পুরান ঢাকায় প্রকাশ্যে এক নারীকে অ্যাসিড ছুড়ে মারার অভিযোগে মামলা হয়েছে। অ্যাসিড অপরাধ দমন আইনে মামলাটি হয়েছে কোতোয়ালি থানায়। ভুক্তভোগী নারীর অভিযোগ, জমি নিয়ে বিরোধের জেরে তাঁকে হত্যার উদ্দেশ্যে অ্যাসিড ছুড়ে মারেন আসামিরা।
মামলা রেকর্ডের প্রায় দুই সপ্তাহ হলেও তিন আসামির কাউকে গ্রেপ্তার করতে পারেনি পুলিশ। আসামিরা হলেন রায়হান মুজিব (২৫), আলমগীর হোসেন (৪৭) ও রানু বেগম (৪৫)। তাঁদের মধ্যে মামলার প্রধান আসামি রায়হান ভুক্তভোগী নারীর চাচাতো ভাই। আর রায়হানের শ্যালক আলমগীর। রানুও ভুক্তভোগী নারীর পরিচিত। তাঁদের সবার বাড়ি ঢাকার দোহার এলাকায়।
১১ জানুয়ারি ভুক্তভোগী নারী তিনজনের বিরুদ্ধে ঢাকার অ্যাসিড অপরাধ দমন ট্রাইব্যুনালে নালিশি মামলা করেন। ঢাকার জেলা জজ এ এইচ এম হাবিবুর রহমান ভূঁইয়া কোতোয়ালি থানাকে এ মামলার আরজিকে এজাহার হিসেবে রেকর্ড করার নির্দেশ দেন। সে অনুযায়ী ১৭ জানুয়ারি ভুক্তভোগী নারীর আরজিকে থানা মামলা হিসেবে রেকর্ড করে।
কোতোয়ালি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মুহা. মাহফুজুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, ভুক্তভোগী নারীকে অ্যাসিড ছুড়ে হত্যাচেষ্টার মামলাটি গুরুত্বের সঙ্গে তদন্ত করা হচ্ছে। আসামিদের গ্রেপ্তারে চেষ্টা চলছে।
মামলার বিবরণ অনুযায়ী, জমি–সংক্রান্ত বিরোধের জেরে ভুক্তভোগী নারীর সঙ্গে আসামি রায়হানের কলহ চলছে। এ নিয়ে একাধিকবার মারামারির ঘটনাও ঘটেছে। সবশেষ গত বছরের ১২ আগস্ট ওই নারীকে পিটিয়ে জখম করেন রায়হান। এরপর তিনি দোহার থানায় মামলা করতে যান। তবে মামলা নেওয়া হয়নি। এ অবস্থায় তিনি গত ১১ ডিসেম্বর আইনগত পরামর্শ নেওয়ার জন্য ঢাকার আদালতে এক আইনজীবীর চেম্বারে যান। আইনজীবীর সঙ্গে কথা বলে তিনি সন্ধ্যা সাতটার দিকে রায়সাহেব বাজারে চিত্রামহল সিনেমা হলের সামনে দিয়ে হেঁটে যাচ্ছিলেন। এ সময় আলমগীর তাঁকে হত্যার উদ্দেশ্যে এসিড ছুড়ে মারেন। তাঁর চিৎকারে মুজিব, আলমগীরসহ অন্যরা পালিয়ে যান।
ভুক্তভোগীর নারীর মামলা তদন্ত করে জড়িত ব্যক্তিদের বিচারের আওতায় আনা হবে।মো. জাফর হোসেন, লালবাগ বিভাগের উপকমিশনার, ডিএমপি
দোহার থানায় ভুক্তভোগী নারীর মামলা না নেওয়ার অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাওয়া হয় থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ হারুন অর রশীদের কাছে। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, মাত্র এক মাস আগে তিনি থানার দায়িত্বে এসেছেন। ভুক্তভোগীর নারীর বিষয়ে তিনি কিছু জানেন না।
মামলার এজাহার অনুযায়ী, অ্যাসিডে গুরুতর জখম হওয়ার পর ভুক্তভোগী নারীকে নিয়ে যাওয়া হয় শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে। ১১ জানুয়ারি তিনি রায়হানসহ তিনজনের বিরুদ্ধে ঢাকার অ্যাসিড অপরাধ দমন ট্রাইব্যুনালে নালিশি মামলা করেন। ঢাকার জেলা জজ এ এইচ এম হাবিবুর রহমান ভূঁইয়া কোতোয়ালি থানাকে এ মামলার আরজিকে এজাহার হিসেবে রেকর্ড করার নির্দেশ দেন। সে অনুযায়ী ১৭ জানুয়ারি ভুক্তভোগী নারীর আরজিকে থানা মামলা হিসেবে রেকর্ড করে।
জমি-সংক্রান্ত বিরোধের বিষয়ে দোহারের মুকসুদপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মো. আবদুল হান্নান খান প্রথম আলোকে বলেন, ভুক্তভোগী নারীর সঙ্গে তাঁর চাচাতো ভাই রায়হানের বিরোধ রয়েছে। এর আগে রায়হান ওই নারীর বিরুদ্ধে ঘর পোড়ানোর মামলা দিয়েছেন। নারীকে মারধর করার অভিযোগের বিষয়টি তিনি জানেন। এ নিয়ে তিনি সালিস-বৈঠকও হয়েছে।
ভুক্তভোগী নারী এখন দোহারের বাড়িতে রয়েছেন। রায়হানের ঘর পোড়ানোর মামলায় জামিনে আছেন উল্লেখ করে তিনি অভিযোগ করেন, তাঁকে নানাভাবে হেনস্তা করা হচ্ছে। তিনি ন্যায়বিচার চান।
চিকিৎসা-সংক্রান্ত কাগজপত্রের তথ্য অনুযায়ী, তাঁর শরীরে ক্ষত সৃষ্টির কারণ ‘কেমিক্যাল বার্ন’।
জানতে চাইলে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) লালবাগ বিভাগের উপকমিশনার (ডিসি) মো. জাফর হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, ভুক্তভোগী নারীর মামলা তদন্ত করে জড়িত ব্যক্তিদের বিচারের আওতায় আনা হবে।