কক্সবাজারের টেকনাফ, জয়পুরহাটের পাঁচবিবি ও ময়মনসিংহে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) ও পুলিশের সঙ্গে কথিত ‘বন্দুকযুদ্ধে’ দুই রোহিঙ্গাসহ ৪ জন নিহত হয়েছেন। গতকাল বৃহস্পতিবার দিবাগত রাত ও আজ শুক্রবার ভোরের দিকে এসব ‘বন্দুকযুদ্ধের’ ঘটনা ঘটে।
টেকনাফে বিজিবির সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে দুজন রোহিঙ্গা নিহত হয়েছে। বিজিবি সূত্রে জানা গেছে, বৃহস্পতিবার দিবাগত রাত ১২টা ২০ মিনিটের দিকে জানা যায়, মিয়ানমার থেকে ইয়াবার একটি বড় চালান আসছে। ওই তথ্যের ভিত্তিতে টেকনাফের হোয়্যাকং লম্বাবিল এলাকায় নাফ নদীতে বিজিবি কৗশলগত অবস্থান নেয়। রাতে ৪–৫ জনের একটি ইয়াবা পাচারকারী দল হস্তচালিত নৗকায় বাংলাদেশের জলসীমায় ঢোকে। বিজিবি তাদের চ্যালেঞ্জ করলে কয়েকজন পালিয়ে যাওয়ার সময় গুলি ছোড়ে। এতে বিজিবির তিন সদস্য আহত হন। আত্মরক্ষার্থে বিজিবির সদস্যরা পাল্টা গুলি ছোড়েন। পরে নাফ নদীর পাড়ে দুই ব্যক্তিকে গুলিবিদ্ধ অবস্থায় পড়ে থাকতে দেখা যায়। ঘটনাস্থল থেকে ৫০ হাজার পিস ইয়াবা বড়ি ও দেশীয় অস্ত্র জব্দ করা হয়। পরে আহত দুজনকে টেকনাফ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেওয়া হয়।
টেকনাফ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের জরুরি বিভাগের চিকিৎসক খান এ আলম বলেন, রাতে বিজিবি ৫ জনকে হাসপাতালে আনে। এর মধ্যে দুজন সাধারণ মানুষ। তিনজন বিজিবির পোশাক পরা ছিলেন। গুলিবিদ্ধ দুজনকে উন্নত চিকিৎসার জন্য কক্সবাজার সদর হাসপাতালে পাঠানো হয়।
পরে কক্সবাজার সদর হাসপাতালের জরুরি বিভাগের চিকিৎসকেরা গুলিবিদ্ধ ওই দুজনকে মৃত ঘোষণা করেন। তাঁরা হলেন কুতুপালং রোহিঙ্গা শিবিরের আবুল হাশিম (২৫) ও নূর কামাল (১৯)। তাঁদের লাশ কক্সবাজার জেনারেল হাসপাতালের মর্গে রাখা হয়েছে। টেকনাফ ২ বিজিবির অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল মোহাম্মদ ফয়সল হাসান ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করেছেন।
জয়পুরহাটের পাঁচবিবিতে পুলিশের সঙ্গে কথিত ‘বন্দুকযুদ্ধে’ আমিরুল ইসলাম ওরফে ক্যাসেট (৪৫) নামের এক ব্যক্তি নিহত হয়েছে। এ ঘটনায় পুলিশের দুই সদস্য আহত হয়েছেন। উপজেলার ভাড়াহুত ফসলি মাঠের ইনতাজ আলীর ধানখেতে বৃহস্পতিবার গভীর রাতে এই ‘বন্দুকযুদ্ধের’ ঘটনা ঘটেছে বলে পুলিশ দাবি করেছে। পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে ১টি পিস্তল, ৭টি গুলি, চাপাতি, ৪টি ধারালো চাকু ও ৮৭ বোতল ফেনসিডিল উদ্ধারের কথা জানিয়েছে।
নিহত আমিরুল পিয়ারা গ্রামের বাসিন্দা। আমিরুলের বিরুদ্ধে অপহরণসহ একধিক মামলা রয়েছে বলে পুলিশ জানিয়েছে।
পাঁচবিবি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মুনসুর রহমানের ভাষ্য, থানা–পুলিশ বৃহস্পতিবার গভীর রাতে শিরহট্টি এলাকায় টহল দিচ্ছিল। এ সময় ভাড়াহুত গ্রামের ফসলি মাঠের সামনে সড়কের ওপর বসে ৮-৯ জন লোক আড্ডা দিচ্ছিলেন। পুলিশের উপস্থিতি টের পেয়ে তাঁরা টহল পুলিশের গাড়ি লক্ষ্য করে গুলি ছোড়েন। পুলিশও পাল্টা গুলি ছোড়ে। পরে ধানখেত থেকে গুলিবিদ্ধ অবস্থায় এক ব্যক্তির লাশ উদ্ধার করা হয়।
ময়মনসিংহের গফরগাঁও উপজেলায় জেলা পুলিশের গোয়েন্দা শাখার (ডিবি) সঙ্গে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ এক ব্যক্তি নিহত হয়েছেন। পুলিশের দাবি, ওই ব্যক্তি ডাকাত দলের সদস্য ছিলেন। বৃহস্পতিবার মধ্যরাতে উপজেলার রসুলপুর এলাকায় ‘বন্দুকযুদ্ধের’ ঘটনাটি ঘটে।
ডিবির ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা শাহ্ কামাল আকন্দের ভাষ্য, গফরগাঁওয়ের রসুলপুর আঞ্চলিক সড়কের পাশে ডাকাতদল ডাকাতির প্রস্তুতি নিচ্ছে—এ তথ্যের ভিত্তিতে তাঁরা অভিযানে নামেন। ঘটনাস্থলে গোয়েন্দা পুলিশের দুটি দল পৌঁছানোমাত্র ডাকাতেরা পুলিশকে লক্ষ্য করে গুলি ছুড়তে থাকে। এ সময় আত্মরক্ষার্থে পুলিশও পাল্টা গুলি ছোড়ে। একপর্যায়ে ডাকাতদল পিছু হটলে ঘটনাস্থলে এক ডাকাত সদস্যকে গুলিবিদ্ধ অবস্থায় পড়ে থাকতে দেখা যায়। তাঁকে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হলে কর্তব্যরত চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন। তাঁর নাম আব্দুল মোতালেব (৪২)। তিনি উপজেলার ছয়ানী গ্রামের বাসিন্দা। ঘটনাস্থল থেকে ১টি পাইপগান, ১০টি শটগানের কার্তুজ এবং ২০টি কার্টুজের খোসা উদ্ধার করেছে পুলিশ।
পুলিশ জানায়, নিহত আবদুল মোতালেব ও তাঁর সহযোগীরা দীর্ঘদিন ওই অঞ্চলে বিভিন্ন ডাকাতির ঘটনায় জড়িত। মোতালেবের বিরুদ্ধে একাধিক মামলা রয়েছে।