ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সরাইল উপজেলার শাহবাজপুর পূর্ব সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের এক সহকারী শিক্ষক টাকা ধার নিয়ে বিপাকে পড়েছেন। এ টাকা শোধের জের ধরে তিনি ইতিমধ্যে জেল খেটেছেন। চাকরি থেকেও সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে তাঁকে।
ওই শিক্ষক হলেন শাহবাজপুর গ্রামের আরিফুল ইসলাম (৪৬)। গত বৃহস্পতিবার সরাইল প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করে তিনি এসব কথা বলেন। এ সময় কান্নাজড়িত কণ্ঠে তিনি বলেন, ‘আমি চাকরি ফেরত চাই। অসুস্থ বাবা ও তিন মেয়েসহ পরিবারের সদস্যদের নিয়ে বাঁচতে চাই।’
আরিফুল সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পড়ে শোনান। তিনি বলেন, বাসার ছাদ থেকে পড়ে অসুস্থ মেয়ের চিকিৎসার জন্য তিনি হালুয়াপাড়া গ্রামের বাসিন্দা ও সাবেক ইউপি সদস্য হুমায়ুন মিয়ার কাছ থেকে ২০১০ সালের ১৩ জানুয়ারি সুদে ৫০ হাজার টাকা ঋণ নেন। শর্ত ছিল তিনি প্রতি মাসে চেকের মাধ্যমে ২ হাজার করে টাকা সুদ দেবেন। এ জন্য তিনি হুমায়ুনের কাছে সই করা চেক বই জমা দেন। এভাবে ২০১৪ সালের মার্চ পর্যন্ত ৭৬ হাজার টাকা সুদ দেন তিনি। এরপর ৫০ হাজার টাকা ফেরত দিয়ে তিনি চেক বই ফেরত চান। এতে বেঁকে বসেন হুমায়ুন। তখন হুমায়ুন তাঁর কাছে ১ লাখ টাকা দাবি করেন। এরপর তিনি সুদ দেওয়া বন্ধ করেন। এতে খেপে গিয়ে হুমায়ুন তাঁকে মামলা দিয়ে হয়রানি করার ও প্রাণনাশের হুমকি দেন। সামাজিকভাবে বৈঠকের মাধ্যমে বিষয়টি নিষ্পত্তির চেষ্টা করেন তিনি। এতে আরও খেপে হুমায়ুন ২০১৪ সালের ১০ মার্চ আদালতে তাঁর বিরুদ্ধে চেক জালিয়াতির মামলা করেন। একই বছরের ২ জুন মামলাটি দুদকে চলে যায়। এরপর হুমায়ুন তাঁকে আবারও প্রাণনাশের এবং তাঁর মেয়েদের অপহরণের হুমকি দেন। এ ঘটনায় তিনি ২০১৪ সালের ৬ জুলাই সরাইল থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেন। গত বছরের মে মাসে মামলাটি দুদক থেকে নিম্ন আদালতে ফেরত যায়। গত বছরের ৮ আগস্ট আদালত তাঁকে এক বছরের সশ্রম কারাদণ্ড ও ৩ হাজার টাকা জরিমানা করেন। একই দিন তিনি আপিল করে জামিনে মুক্তি পান। রায় ঘোষণার পর গত বছরের নভেম্বরে তাঁকে সাময়িক বরখাস্ত করে কর্তৃপক্ষ। গত ২০ জানুয়ারি আদালতের মাধ্যমে তিনি ১ লাখ ৫০ হাজার টাকা দিয়ে আপিল মঞ্জুরের আবেদন করেন। এতেও হুমায়ুন বেঁকে বসেন। তিনি ৫ লাখ টাকা দাবি করছেন।
আরিফুল ইসলাম কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, ‘৫০ হাজার টাকার জন্য চাকরি থেকে বরখাস্ত হলাম। সামাজিকভাবে হেয় হলাম, আদালত চত্বর আর সমাজপতিদের কাছে ঘুরে ঘুরে প্রায় ৩ লাখ টাকা শেষ করলাম। এখন আমি সর্বস্বান্ত। আমি চাকরি ফেরত চাই। পরিবারের সবাইকে নিয়ে বাঁচতে চাই।’
জানতে চাইলে হুমায়ুন মিয়া বলেন, ‘আরিফুল ইসলাম ছয় বছর আগে কয়েকটি খালি চেক জমা রেখে দেড় লাখ টাকা ঋণ নিয়েছিলেন। এ টাকা উদ্ধারের জন্য আমাকে বারবার আদালতে যেতে হয়েছে। এতে অনেক টাকা খরচ হয়েছে। সুনাম ক্ষুণ্ন হয়েছে। এ জন্য সব মিলিয়ে এখন আমাকে ৫ লাখ টাকা দিলে আমি মামলা তুলে নেব।’