অভিযোগের বিষয়ে ডিবির ঊর্ধ্বতন একাধিক কর্মকর্তার সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে কেউ ফোন ধরেননি।
সুস্থ আলাল উদ্দিনকে জিজ্ঞাসাবাদের কথা বলে ডেকে নিয়ে যান ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা (ডিবি) বিভাগের কর্মকর্তারা। ডিবি কার্যালয়ে আটক রেখে তাঁর ওপর চালানো হয় নির্যাতন। সেই নির্যাতনেই আলাল মারা গেছেন বলে দাবি পরিবারের।
পরিবারের ভাষ্য, ৬ জুন রাতে আলালের মুঠোফোনে কল করে বাসা থেকে ডেকে নেন ডিবির কর্মকর্তারা। পরে জিজ্ঞাসাবাদের কথা বলে তাঁরা আলালকে গাড়িতে তোলেন। গাড়িতে তুলে আলালের দুই হাতে হাতকড়া পরিয়ে নিয়ে যান। এরপর ১০ দিন তাঁরা আলালের কোনো খোঁজ পাননি।
আলালকে নিয়ে যাওয়ার সময় ডিবির একজন কর্মকর্তা যে মুঠোফোন নম্বর দিয়ে গিয়েছিলেন, সেই নম্বরে একাধিকবার কল করা হয়েছে। ফোন ধরে কোনো পরিচয় না দিয়ে এক ব্যক্তি বলেন, ‘আলাল সুস্থ আছে। আমরা তাঁকে ছেড়ে দেব।’ গত শুক্রবার রাতে ডিবি পুলিশ নয়, হাসপাতাল থেকে ফোন করে আলালের মৃত্যুর খবর জানানো হয় পরিবারকে।
তুরাগ থানার পুলিশ সূত্র জানায়, ৬ জুন সকালে তুরাগের বাউনিয়ার সাততলা একটি বাড়ির দোতলা থেকে ফাতেমা আক্তার (৩৩) নামের এক নারীর লাশ উদ্ধার করা হয়। ওই বাসায় দারোয়ানের কাজ করতেন আলাল উদ্দিন। এ ঘটনায় ফাতেমার ভাই মুরাদ মিয়া তুরাগ থানায় ফাতেমার স্বামী সাইফুল ইসলামকে আসামি করে মামলা করেন। সাইফুলকে পরে গ্রেপ্তার করা হয়।
হাসপাতালে আমাদের আলালের লাশ দেখতে দেয়নি পুলিশ। লাশের সুরতহাল প্রতিবেদনও আমাদের দেখানো হয়নিআলালের ফুফাতো ভাই নেহাজ উদ্দিন
আলালের মৃত্যুর খবর শনিবারে পেয়েছেন বাউনিয়া পুকুরপাড় এলাকার বাসিন্দারা। গতকাল রোববার ওই এলাকায় গিয়ে কথা হয় আলালের বড় ভাই জহির দেওয়ানের সঙ্গে। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘ওরা আমার ভাইকে সুস্থ অবস্থায় নিয়ে গেছে। পরে নির্যাতন করে তাঁর পা ভেঙে দিয়ে পঙ্গু হাসপাতালে ভর্তি করিয়েছে। ডিবি আমার ভাইকে হত্যা করেছে।’ তাঁর দাবি, তুলে নেওয়ার পর ১০ দিন আলাল যাঁদের কাছে ছিলেন, তাঁরাই এ হত্যার জন্য দায়ী।
পরিবারের এই অভিযোগের বিষয়ে জানতে ডিবির ঊর্ধ্বতন একাধিক কর্মকর্তার সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও কেউ ফোন ধরেননি। পরে একই বিষয়ে বক্তব্য জানতে ডিএমপি গণমাধ্যম ও জনসংযোগ বিভাগের উপকমিশনার ফারুক হোসেনের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হয়। তিনি ফোন ধরেননি। তাঁর মুঠোফোনে খুদে বার্তা পাঠানো হলেও সাড়া দেননি তিনি।
আলালরা পাঁচ ভাই খুবই নিরীহ প্রকৃতির। তাঁদের বিরুদ্ধে কোনো মামলা বা জিডি আছে বলে তাঁদের জানা নেই। তারপরও যদি কোনো অন্যায় করে থাকে, আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া যেত।প্রতিবেশী আরিফুল ইসলাম
পরে ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার (অপরাধ ও অভিযান) খন্দকার মহিদ উদ্দিন প্রথম আলোকে বলেন, এটা ডিবির বিষয়।
পুকুরপাড় এলাকার একটি আধা পাকা বাড়িতে পরিবার নিয়ে থাকতেন আলাল। চাকরি থেকে ১৪ হাজার টাকা বেতন পেতেন। দুই ছেলেমেয়ের পড়ালেখা খরচ মিটিয়ে যে টাকা বাঁচত, তা দিয়েই সংসার চালাতেন আলাল। স্বামীর এমন মৃত্যুতে দুই সন্তানের ভবিষ্যৎ নিয়ে চিন্তিত আলালের স্ত্রী পারভিন আক্তার শুরুতে কোনো কথা বলতেই চাইলেন না। শুধু বললেন, ‘ওরা আমার স্বামীকে মেরে ফেলেছে। কিছু বললে যদি আমার সন্তানদের ক্ষতি করে?’
সন্তানের মৃত্যুর খবর শুনে আহাজারি করছেন আলালের মা মহর বানু। তাঁর কথা, ‘তোমরা আমার আলালকে এনে দাও।’
আলালের ফুফাতো ভাই নেহাজ উদ্দিন গতকাল প্রথম আলোকে বলেন, ‘হাসপাতালে আমাদের আলালের লাশ দেখতে দেয়নি পুলিশ। লাশের সুরতহাল প্রতিবেদনও আমাদের দেখানো হয়নি।’
আলালের প্রতিবেশী আরিফুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, আলালরা পাঁচ ভাই খুবই নিরীহ প্রকৃতির। তাঁদের বিরুদ্ধে কোনো মামলা বা জিডি আছে বলে তাঁদের জানা নেই। তারপরও যদি কোনো অন্যায় করে থাকে, আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া যেত।
এদিকে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) হেফাজতে আলাল উদ্দিনের মৃত্যুর ঘটনায় গভীর উদ্বেগ জানিয়ে নিরপেক্ষ তদন্তের দাবি জানিয়েছে আইন ও সালিশ কেন্দ্র (আসক)।