নাটোরের বাগাতিপাড়া উপজেলার লক্ষণহাটি গ্রামের আবদুস সামাদ (৫০) জীবিত থেকেও গত পাঁচ বছর ধরে সরকারি কাগজপত্রে ‘মৃত’ ব্যক্তি হিসেবে চিহ্নিত আছেন। এ কারণে তিনি ভোটাধিকার প্রয়োগসহ সব ধরনের নাগরিক অধিকার থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। সংশ্লিষ্ট কার্যালয়ে বিষয়টি বারবার জানিয়েও তিনি সমাধান পাচ্ছেন না। সর্বশেষ গত শুক্রবার এলাকার অন্যরা স্মার্টকার্ড হাতে পেলেও তাঁকে স্মার্টকার্ড দেওয়া হয়নি।
আবদুস সামাদ লক্ষণহাটি গ্রামের এলবাস আলী ও আয়েশা বেগম দম্পতির ছেলে। ১৯৭০ সালের ১২ সেপ্টেম্বর তিনি জন্মগ্রহণ করেন। ২০০৮ সালে তিনি জাতীয় পরিচয়পত্র পান। সেখানে তাঁর নাগরিক পরিচিতি নম্বর ছিল ৬৯২০৯০৬৬৯১০৯০। অথচ ২০১৪ সালের ১৯ ফেব্রুয়ারি উপজেলা নির্বাচনে ভোট দিতে গেলে নির্বাচন কর্মকর্তা জানান, তিনি ভোট দিতে পারবেন না। কারণ নির্বাচন কার্যালয়ের কাগজপত্রে তিনি মৃত ব্যক্তি হিসেবে লিপিবদ্ধ আছেন।
নির্বাচনের পরপরই আবদুস সামাদ উপজেলা নির্বাচন কার্যালয়ে গিয়ে কাগজ সংশোধন করে তাঁকে জীবিত হিসেবে দেখানোর আবেদন করেন। উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা খুব শিগগিরই তা করে দেওয়ার আশ্বাস দেন। কিন্তু বছরের পর বছর গড়িয়ে গেলেও তিনি সরকারি কাগজে জীবিত হতে পারেননি। ফলে তিনি উপজেলা পরিষদ নির্বাচন, ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন ও জাতীয় নির্বাচনে ভোট দিতে পারেননি। বিষয়টি সমাধানের জন্য তিনি স্থানীয় ওয়ার্ড কাউন্সিলর, মেয়র, উপজেলা চেয়ারম্যান ও নির্বাচন কর্মকর্তার কার্যালয়ে দিনের পর দিন ঘুরছেন। সর্বশেষ গত বছরের অক্টোবরে উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তার কার্যালয়ে আবারও তিনি নিজেকে সরকারি কাগজে জীবিত দেখানোর জন্য লিখিত আবেদন করেন। আবারও তাঁকে জীবিত দেখানো হবে বলে আশ্বাস দেন।
গত শুক্রবার বাগাতিপাড়া উপজেলায় উপজেলা নির্বাচন কার্যালয় থেকে স্মার্টকার্ড বিতরণ করা হয়। আবদুস সামাদ ওই কার্ড পাওয়ার আশায় লাইনে দাঁড়িয়েছিলেন। তবে শেষ পর্যন্ত তিনি খালি হাতে ফিরে যান। তিনি বলেন, সরকারি কাগজে ‘মৃত’ উল্লেখ থাকায় তিনি জাতীয় নাগরিক সনদের সব ধরনের সুবিধা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। আক্ষেপ করে তিনি বলেন, ‘ভেবেছিলাম এবার স্মার্টকার্ড পাওয়ার মধ্য দিয়ে হয়তো মৃত বদনাম ঘুচাতে পারব। কিন্তু বছরের পর বছর এ অপবাদ ঘুচছে না। হয়তো সত্যি সত্যি মরে গেলে কাগজপত্র ঠিক হবে।’
বাগাতিপাড়া পৌরসভার প্যানেল মেয়র ইউসুফ আলী বলেন, ‘জাতীয় পরিচয়পত্র পাওয়ার পর জীবিত থেকেও আবদুস সামাদ কী করে মৃত হয়ে গেলেন, তা ভেবে আমিও অবাক হয়েছি। বিষয়টি জানার পর আমি নির্বাচন অফিসে সুপারিশ করেছি কাগজপত্র সংশোধন করার জন্য। কিন্তু সংশোধন হয়নি।’
উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা আমিনুল ইসলাম বলেন, ‘আগে কে কী করেছেন তা বলতে পারব না। তবে প্রায় তিন মাস আগে আবদুস সামাদের ‘মৃত’ সংশোধনের দরখাস্ত আমার হাতে এসেছে। আমি প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়ার জন্য তা ঢাকায় জাতীয় নির্বাচন অফিসে পাঠিয়ে দিয়েছি। এখনো তা সংশোধন না হওয়ায় তিনি স্মার্টকার্ড পাননি।’