চবিতে ছাত্রীকে যৌন নিপীড়ন

ছাত্রলীগের ২ কর্মীসহ আটক ৪, ছাত্রীর মুঠোফোন উদ্ধার: র‍্যাব

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রীকে যৌন নিপীড়নের প্রতিবাদে শিক্ষার্থী ও শিক্ষকদের সমাবেশ
ফাইল ছবি

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) এক ছাত্রীকে যৌন নিপীড়নের অভিযোগে করা মামলায় বিশ্ববিদ্যালয়ের তিন ছাত্রসহ চারজনকে আটক করা হয়েছে। তাঁদের কাছ থেকে ওই ছাত্রীর মুঠোফোন উদ্ধার করা হয়েছে।

চারজনের মধ্যে দুজন ছাত্রলীগের কর্মী। বাকি দুজন বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগ সভাপতির অনুসারী হিসেবে পরিচিত।

র‍্যাব–৭ হাটহাজারী কোম্পানি কমান্ডার মাহফুজুর রহমান আজ শনিবার সকালে বিষয়টি জানিয়েছেন। বেলা ১১টার দিকে নগরে চাঁদগাঁও ক্যাম্প র‍্যাবের অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল এম এ ইউসুফ এ নিয়ে বিস্তারিত জানাবেন।

চারজন হলেন মেহেদী হাসান ওরফে হৃদয়, আজিম হুসেন, বাবু ও বহিরাগত শাওন। তাঁদের মধ্যে মেহেদী ও আজিম ছাত্রলীগের কর্মী। মেহেদী ইংরেজি বিভাগের ২০১৭-১৮ শিক্ষাবর্ষ ও আজিম ইতিহাস বিভাগের ২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী। গতকাল শুক্রবার রাতে রাউজান ও হাটহাজারী উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালিয়ে তাঁদের আটক করে র‍্যাব।

১৭ জুলাই রাত সাড়ে নয়টায় ক্যাম্পাসে পাঁচ তরুণের হাতে এক ছাত্রী যৌন নিপীড়ন ও মারধরের শিকার হন। বিশ্ববিদ্যালয়ের বোটানিক্যাল গার্ডেন এলাকায় পাঁচ তরুণ ওই ছাত্রীকে বেঁধে বিবস্ত্র করে মুঠোফোনে ভিডিও ধারণ করেন। এ সময় তাঁর সঙ্গে থাকা এক বন্ধু প্রতিবাদ করলে তাঁকেও মারধর করা হয়। এ ঘটনায় গত মঙ্গলবার প্রক্টরের কাছে অভিযোগ দেন ওই ছাত্রী। এর এক দিন পর বুধবার মামলা করেন হাটহাজারী থানায়।

অভিযুক্ত মেহেদী ও আজিম ছাত্রলীগের কর্মী বলে নিশ্চিত করেন বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি রেজাউল হকও। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, মেহেদী ও আজিম দুজনই জুনিয়র। তাঁদের বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণিত হলে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

এর আগে যৌন নিপীড়নের ঘটনায় মঙ্গলবার রেজাউল হককে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেয় কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ। তাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগ ছিল তিনি ঘটনার শিকার ছাত্রীকে প্রক্টরের কাছে লিখিত অভিযোগ দিতে বাধা দেন। এ জন্য ঘটনার দুই দিন পর ওই ছাত্রী অভিযোগ দেন প্রক্টরের কাছে। অবশ্য রেজাউল হকের দাবি, তিনি ছাত্রীকে অভিযোগ দিতে বাধা দেননি।

ঘটনা জানাজানি হওয়ার পর বুধবার থেকেই উত্তাল হয়ে পড়ে ক্যাম্পাস। রাতেই ছাত্রীরা হল থেকে বের হয়ে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে উপাচার্যের বাসভবনের সামনে অবস্থান নেন। ওই দিন রাত একটার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার এস এম মনিরুল হাসান ঘটনাস্থলে গিয়ে চার কার্যদিবসের মধ্যে জড়িত ব্যক্তিদের শনাক্ত করে আইনের আওতায় আনার ঘোষণা দেন। অন্যথায় প্রক্টরিয়াল বডি পদত্যাগ করবে বলে জানান তিনি।

ছাত্রলীগের মানববন্ধনেও ছিলেন মেহেদী

নিপীড়নের প্রতিবাদে গত বৃহস্পতিবারও ক্যাম্পাসে কয়েক হাজার শিক্ষার্থী প্ল্যাকার্ড নিয়ে, স্লোগান দিয়ে শহীদ মিনার চত্বরে কর্মসূচি পালন করেন। একই দিন বেলা দুইটার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবনের সামনে মানববন্ধন করেন সভাপতি রেজাউল হকের অনুসারীরাও।

কর্মসূচির পর মানববন্ধনের ছবি ও ভিডিও সিএফসির একাধিক নেতা-কর্মী সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে শেয়ার দিয়েছেন। সেই ছবি ও ভিডিওতে মেহেদীকে দেখা গেছে। সিএফসির নেতা-কর্মীরা বলেছেন, মেহেদীও নিপীড়নের প্রতিবাদে স্লোগান দিয়েছেন।

মানববন্ধনে মেহেদী উপস্থিত থাকার বিষয়ে সভাপতি রেজাউল হক সরাসরি কোনো উত্তর দেননি। তবে তিনি অপরাধীদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিতে কর্তৃপক্ষের কাছে অনুরোধ জানান।