আরাভের ভারতীয় পাসপোর্ট বাতিলে উদ্যোগ

রবিউল ইসলাম ওরফে আরাভ
রবিউল ইসলাম ওরফে আরাভ

ঢাকায় পুলিশ হত্যার আসামি রবিউল ইসলাম ওরফে আরাভ খান ভারতীয় পাসপোর্ট নিয়ে সংযুক্ত আরব আমিরাতের দুবাইয়ে অবস্থান করছেন। তাঁকে দেশে ফিরিয়ে আনার প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে আরাভের ভারতীয় পাসপোর্ট বাতিলের জন্য ঢাকায় ভারতের হাইকমিশনে একটি চিঠি পাঠানো হচ্ছে।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের ওই চিঠি পুলিশ সদর দপ্তরের মাধ্যমে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। মন্ত্রণালয় থেকে চিঠিটি ভারতীয় হাইকমিশনে পাঠানো হবে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান বুধবার প্রথম আলোকে বলেন, ভারতের সহযোগিতা ছাড়া আরাভকে ফেরত আনা সম্ভব নয়। তিনি বাংলাদেশের পাসপোর্ট দিয়ে দুবাই যাননি। এখন তাঁকে ফেরত আনতে হলে ভারতকে অনুরোধ করতেই হবে।

দুবাইয়ে আরাভ খান নামে স্বর্ণ ব্যবসায়ী হয়ে ওঠা রবিউল পুলিশের বিশেষ শাখার (এসবি) পরিদর্শক মামুন ইমরান খান হত্যা মামলার আসামি। মামুন খুন হন ২০১৮ সালের ৮ জুলাই। পরদিন গাজীপুরের জঙ্গল থেকে তাঁর আধপোড়া মরদেহ উদ্ধার করা হয়। এ ঘটনায় মামুনের বড় ভাই জাহাঙ্গীর আলম খান বাদী হয়ে ঢাকার বনানী থানায় হত্যা মামলা করেন। মামলাটি তদন্ত করে পলাতক রবিউল ওরফে আরাভসহ ১০ জনের বিরুদ্ধে ২০১৯ সালের ৩১ মার্চ অভিযোগপত্র দেয় ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। মামলাটি এখন ঢাকার প্রথম অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ আদালতে বিচারাধীন।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, ডিবির চিঠিতে আরাভ খানের ভারতীয় পাসপোর্ট বাতিলের অনুরোধ জানিয়ে বলা হয়েছে, আরাভ খান জন্মসূত্রে বাংলাদেশের নাগরিক, তাঁর প্রকৃত নাম রবিউল ইসলাম ওরফে আপন ওরফে আরাভ খান। তিনি বর্তমানে ভারতীয় পাসপোর্ট নিয়ে দুবাইয়ে অবস্থান করছেন।

চিঠিতে আরাভের বাংলাদেশি জাতীয় পরিচয়পত্রের নম্বর, তাঁর মা–বাবার নাম এবং গোপালগঞ্জ ও বাগেরহাটের দুটি স্থায়ী ঠিকানা উল্লেখ করা হয়েছে। সেখানে পুলিশ কর্মকর্তা মামুন হত্যাকাণ্ডের বিষয়টি বিস্তারিত তুলে ধরা হয়েছে। চিঠিতে বলা হয়েছে, দুর্বৃত্তরা এই পুলিশ পরিদর্শককে হত্যা করেই ক্ষান্ত হয়নি, আইনের মুখোমুখি হওয়া থেকে নিজেদের রক্ষায় তথ্য–প্রমাণ নষ্ট করতে চেয়েছে। গোয়েন্দা পুলিশ ও পুলিশের বিশেষ শাখা এই হত্যাকাণ্ডের তদন্ত করে ১০ জনকে অভিযুক্ত করে। তাঁদের বিরুদ্ধে হত্যা ও তথ্য–প্রমাণ নষ্টের অভিযোগ আনা হয়। এই হত্যা মামলা ছাড়াও আরাভ খানের বিরুদ্ধে আরও বেশ কয়েকটি মামলায় গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেছেন আদালত।

পুলিশের চিঠিতে বলা হয়েছে, অভিযুক্ত আরাভ খান নিজের পরিচয় গোপন এবং কোনোভাবে ভারতীয় পাসপোর্ট সংগ্রহ করে আইনি প্রক্রিয়া এড়িয়ে যান। ওই পাসপোর্ট নিয়ে তিনি সংযুক্ত আরব আমিরাতে গিয়েছেন।

এই প্রেক্ষাপটে যত দ্রুত সম্ভব আরাভ খানের ভারতীয় পাসপোর্ট বাতিলের অনুরোধ করা হয়েছে চিঠিতে। চিঠির সঙ্গে আরাভ খানের মামলাসংক্রান্ত ২২ পাতা সংযুক্তিও পাঠানো হয়েছে।

আরাভ খান দুবাইয়ে স্বর্ণ ব্যবসায়ী হিসেবে পরিচিত। গত ১৫ মার্চ দুবাইয়ের নিউ গোল্ড সুকে জমকালো অনুষ্ঠানে আরাভ জুয়েলার্স নামে একটি স্বর্ণের দোকানের উদ্বোধন করেন তিনি। ওই অনুষ্ঠানে বাংলাদেশের ক্রীড়া ও বিনোদনজগতের অনেক তারকাকে হাজির করে আলোচনায় আসেন আরাভ। এরপর থেকে তাঁর নানা অপকর্মের খবর বেরিয়ে আসছে।