মানিকগঞ্জের দৌলতপুর উপজেলায় দুটি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে ‘মডেল টেস্ট’ পরীক্ষার নামে শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে অর্থ আদায়ের অভিযোগ করেছেন শিক্ষার্থীদের অভিভাবকেরা। এ নিয়ে তাঁদের মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। দুটি বিদ্যালয়ের কর্তৃপক্ষ বিষয়টি স্বীকার করেছে।
ওই বিদ্যালয় দুটি হলো উপজেলার কলিয়া ইউনিয়নের তালুকনগর বহুমুখী উচ্চবিদ্যালয় এবং কলিয়া পাবলিক উচ্চবিদ্যালয়।
গত বৃহস্পতিবার সকালে তালুকনগর বহুমুখী উচ্চবিদ্যালয়ে গেলে শিক্ষার্থী, অভিভাবক এবং শিক্ষকদের সঙ্গে এই প্রতিবেদকের কথা হয়। তাঁরা জানান, এই বিদ্যালয়ে সাধারণ ও ভোকেশনাল—এই দুটি শাখা রয়েছে। এর মধ্যে সাধারণ শাখায় (ষষ্ঠ থেকে দশম শ্রেণি) শিক্ষার্থী ৪৭৭ জন এবং ভোকেশনাল শাখায় (নবম ও দশম শ্রেণি) ১১৩ জন। মডেল টেস্ট পরীক্ষার নামে সাধারণ শাখার ষষ্ঠ, সপ্তম ও অষ্টম শ্রেণির ২৬৫ জন শিক্ষার্থীর প্রত্যেকের কাছ থেকে ৩০০ টাকা করে মোট ৭৯ হাজার ৫০০ টাকা আদায় করা হয়েছে। নবম ও দশম শ্রেণির ১০২ জন শিক্ষার্থীর প্রতিজনের কাছ থেকে ৩৫০ টাকা করে মোট ৩৫ হাজার ৭০০ টাকা আদায় করা হয়।
আর ভোকেশনাল শাখায় ১১৩ জন শিক্ষার্থীর প্রতিজনের কাছ থেকে ২৫০ টাকা করে মোট ২৮ হাজার ২৫০ টাকা আদায় করা হয়েছে। বিদ্যালয়ের দেওয়া হিসাব অনুযায়ী, দুটি শাখায় মোট ৫৯০ জন শিক্ষার্থীর কাছ থেকে মডেল টেস্ট পরীক্ষার নামে ১ লাখ ৪৩ হাজার ৪৫০ টাকা আদায় করে বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। গত ১৫ থেকে ২৯ এপ্রিলের মধ্যে এই পরীক্ষা নেওয়া হয়।
আলম খান ও পান্নু মিয়া নামের দুজন অভিভাবক বলেন, সরকারের নির্দেশনা অমান্য করে বিদ্যালয়ে মডেল টেস্ট পরীক্ষার নামে প্রায় দেড় লাখ টাকা আদায় করা হয়েছে। তাঁদের সন্তানও এই বিদ্যালয়ে লেখাপড়া করে। তাঁরাও টাকা দিয়েছেন। তাঁদের মতো আরও কয়েকজন অভিভাবক অভিযোগ করেন, দরিদ্র পরিবারের সন্তানদের কাছ থেকে পরীক্ষার নামে আদায় করা টাকা বিদ্যালয় ব্যবস্থাপনা কমিটির সদস্য এবং শিক্ষকেরা হাতিয়ে নিয়েছেন।
বিদ্যালয়টির প্রধান শিক্ষক সত্যেন্দ্রনাথ সরকার। পরীক্ষার নামে টাকা আদায়ের বিষয়ে তিনি বলেন, ছাত্রছাত্রীদের লেখাপড়ার মানোন্নয়নেই এই পরীক্ষা ও সেই বাবদ টাকা নেওয়া হয়েছে। বিদ্যালয় ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি আবদুল কুদ্দুস মিয়া বলেন, কমিটির মৌখিক সিদ্ধান্তে টাকা নেওয়া হয়েছে। বিদ্যালয়ের উন্নয়নে এই টাকা ব্যয় করা হবে।
একই দিন দুপুরে কলিয়া পাবলিক উচ্চবিদ্যালয়ে গিয়ে শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, এই বিদ্যালয়ে মডেল টেস্ট পরীক্ষার নামে শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে ১০০ টাকা করে নেওয়া হয়েছে। এই হিসাবে বিদ্যালয়ের ৮৭৫ জন শিক্ষার্থীর কাছ থেকে ৮৭ হাজার ৫০০ টাকা নেওয়া হয়।
বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মিজানুর রহমান বলেন, শিক্ষার্থীদের পড়াশোনার মান ভালো করতেই গত মঙ্গলবার পরীক্ষা নেওয়া হয়। শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে নেওয়া অর্থ পরীক্ষার কাজেই ব্যয় করা হয়েছে বলে তিনি দাবি করেন।
এসব বিষয়ে জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা ফরিদুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, মডেল টেস্ট পরীক্ষা এবং এ বাবদ শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে অর্থ আদায় করার কোনো বিধান নেই। বিষয়টি তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।