিআইডির প্রস্তাব করা হয়েছিল। নতুন উদ্যোক্তাদের ট্রেড লাইসেন্স পেতে সহায়ক হবে ডিবিআইডি। ডিবিআইডির মাধ্যমে ব্যবসায়ীরা ব্যাংকের সঙ্গেও যুক্ত হতে পারবেন। ক্রেতারাও কেনাকাটায় নিরাপত্তা পাবেন।
ডিবিআইডি সফটওয়্যার তৈরি, তথ্য সংযোজন ও রক্ষণাবেক্ষণে কাজ করা বেসরকারি প্রতিষ্ঠান মাইসফট হ্যাভেন (বিডি) লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. মোফাখখারুল ইসলাম বলেন, ‘এই ডিজিটাল আইডির ফলে ক্রেতাদের হয়রানি কমবে, ব্যবসায়ীরা আইনি কাঠামোর মধ্যে আসবেন।’
আবেদনের ভিত্তিতে ডিবিআইডি সনদ ইস্যু করবে যৌথ মূলধন কোম্পানি ও ফার্মসমূহের পরিদপ্তর (আরজেএসসি)। আবেদন ফরম পূরণের সময় উদ্যোক্তাকে ছবি, স্বাক্ষর, জাতীয় পরিচয়পত্র, মোবাইল নম্বর ও স্থায়ী-অস্থায়ী ঠিকানা ওয়েবসাইটে আপলোড করতে হবে। প্রয়োজনীয় তথ্য যাচাই-বাছাইয়ের পর সর্বোচ্চ ৬০ কার্যদিবসের মধ্যে ওই প্রতিষ্ঠানকে স্বতন্ত্র আইডি নম্বর দেওয়া হবে।
আরজেএসসির নিবন্ধক (অতিরিক্ত সচিব) শেখ শোয়েবুল আলম প্রথম আলোকে বলেন, ডিবিআইডির এই কার্যক্রম ই–কমার্সে নতুন অধ্যায়ের সূচনা করবে। এর মাধ্যমে ব্যবসায়ীরা যেমন উপকৃত হবেন, ভোক্তাদের অধিকারও সুরক্ষা হবে।