রাজধানীর আসাদ গেটে যাত্রীবাহী একটি বাসে হামলায় জড়িত ব্যক্তিদের চিহ্নিত করতে তদন্ত শুরু করেছে পুলিশ। গত মঙ্গলবার সন্ধ্যায় ট্রান্স সিলভা পরিবহনের একটি বাসে এ হামলা হয়। এ নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে একটি ভিডিও ছড়িয়ে পড়ে। পুলিশ বলেছে, ভিডিওটি অস্পষ্ট এবং যিনি এটি ছড়িয়েছেন, তিনিও এ বিষয়ে স্পষ্ট কোনো তথ্য দিতে পারছেন না।
বাসের এক যাত্রীর ফোন জানালা দিয়ে কেড়ে নেওয়ার চেষ্টা হলে তিনি ছিনতাইকারী বলে চিৎকার দেন। যাত্রীরা তখন একসঙ্গে চিৎকার-চেঁচামেচি শুরু করেন। রাস্তার উল্টো দিকে থাকা পুলিশের একটি ভ্যান থেকে বাঁশি বাজালে ও লাঠি দেখালে ছিনতাইকারীরা সেখান থেকে সরে যান। কিন্তু এর পরপরই বড় ছুরি হাতে ৩-৪ জন ছিনতাইকারী বাসের দিকে তেড়ে এলে যাত্রীদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। সেই ঘটনার অংশবিশেষ ভিডিও করে নিজের ফেসবুকে পেজে শেয়ার করেন জর্দান আসিফ নামের একজন ব্যবসায়ী।
বোনকে হাসপাতালে রেখে ওই বাসে করে মিরপুর থেকে বাসায় ফিরছিলেন জর্দান আসিফ। বাসটি তখন আসাদ গেট পদচারী-সেতুর নিচে যানজটে দাঁড়ানো ছিল। ১ মিনিট ২১ সেকেন্ডের সেই ভিডিওতে দেখা যায়, বাসের যাত্রীরা চিৎকার করে চালকের সহকারী ও কন্ডাক্টরকে দরজা আটকে দিতে বলছেন। এ সময় বাসের জানালা দিয়ে ছুরি হাতে এক তরুণকেও দেখা যায় ওই ভিডিওতে।
বাসের যাত্রীদের একজনকে বলতে শোনা যায়, ‘কত বড় চাকু হাতে দেখছেন, এই দিনদুপুরে বাসে ডাকাতি! মানুষের জানমালের কোনো নিরাপত্তা নাই।’ আরেকজন যাত্রী বলেন, ‘পুলিশ দেখল, একটা বাঁশি ফুঁ দিল আর চইলা গেল। আর ওরা তো চাকু নিয়া ঘুরতাছে।’ এ সময় আরেকজন বলেন, ওরা তো ভিআইপি প্রটোকলের পুলিশ।
আজ বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় যোগাযোগ করা হলে জর্দান আসিফ প্রথম আলোকে বলেন, মঙ্গলবার সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার দিকের ঘটনা। বাসটি তখন যাত্রীতে পরিপূর্ণ। বাসের বাইরে থেকে দেখা যাচ্ছিল কয়েকজন তরুণ বাস, অটোরিকশা ও প্রাইভেট কারের আশপাশ দিয়ে হাঁটাহাঁটি করছেন। তাঁদেরই একজন হঠাৎ বাসের এক যাত্রীর ফোন ছিনিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করেন। যাঁর ফোন ছিনিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করা হয়েছিল, তিনি একজন আইনজীবী এবং নিয়মিত বাসে যাতায়াত করেন। ওই যাত্রী তাঁর সামনের আসনে এবং জানালার পাশে বসেছিলেন। মুঠোফোন ছিনতাইয়ের চেষ্টার সময় ওই ছিনতাইকারীর সঙ্গে তাঁর চোখাচোখি হয়। তিনি তাদের ধমক দিয়ে তাড়িয়ে দেওয়ার চেষ্টা করেন। রাস্তার অপর পাশে (শ্যামলীমুখী রাস্তায়) একটা পুলিশের গাড়ি দেখে বাসের যাত্রীরা তখন চিৎকার করেন।
আসিফ বলেন, পুলিশ লাঠি দেখিয়ে বাঁশি বাজালে ছিনতাইকারীরা সরে যান। কিন্তু পুলিশের গাড়ি চলে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ছিনতাইকারীরা দল বেঁধে ছোরা নিয়ে বাসে হামলা চালাতে এলে যাত্রীদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে।
সেই দিনের ওই ঘটনার বর্ণনায় আসিফ বলেন, ‘বাসের ভেতর সবাই খুবই আতঙ্কিত হয়ে পড়েন। ছিনতাইকারী দলের সবার হাতে ছিল ছুরি। যাত্রীরা সবাই বাসের চালকের সহকারী ও কন্ডাক্টরকে দরজা লাগিয়ে দিতে বলছিলেন। গরমের মধ্যে সবাই জানালা লাগিয়ে দেন। কিন্তু এরপরও ছিনতাইকারীরা জানালার কাচ ভাঙার চেষ্টা চালান।’
আসিফ বলেন, তিনি সাধারণত মোটরসাইকেলে যাতায়াত করেন। কিন্তু বোন অসুস্থ থাকায় সেদিন তাঁকে হাসপাতালে রেখে বাসে ফিরছিলেন। যাঁরা বাসের নিয়মিত যাত্রী, তাঁরা বলছিলেন, এই জায়গায় এ রকম তরুণেরা প্রায়ই ঘোরাফেরা করেন এবং সুযোগ পেলেই মোবাইল টান দিয়ে নিয়ে যান। তবে তাঁরা যে এভাবে ছুরি হাতে বাসভর্তি যাত্রীদের ওপর চড়াও হওয়ার সাহস দেখাতে পারেন, তা তাঁর ভাবনার বাইরে ছিল।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে মোহাম্মদপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবুল কালাম আজাদ বলেন, মিরপুর সড়কের শ্যামলী অভিমুখের অংশটি মোহাম্মদপুর থানায় আর উল্টো দিকের রাস্তাটি পড়েছে শেরেবাংলা নগর থানায়। তাই তিনি বিষয়টি নিয়ে কথা বলার জন্য শেরেবাংলা নগর থানা-পুলিশের সঙ্গে যোগাযোগ করার পরামর্শ দেন।
এ বিষয়ে আজ শেরেবাংলা নগর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) উৎপল বড়ুয়া প্রথম আলোকে বলেন, ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়া ভিডিওটি অস্পষ্ট। ভিডিও দেখে ঘটনা কিছু বোঝা যায় না। পুলিশ তদন্ত শুরু করেছে। সেখানে এমন কোনো ঘটনা ঘটলে জড়িত ব্যক্তিদের চিহ্নিত করে আইনের আওতায় আনা হবে। এই পুলিশ কর্মকর্তা বলেন, ফেসবুকে ভিডিও ছড়িয়ে দেওয়া যুবকের সঙ্গে ফোনে কথা হয়েছে। তাঁকে শেরেবাংলা নগর থানায় আসতে বলা হয়েছে। তাঁর কাছে জানতে চাওয়া হবে এ রকম অস্পষ্ট ভিডিও ফেসবুকে তিনি কেন ছড়িয়েছেন?