'গোলাগুলিতে' শিশু ধর্ষণ মামলার দুই আসামি নিহত

বন্দুকযুদ্ধ। ছবিটি প্রতীকী
বন্দুকযুদ্ধ। ছবিটি প্রতীকী

ভোলা সদর উপজেলায় পুলিশের সঙ্গে ‘গোলাগুলিতে’ দুই যুবক নিহত হয়েছেন। পুলিশ বলছে, নিহত দুই যুবক স্কুলছাত্রী ধর্ষণ মামলার আসামি।

গতকাল মঙ্গলবার দিবাগত রাত আড়াইটার দিকে উপজেলার রাজাপুর বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ এলাকায় এই ঘটনা ঘটে।

নিহত দুই যুবক হলেন আল আমিন (২৫) ও মঞ্জুর আলম (৩০)। আল আমিনের বাড়ি সদর উপজেলার চরসামাইয়া ইউনিয়নের ৩ নম্বর ওয়ার্ডে। বাবার নাম সৈয়দ আহম্মেদ। আর মঞ্জুর একই এলাকার কামাল মিস্ত্রির ছেলে।

পুলিশের ভাষ্য, স্কুলছাত্রীকে গণধর্ষণ মামলার আসামিদের ধরতে গতকাল দিবাগত রাত আড়াইটার দিকে সদর উপজেলার রাজাপুর ইউনিয়নের ৪ নম্বর ওয়ার্ডের দক্ষিণ রাজাপুরের নদীর তীরসংলগ্ন এলাকায় যায় পুলিশ। এ সময় পুলিশকে লক্ষ্য করে গুলি ছোড়া হয়। আত্মরক্ষার্থে পুলিশও পাল্টা গুলি ছোড়ে। পরে ঘটনাস্থলে দুই যুবকের লাশ পাওয়া যায়। এলাকার লোকজন লাশ দুটি শনাক্ত করেন।

ঘটনা নিয়ে আজ বুধবার দুপুরে ভোলার পুলিশ সুপার সরকার মো. কায়সার তাঁর কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলন করেন। তিনি বলেন, ঘটনাস্থল থেকে একটি বন্দুক ও গুলির খোসা উদ্ধার করা হয়েছে।

পুলিশ জানায়, ঈদের আগের দিন গত রোববার রাতে সদর উপজেলার একটি গ্রামে প্রতিবেশী এক নারীর কাছে হাতে মেহেদি লাগাতে গিয়ে ১২ বছরের এক শিশু ধর্ষণের শিকার হয়। গুরুতর অবস্থায় শিশুটিকে প্রথমে ভোলা সদর হাসপাতালে, পরে বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। শিশুটি স্থানীয় একটি স্কুলের ষষ্ঠ শ্রেণির শিক্ষার্থী।

পুলিশ ও শিশুটির পরিবার জানায়, বাড়ির পাশের যে নারীর কাছে শিশুটি হাতে মেহেদি লাগাতে গিয়েছিল, তাঁর ভাড়াটে ছিলেন আল আমিন। আর তাঁর সহযোগী ছিলেন মঞ্জুর। ঘটনার দিন তাঁরা শিশুটির হাত-পা বেঁধে, মুখে কাপড় গুঁজে দিয়ে তাকে ধর্ষণ করেন। শিশুটি গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়লে তাকে ওই অবস্থায় ফেলে আল আমিন ও মঞ্জুর পালিয়ে যান।

শিশুটির গোঙানির শব্দ পেয়ে প্রতিবেশীরা ঘটনাস্থলে গিয়ে তাকে রক্তাক্ত অবস্থায় দেখতে পায়। পরে তার পরিবারকে খবর দেয়। গুরুতর অসুস্থ অবস্থায় শিশুটিকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নেওয়া হয়।

ভোলা সদর হাসপাতালের চিকিৎসকেরা জানান, শিশুটির প্রচুর রক্তক্ষরণ হয়। তার অবস্থা গুরুতর হওয়ায় তাকে গত সোমবার বিকেলে উন্নত চিকিৎসার জন্য বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়।

মঙ্গলবার দুপুরে বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, শিশুটি চিকিৎসাধীন রয়েছে। তাকে স্যালাইন দেওয়া হচ্ছে। তার আরও রক্তের প্রয়োজন। অভিভাবকদের রক্ত জোগাড় করতে বলা হয়েছে।

এ ঘটনায় সোমবার শিশুটির বাবা বাদী হয়ে তিনজনকে আসামি করে ভোলা সদর মডেল থানায় মামলা করেন। নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে মামলাটি করা হয়। ঘটনার পর দুই আসামির সহযোগী জামাল নামের এক ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।

শিশুটির পরিবার ও স্থানীয় লোকজনের ভাষ্য, শিশুটির বাবা ঈদ উপলক্ষে তাঁর দুই মেয়ের জন্য বাজার থেকে মেহেদি কিনে এনেছিলেন। রোববার সন্ধ্যার দিকে তিনি গরু বিক্রির টাকা আনতে ভোলা শহরে যান। বাবা শহরে যাওয়ার পর দুই বোন রাত আটটার দিকে প্রতিবেশী দূরসম্পর্কের এক আত্মীয়ের (নারী) বাড়িতে হাতে মেহেদি লাগানোর জন্য যায়। এ সময় ওই প্রতিবেশীর ভাড়াটে আল আমিন শিশুটিকে ‘কথা আছে’ বলে নিজের ঘরে ডেকে নেন। শিশুটিকে আল আমিন ও তাঁর সহযোগী মঞ্জুর ধর্ষণ করেন।

আরও পড়ুন:
মেহেদি লাগাতে গিয়ে ধর্ষণের শিকার শিশু