'আর কত ছিনতাই হলে রাজধানীর মগবাজার-মৌচাক উড়ালসড়কে বাতি জ্বলবে?'

রাজধানীর মগবাজার-মৌচাক উড়ালসড়কে আলো জ্বলে না। অন্ধকার ভুতুড়ে পরিবেশ। ছবি: আসাদুজ্জামান
রাজধানীর মগবাজার-মৌচাক উড়ালসড়কে আলো জ্বলে না। অন্ধকার ভুতুড়ে পরিবেশ। ছবি: আসাদুজ্জামান

অন্য স্থানে খুন করে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র মিজানুর রহমানের লাশ গত ৬ জানুয়ারি গভীর রাতে কারওয়ান বাজার উড়ালসড়কের অংশে ফেলে রেখে যায় ছিনতাইকারীরা।

আর গত বছরের ২৬ আগস্ট গভীর রাতে মালিবাগ উড়ালসড়কে মোহাম্মদ মিলন নামের এক ব্যক্তিকে খুন করে মোটরসাইকেল ছিনিয়ে নেয় দুর্বৃত্তরা।

মগবাজার ও মৌচাক উড়ালসড়কে নৃশংস দুটি খুনের ঘটনাই ঘটেছে রাতে। কেবল এ দুটি ঘটনা নয়, মগবাজার ও মৌচাক উড়ালসড়কে রাতের বেলায় প্রায়ই ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটছে।

তেজগাঁও শিল্পাঞ্চল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আলী হোসেন খান প্রথম আলোকে জানান, আলো না থাকার কারণে মগবাজার ও মৌচাক উড়ালসড়কে প্রায়ই ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটছে। ঘটছে সড়ক দুর্ঘটনা। রাতের বেলায় মাদকসেবীরা ছিনতাইসহ নানা ধরনের অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে পড়ছে।

রমনা থানার ওসি মনিরুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, মগবাজার-মৌচাক উড়ালসড়কে ২৭২টি লাইটপোস্ট আছে। কিন্তু কোনো আলো জ্বলে না। উড়ালসড়কে আলো না থাকায় অনেক সমস্যা হচ্ছে। ছিনতাই, চুরিসহ নানা ধরনের ঘটনা ঘটছে।

রমনা, হাতিরঝিল ও তেজগাঁও শিল্পাঞ্চল থানা-পুলিশের সঙ্গে কথা বলে জানা গেল, মগবাজার-মৌচাক উড়ালসড়কে আলো না থাকার কারণে রাতে অপরাধীদের দৌরাত্ম্য বহুগুণ বেড়ে যায়।

শামীম হোসেন নামের মোটরসাইকেলের চালক প্রথম আলোকে বলেন, ‘আর কত ছিনতাই, আর কত ঘটনা ঘটলে মগবাজার-মৌচাক উড়ালসড়কে বাতি জ্বলবে। দিনের পর দিন ঢাকার এমন গুরুত্বপূর্ণ উড়ালসড়কে আলো থাকবে না, তা কি ভাবা যায়?’

উড়ালসড়কে কবে আলো জ্বলবে?
প্রায় তিন বছর আগে ২০১৭ সালের অক্টোবর মাসে মগবাজার-মৌচাক উড়ালসড়কে যানবাহন চলাচলের জন্য খুলে দেওয়া হয়। উড়ালসড়কটি বাস্তবায়নকারী প্রতিষ্ঠান স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি)। উড়ালসড়ক নির্মাণের দুই বছর পাঁচ মাস পার হয়েছে কিন্তু সেখানে আলো জ্বলেনি।

বর্তমানে উড়ালসড়কটির দেখভালের দায়িত্বে আছে ঢাকার দক্ষিণ সিটি করপোরেশন। প্রতিষ্ঠানটির নির্বাহী প্রকৌশলী (ইলেকট্রিক্যাল সার্কেল অ্যান্ড ইলেকট্রিক্যাল ডিভিশন) মাহতাব আহমেদ প্রথম আলোকে বলেন, ‘মগবাজার-মৌচাক উড়ালসড়কে লাইটপোস্ট আছে কিন্তু আলো নেই, বিষয়টি আমরা জানি। লাইট লাগানোর জন্য স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ে আবেদন করা হয়েছে। মন্ত্রণালয়ের অনুমতি মেলার পর উড়ালসড়কে আলোর ব্যবস্থা হবে।’

সরেজমিন রাতের বেলা মগবাজার-মৌচাক উড়ালসড়ক দেখা গেছে, সন্ধ্যার পর উড়ালসড়কে ভুতুড়ে পরিবেশ তৈরি হয়। সন্ধ্যার পরপরই উড়ালসড়কের কারওয়ান বাজার অংশে মাদকসেবীদের আনাগোনা বেড়ে যায়। অনেক শিশুর হাতে ডান্ডি নামের সহজলভ্য মাদক চোখে পড়ে। গত শনিবার বেলা ১১টার দিকে দুই কিশোর জানায়, তাদের মতো অনেকে উড়ালসড়কে আসে, ডান্ডি খায়।

তেজগাঁও শিল্পাঞ্চল থানার ওসি জানান, আলো না থাকায় সংঘবদ্ধ অনেক মাদকসেবী তরুণ, শিশু ছিনতাইসহ নানা ধরনের অপরাধ করছে। উড়ালসড়কে আলো না থাকার সমস্যার কথা জানিয়ে লিখিতভাবে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে। উড়ালসড়কে দ্রুত আলোর ব্যবস্থা করা জরুরি হয়ে পড়েছে।

ঢাকার মগবাজার উড়ালসড়কের কারওয়ান বাজার অংশ। ছবি: আসাদুজ্জামান

নিয়মিতভাবে উড়ালসড়ক ব্যবহার করেন অটোরিকশাচালক ইয়াকুব আলী। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, মগবাজার-মৌচাক উড়ালসড়কে ওঠার পর মনে হয়, অন্ধকারের মধ্যে ঢুকে পড়েছি। ভয় লাগে।

আরেক মোটরসাইকেলের চালক ফেরদৌস হাসান বলেন, কত দিন হয়ে হয়ে গেল, মগবাজার-মৌচাক উড়ালসড়ক চালু হয়েছে। সব জায়গায় আলো আছে কিন্তু এই উড়ালসড়কে আলো নেই। শুধুই অন্ধকার। রাতে উড়ালসড়কে উঠলে খুব ভয় লাগে।

মগবাজার-মৌচাক উড়ালসড়কে আলো না থাকার নানা অসুবিধার কথা জানানো হলে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা শাহ মো. ইমদাদুল হক প্রথম আলোকে বলেন, ‘উড়ালসড়কে লাইটপোস্ট আছে কিন্তু বাতি নেই। এসব কথা আমরা ভালোভাবে জানি। উড়ালসড়কে আলোর ব্যবস্থা করার জন্য স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ে কয়েক মাস আগে প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে। এখনো অনুমতি মেলেনি। অনুমতি ও অর্থায়ন মিললে যত দ্রুত সম্ভব উড়ালসড়কে আলোর ব্যবস্থা করা হবে।’