বেলা সাড়ে তিনটা। যাত্রাবাড়ী থানার ডিউটি অফিসারের কক্ষে হঠাৎ এক ব্যক্তিকে ঘাড় ধাক্কা দিয়ে ঢোকালেন এক পুলিশ সদস্য। পোশাকের পকেটে ঝোলানো ট্যাগে তাঁর নাম রবজেল। ঢুকিয়েই আর কোনো কথা নেই। কান বরাবর চালালেন দশাসই এক থাপ্পড়। ওই ব্যক্তি ব্যথায় চিৎকার করছেন। প্রতিবাদ করছেন। জানতে চাইছেন, কেন তাঁকে মারধর করা হচ্ছে।
ঘটনাটি ঘটেছে আজ সোমবার, এই প্রতিবেদকের সামনেই। তবে ওই ব্যক্তির অপরাধটা কী, সে সম্পর্কে থানার ডিউটি অফিসার এবং তাঁকে মারধরে ব্যস্ত পুলিশ সদস্যদের কেউ কোনো কথা বলতে চাননি। পরে জানা যায়, ওই ব্যক্তির নাম ইকবাল। যাত্রাবাড়ী থানার উল্টো দিকে ভাই ভাই ইলেকট্রনিকস নামের বৈদ্যুতিক সরঞ্জামের একটি দোকান আছে। রবজেল তাঁর দোকানে ব্যাগ রাখতে চেয়েছিলেন। তিনি দোকান বন্ধ করে বেরিয়ে যাবেন বলে ব্যাগটি রাখতে চাননি। এতেই ক্ষিপ্ত হয়ে রবজেল তাঁকে থানায় ধরে আনেন।
ডিউটি অফিসারের কক্ষে ধরে আনার পর আক্রান্ত ব্যক্তি চিৎকার করে বলছিলেন, ‘আপনি মারবেন কেন? কেন আমাকে মারবেন? আমাকে আমার গার্ডিয়ানের সঙ্গে কথা বলতে দিন।’ উত্তরে পুলিশ সদস্যরা তাঁকে ঠেলতে ঠেলতে প্রথমে কক্ষের একটি কোনায় ফেলে দেন। এরপর কান ধরে ওঠবস করতে বলেন। তাতে রাজি না হয়ে ওই ব্যক্তি জোরে জোরে বলতে থাকেন, ‘পারলে আমাকে মেরে ফেলেন।’ কক্ষটিতে ভিড় জমে গেলে রবজেল তাঁকে টেনে তুলে ধাক্কাতে ধাক্কাতে বের করে দেন। তিনি বলতে থাকেন, ‘চল, তোকে এসি স্যারের রুমে নিয়ে যাই।’
আসলে কী হয়েছে, এই ব্যক্তি কে? কেনইবা তাঁকে মারা হচ্ছে? জানতে চাইলে ডিউটি অফিসার বলেন, ‘আপনি যা দেখলেন, আমিও তা–ই দেখলাম। বিস্তারিত কী ঘটেছে বলতে পারব না।’ অপর এক পুলিশ সদস্য বলেন, ‘সে আসলে পুলিশের সঙ্গে ব্যবহারটা ভালো করে নাই।’
যাত্রাবাড়ী থানা থেকে বেরিয়ে ভাই ভাই ইলেকট্রনিকসের দোকানের আশপাশের ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা হয়। তাঁরা সবাই ইকবালকে চেনেন। পুলিশ খামাখাই তাঁকে ধরে নিয়ে গেছে বলেও অভিযোগ করেন। পুলিশি ঝামেলা এড়াতে তাঁরা নাম প্রকাশ করতে চাননি। একজন ব্যবসায়ী বলেন, ‘ইকবাল ভাই ব্যাগ রাখতে চায় নাই। দিনকাল খারাপ। পুলিশ ব্যাগে কিছু ঢুকায়া যদি রাইখা যায়, পরে হয়রানি করে এই ভয়ে। দেখেন কিছু করতে পারেন কি না।’
জানতে চাইলে যাত্রাবাড়ী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আনিসুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, এ বিষয়ে তিনি কিছু জানেন না। যদি এমন কিছু ঘটে থাকে, সেটা ঠিক হয়নি। তিনি অবশ্যই ব্যবস্থা নেবেন।