রাজশাহী মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ডে ছয় কর্মকর্তার পদোন্নতিতে অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। এ বিষয়ে জানতে গতকাল বৃহস্পতিবার দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) সমন্বিত জেলা কার্যালয়ের একটি দল শিক্ষা বোর্ডে অভিযান চালায়।
দুদকের কর্মকর্তারা জানান, সরেজমিনে পরিদর্শন ও রেকর্ডপত্র সংগ্রহ করে পদোন্নতিতে ব্যাপক অনিয়ম হয়েছে বলে প্রাথমিকভাবে প্রতীয়মান হয়েছে। বিদ্যমান জনবলকাঠামোতে কোনো শূন্যপদ না থাকলেও ভুতুড়ে পদ সৃষ্টি করে ছয় কর্মকর্তাকে ষষ্ঠ গ্রেড টপকে সপ্তম গ্রেড থেকে সরাসরি পঞ্চম গ্রেডে পদোন্নতি দেওয়া হয়েছে। এ ব্যাপারে পরবর্তী সিদ্ধান্তের জন্য দুদকের প্রধান কার্যালয়ে প্রতিবেদন পাঠানো হবে। এরপর সেখান থেকে যে নির্দেশনা আসবে, সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
পদোন্নতি পাওয়া ছয় কর্মকর্তা হলেন উপ-পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক (জেএসসি) ফরিদ হাসান, উপ-পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক (স্ক্রিপ্ট) রুবী, উপসচিব (ভান্ডার) দুরুল হোদা, উপসচিব (প্রটোকল) খোরশেদ আলম, উপবিদ্যালয় পরিদর্শক (রেজি.) মো. নুরুজ্জামান ও লাইব্রেরি অ্যান্ড ইনফরমেশন ডকুমেন্টশন অফিসার সুলতানা শামীমা আক্তার।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বোর্ডের এক কর্মকর্তা জানান, বোর্ড সভা অনুষ্ঠিত না হলেও গত ১৫ জানুয়ারি শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান মকবুল হোসেন এক প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে তাঁদের পদোন্নতির আদেশ জারি করেন। ২৬ জানুয়ারি সই করার জন্য বোর্ডের সচিব মোয়াজ্জেম হোসেনের কাছে বেতনশিট উপস্থাপন করা হয়। তবে বিধিসম্মতভাবে পদোন্নতি হয়নি বলে তিনি বেতনশিটে সই করেননি। এতে বোর্ডের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন বন্ধ হয়ে থাকে। ৫ ফেব্রুয়ারি চেয়ারম্যান মকবুল হোসেন নিজ ক্ষমতাবলে বেতন দেন। এরই মধ্যে এই পদোন্নতির বিষয়ে দুদকের হটলাইন ১০৬-এ একটি অভিযোগ করা হয়। এর পরিপ্রেক্ষিতে গতকাল শিক্ষা বোর্ডে অভিযান চালায় দুদক।
এই অভিযানের সময় চেয়ারম্যান মকবুল হোসেন বোর্ডে ছিলেন না। তিনি বর্তমানে কানাডায় অবস্থান করছেন। দুদকের জিজ্ঞাসাবাদে বোর্ডের দায়িত্বপ্রাপ্ত সচিব মোয়াজ্জেম হোসেন দুদক কর্মকর্তাদের জানিয়েছেন, তাঁকে না জানিয়ে ছয় কর্মকর্তাকে পদোন্নতি দেওয়া হয়েছিল। পদোন্নতি দেওয়া পদে বেতন-ভাতার ফাইল তাঁর কাছে উপস্থাপন করা হলে তিনি পদোন্নতির বিষয়টি জানতে পারেন।
দুদকের সমন্বিত জেলা কার্যালয়ের উপপরিচালক জাহাঙ্গীর আলম বলেন, তাঁদের কাছে অভিযোগ এসেছে, বোর্ডের চেয়ারম্যান মকবুল হোসেন কোনো প্রকার বোর্ড সভা না করেই ছয়জন কর্মকর্তাকে পদোন্নতি দেন। এর বিনিময়ে চেয়ারম্যান প্রত্যেকের কাছ থেকে ঘুষ নেন।
অনিয়মের বিষয়ে কানাডায় অবস্থানরত শিক্ষা বোর্ড চেয়ারম্যান মকবুল হোসেনের সঙ্গে মেসেঞ্জারে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, দুদক তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ করেনি। তাঁর কাছে কোনো কিছু জানতেও চায়নি। পদোন্নতির বিষয়ে তিনি বলেন, ১৯৬১ সালের অধ্যাদেশে বোর্ড চেয়ারম্যানের যে ক্ষমতা রয়েছে, তা দিয়ে বোর্ডের সক্ষমতা বাড়ানোর জন্য এই পদোন্নতি দিতেই পারি।