দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) চেয়ারম্যান ইকবাল মাহমুদ আজ রোববার হঠাৎ করেই চট্টগ্রামের তিনটি বিদ্যালয় পরিদর্শনে যান। একটি বিদ্যালয়ে গিয়ে তিনি সেখানকার আট শিক্ষকের সাতজনকেই কর্মস্থলে পাননি। আরেক বিদ্যালয়ে অনুপস্থিত দুই শিক্ষক। বিষয়টি নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করে তিনি বলেন, যেকোনো মূল্যে শিক্ষাঙ্গনে শিক্ষা নিশ্চিত করা হবে।
দুদকের জনসংযোগ বিভাগ জানিয়েছে, দুদক চেয়ারম্যানের কাছে খবর আসে যে চট্টগ্রাম মহানগরের অধিকাংশ বিদ্যালয়ে শিক্ষকেরা নিয়মিত হাজির হন না। বিষয়টি জেনে আজ সকালে দুদক চেয়ারম্যান নিজেই যান চট্টগ্রামে। সকাল ৯টা ১৫ মিনিটে হাজির হন নগরীর কাট্টলী নুরুল হক চৌধুরী প্রাথমিক বিদ্যালয় প্রাঙ্গণে। স্কুল চলাকালে ছাত্রছাত্রী ও অভিভাবকদের স্কুলের বাইরে দেখে বিস্মিত দুদক চেয়ারম্যান ঢুকে পড়েন স্কুলে। সেখানে দেখেন, স্কুলের আটজন শিক্ষকের মধ্যে একমাত্র ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক উপস্থিত আছেন। বাকি সাতজন শিক্ষকই অনুপস্থিত। ছাত্রছাত্রীরা বিদ্যালয় প্রাঙ্গণের আশপাশে আচার-চানাচুর খেয়ে অলস সময় পার করছে। অভিভাবকেরা দুদক চেয়ারম্যানকে কাছে পেয়ে তাঁদের সন্তানদের শিক্ষা নিয়ে হতাশা ব্যক্ত করেন।
এ সময় দুদক চেয়ারম্যান ইকবাল মাহমুদ বলেন, ‘আমাদের সন্তানদের শিক্ষা নিয়ে কাউকেই ছিনিমিনি খেলতে দেওয়া হবে না। যেকোনো মূল্যে শ্রেণিকক্ষে শিক্ষা নিশ্চিত করা হবে। প্রয়োজনে দুদক দণ্ডবিধির ১৬৬ ধারা প্রয়োগ করবে। তারপরও ভবিষ্যৎ প্রজন্মের ক্ষতিসাধন করবেন বা করার চেষ্টা করবেন, এমন কাউকেই ছাড় দেওয়া হবে না।’
এরপরই দুদক চেয়ারম্যান সীতাকুণ্ডের ভাটিয়ারি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে যান। সেখানে গিয়ে দেখেন, ১১ জন শিক্ষকের মধ্যে দুজন অনুপস্থিত। তাঁদের অনুপস্থিতির কারণ স্কুল কর্তৃপক্ষ দুদক চেয়ারম্যানকে জানাতে পারেনি। দুদক চেয়ারম্যান ছাত্রছাত্রীদের উপস্থিতির তালিকা পরীক্ষা করে দেখেন, আগের দিন যেসব শিক্ষার্থী অনুপস্থিত ছিল, তাদের অনেককেই উপস্থিত দেখানো হয়েছে। আবার আজ সকাল ১০টা পর্যন্ত ছাত্রছাত্রীদের রোলকল করা হয়নি। এ বিষয়েও স্কুল কর্তৃপক্ষ কোনো ব্যাখ্যা দিতে পারেনি।
দুদক চেয়ারম্যান আকস্মিক পরিদর্শনে যান শীতলপুর উচ্চবিদ্যালয়ে। সেখানে গিয়ে তিনি জানতে পারেন, টেস্ট পরীক্ষায় অকৃতকার্য হওয়া কোনো শিক্ষার্থীকে এবার এসএসসি পরীক্ষায় অংশ নেওয়ার সুযোগ দেয়নি স্কুল কর্তৃপক্ষ। বিষয়টি জেনে তিনি সন্তোষ প্রকাশ করেন। তবে নবম শ্রেণিতে এক বা একাধিক বিষয়ে অকৃতকার্য হওয়া ছাত্রছাত্রীদের দুই হাজার টাকার বিনিময়ে দশম শ্রেণিতে উত্তীর্ণ করানোর বিষয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করে দুদক চেয়ারম্যান ইকবাল মাহমুদ বলেন, ‘এটা অনৈতিক। শিক্ষাক্ষেত্রে অনৈতিকতার কোনো স্থান থাকতে পারে না।’