মোহাম্মদ সাহেদের ৪৩ ব্যাংক হিসাবে প্রায় ৯০ কোটি টাকা লেনদেনের তথ্য পেয়েছে সিআইডি।
করোনার ভুয়া সনদ কেলেঙ্কারিতে আলোচিত মোহাম্মদ সাহেদের ৪৩ ব্যাংক হিসাবে প্রায় ৯০ কোটি টাকা লেনদেনের তথ্য পেয়েছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)। এর মধ্যে রিজেন্ট হাসপাতালে করোনা পরীক্ষার ভুয়া সনদ দিয়ে তিনি ৩ কোটি ১১ লাখ ৯০ হাজার ২২৭ টাকা আত্মসাৎ করেন। এ ছাড়া বিভিন্ন ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে প্রতারণা করে ৭ কোটি ৯০ লাখ ২৭ হাজার ৮৯৭ টাকা আত্মসাৎ করেছেন সাহেদ। পাওনাদারেরা অর্থ চাইলে তিনি পিস্তল বের করে তাঁদের ভয় দেখাতেন।
প্রতারণা ও জালিয়াতির মাধ্যমে অর্থ আত্মসাতের অভিযোগে সাহেদ ও তাঁর দুই সহযোগী এবং তিন প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে করা মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ আইনের মামলায় দেওয়া অভিযোগপত্রে এসব তথ্য উঠে এসেছে। গত বৃহস্পতিবার সিআইডির তদন্ত কর্মকর্তা আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেন। এতে বলা হয়, করোনার ভুয়া সনদ এবং বিভিন্ন ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে প্রতারণার মাধ্যমে সাহেদের প্রায় ১১ কোটি টাকা আত্মসাতের প্রমাণ পাওয়া গেছে।
অভিযোগপত্রে বলা হয়, সাহেদ সরকারি প্রকল্পে কাজ পাওয়ার কথা বলে বিভিন্ন ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে বালু, পাথরসহ বিভিন্ন নির্মাণসামগ্রী বাকিতে কিনতেন। সাহেদ ও তাঁর প্রতিষ্ঠানের কাছে ২৮টি প্রতিষ্ঠান টাকা পাবে। টাকা চাইতে গেলে তিনি পাওনাদারদের পিস্তল দিয়ে গুলি করে হত্যার হুমকি দিতেন।
সিআইডি সূত্র জানায়, মামলার অভিযোগপত্রে রিজেন্ট গ্রুপের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ সাহেদ, ব্যবস্থাপনা পরিচালক মাসুদ পারভেজ ও পরিচালক কাজী রবিউল ইসলামকে অভিযুক্ত করা হয়েছে। তাঁর মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠান রিজেন্ট হাসপাতাল লিমিটেড, রিজেন্ট কে সি এস লিমিটেড ও রিজেন্ট ট্যুর অ্যান্ড ট্রাভেলস লিমিটেডকেও অভিযুক্ত করা হয়েছে।
সিআইডির তদন্ত কর্মকর্তা পরিদর্শক মো. মনিরুজ্জামান প্রথম আলোকে বলেন, উত্তরা পশ্চিম থানায় মানি লন্ডারিং আইনে করা মামলার তদন্ত শেষে সাহেদসহ তিনজনের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র দেওয়া হয়েছে। সাহেদ ও পারভেজ এখন কারাগারে। অন্য আসামি রবিউল পলাতক।
রিজেন্ট গ্রুপের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ সাহেদ রাজধানীর উত্তরা ও মিরপুরে বেসরকারি রিজেন্ট হাসপাতাল গড়ে তুলেছিলেন। সরকারের অনেক মন্ত্রীসহ প্রভাবশালী ব্যক্তিদের সঙ্গে ছবি তুলে সেগুলো সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে দিতেন। টেলিভিশন টক শোতে দুর্নীতি দমনসহ নানা বিষয়ে কথা বলতেন।
২০২০ সালে দেশে করোনা মহামারি ভয়াবহ রূপ নিলে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সঙ্গে চুক্তি করে তাঁর হাসপাতালে করোনা পরীক্ষার অনুমোদন নেন সাহেদ। তবে তাঁর হাসপাতালের বিরুদ্ধে ভুয়া সনদ দেওয়ার অভিযোগ উঠলে ওই বছরের ৬ জুলাই সেখানে অভিযান চালায় র্যাব। কঠিন সময়ে মানুষের জীবন–মৃত্যু নিয়ে তাঁর প্রতারণার বিষয়টি সামনে এলে গা ঢাকা দেন সাহেদ। সপ্তাহ দুয়েকের মাথায় সাতক্ষীরার দেবহাটা এলাকা থেকে তাঁকে গ্রেপ্তার করে র্যাব। এরপর সাহেদের প্রতারণার নানা বিষয় প্রকাশ হতে থাকে।
আদালত সূত্রে জানা যায়, জলসিড়ি আবাসন প্রকল্পে বালু ও পাথর সরবরাহের কথা বলে সাহেদ সুনামগঞ্জের ছাতক উপজেলার এখলাছ খানের কাছ থেকে ২০২০ সালে ১৫ জুলাই ১ কোটি ৮৯ লাখ টাকার বালু ও পাথর কিনেন। টাকা চাইতে গেলে সাহেদ তাঁকে গুলি করে হত্যার হুমকি দেন।
এখলাছ প্রথম আলোকে বলেন, টাকা চাইতে গেলে তাঁকে গুলি করে হত্যার হুমকি দিতেন সাহেদ। অর্থ উদ্ধার করতে না পেরে তিনি তাঁর বিরুদ্ধে প্রতারণার মামলা করেন। গ্রেপ্তার হওয়ার পর তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ করে মামলা তুলে নেওয়ার অনুরোধ করেন সাহেদ। জামিনে বেরিয়ে এলে অর্থ পরিশোধের প্রতিশ্রুতিও দেন।
চট্টগ্রামের সাইফুদ্দিন মহসিন নামের আরেক ব্যবসায়ীকে ২০০ সিএনজি অটোরিকশার রুট পারমিট (সড়কে চলাচলের অনুমতি) করিয়ে দেওয়ার কথা বলে দুই দফায় ৯১ লাখ টাকা নেন। ঢাকার ব্যবসায়ী আনোয়ার হোসেনের কাছ থেকে উত্তরার ৬ নম্বর সেক্টরে হোটেল মিলিনা ভাড়া নিয়ে পরে সেটি জোরপূর্বক দখল করেন সাহেদ। হোটেলের ভাড়া বাবদ তাঁর কাছে ১ কোটি ৩৬ লাখ টাকা পাবেন আনোয়ার।
সাইফুদ্দিন প্রথম আলোকে বলেন, ‘সাহেদ টাকা নিয়েও কোনো কাজ করেননি। পরে টাকা চাইতে গেলে নানা হুমকি দিতেন। একজন মন্ত্রীর নাম ব্যবহার করেও আমাকে হুমকি দিয়েছিলেন।’