সাতক্ষীরার কলারোয়া উপজেলার বর্তমান ছাত্রলীগ নেতাদের বিরুদ্ধে একই সংগঠনের সাবেক এক নেতার ডান হাতের চারটি আঙুল কেটে নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। এ ঘটনায় উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি শেখ সাগর হোসেন, সাধারণ সম্পাদক মেহেদি হাসানসহ পাঁচজনের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। পুলিশ এক ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করেছে।
শনিবার দুপুর ১২টায় কলারোয়া স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের মধ্যে এই ঘটনা ঘটে। এই ঘটনায় সন্ধ্যার দিকে উপজেলা ছাত্রলীগের কমিটি বিলুপ্ত ঘোষণা করেছে জেলা ছাত্রলীগ।
আহত যুবকের নাম জিএম তুষার (২৮)। তিনি কলারোয়া উপজেলা ছাত্রলীগের সাবেক সহসভাপতি ও উপজেলার পাটুরিয়া গ্রামের মনসুর গাজির ছেলে। কলারোয়া পুরাতন বাসস্ট্যান্ডে তুষারের একটি ইলেক্ট্রনিকসের দোকান রয়েছে।
আহত তুষার প্রথম আলোকে বলেন, জমিসংক্রান্ত বিরোধের জেরে এ ঘটনা ঘটেছে। তাঁর বড় চাচা আবু সিদ্দিকি সাত মাস আগে উপজেলার কাজিরহাট এলাকায় ৩৩ শতক জমি কেনেন। ওই জমি নিয়ে একই উপজেলার দেগং গ্রামের রেজাউল করিমের সঙ্গে সীমানা নির্ধারণের বিষয়ে বিরোধ শুরু হয়। এরই জের ধরে আজ বেলা ১১টার দিকে মন্টু নামের ছাত্রলীগের এক কর্মী তুষারকে মুঠোফোনে কলারোয়া পাইলট বিদ্যালয়ের সামনে আসতে বলেন।
তুষারের অভিযোগ, তিনি বিদ্যালয়ের সামনে গেলে উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি সাগর হোসেন, সাধারণ সম্পাদক মেহেদি হাসান, শিমুল নামের একজনসহ ১০ থেকে ১২ জন তাঁর ওপর হামলা চালান। এ সময় তাঁকে লোহার রড দিয়ে পিটিয়ে আহত করে।
আহত তুষারকে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যান উপজেলা আওয়ামী লীগের কর্মী ফজলুল হক ও শহীদুল ইসলাম। তাঁরা জানান, চিকিৎসকেরা আহত তুষারকে সেখানে ভর্তি হওয়ার পরামর্শ দেন। ভর্তি প্রক্রিয়া শেষ করে তাঁরা ওষুধ কিনতে গেলে সাগর, মেহেদি, মন্টু, পলাশ, জুয়েলসহ কয়েকজন স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ঢুকে আবারও তুষারকে পেটাতে থাকেন। এ সময় তুষার দৌড়ে পালাতে গেলে রামদা দিয়ে তাঁকে কোপ দেন হামলাকারীরা। এতে তুষারের ডান হাতের চারটি আঙুল কেটে পড়ে যায়। এরপর গুরুতর অবস্থায় তুষারকে উদ্ধার করে প্রথমে সাতক্ষীরা সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানে তাঁর অবস্থার অবনতি হলে হেলিকপ্টারযোগে ঢাকায় নেওয়া হয়।
সাতক্ষীরা সদর হাসপাতালের জরুরি বিভাগের চিকিৎসক ইকবাল মাহমুদ বলেন, ধারালো অস্ত্র দিয়ে তুষারের চারটি আঙুল কেটে ফেলা হয়েছে। তাঁর শরীরের একাধিক জায়গাতে কাটা ও আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়ার পর তুষারকে উন্নত চিকিৎসার জন্য জরুরি ভিত্তিতে ঢাকা নেওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়।
কলারোয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. মনিরুজ্জামান বলেন, এ ঘটনায় আহত তুষারের চাচা আবু সিদ্দিক বাদী হয়ে কলারোয়া ছাত্রলীগের সভাপতি সাগর হোসেন, সাধারণ সম্পাদক মেহেদি হাসান, রেজাউল করিম, মন্টুসহ পাঁচজনের নাম উল্লেখ করে থানায় একটি মামলা করেছেন। ইতিমধ্যে রেজাউল করিমকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
ঘটনার বিষয়ে জানতে সাগর হোসেন ও মেহেদি হাসানের সঙ্গে যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলেও তাঁদের মুঠোফোন বন্ধ পাওয়া যায়।
সন্ধ্যায় গণমাধ্যমকর্মীদের কাছে সাতক্ষীরা জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি রেজাউল ইসলাম রেজা ও সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ সাদিকুর রহমান স্বাক্ষরিত সংবাদ বিজ্ঞপ্তি আসে। তাতে বলা হয়, অভিযোগের সত্যতা প্রমাণিত হওয়ায় কলারোয়া উপজেলা কমিটি বিলুপ্ত ঘোষণা করা হলো। একই সঙ্গে উপজেলা ছাত্রলীগের কর্মী বাবু, মন্টু ও ইমামকে সাময়িক বহিষ্কার করা হলো।