মুক্তাগাছার ঘোগা ইউনিয়নের ৪৭ জন মৃত ব্যক্তির নামে তিন থেকে সাত বছর ধরে সরকারি বয়স্ক ভাতার টাকা তোলা হতো। ইউপি চেয়ারম্যান ও উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তাদের যোগসাজশে ঘটে এ জালিয়াতি। সম্প্রতি প্রশাসনের তদন্তে জালিয়াতির প্রমাণ পাওয়া যায়।
গত মে মাসে ঘোগা ইউনিয়ন পরিষদের ৯ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য লুৎফুর মৃত ব্যক্তিদের নামে বয়স্ক ভাতার টাকা তোলার বিষয়ে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) কাছে লিখিত অভিযোগ দেন। অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে ইউএনও একটি তদন্ত কমিটি করেন। তাঁদের তদন্তে ঘোগা ইউনিয়নের ৪৭ জন মৃত ব্যক্তির নামে বয়স্ক ভাতা তোলার বিষয়টির সত্যতা পাওয়া যায়। এরপর জুন মাস থেকে ৪৭টি বয়স্ক ভাতার কার্ড স্থগিত করা হয়েছে।
ইউএনও সুবর্ণা সরকার জানান, বাড়ি বাড়ি গিয়ে তদন্ত করে অভিযোগের সত্যতা মিলেছে। জুন থেকে মৃত ব্যক্তিদের ভাতা স্থগিত করা হয়েছে। তিনি বলেন, তদন্তে ২০১৩ সালে মারা যাওয়া ব্যক্তির নামে গত মার্চ মাসেও ভাতা তোলা হয়েছে। ঘোগা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও সমাজসেবা কার্যালয়ের কর্মকর্তারা এ কাজে জড়িত ছিলেন।
উপজেলা সমাজসেবা কার্যালয় সূত্র জানায়, প্রতি তিন মাস পরপর বয়স্ক ভাতার টাকা দেওয়া হয়। টাকা দেওয়ার আগে সমাজসেবার ইউনিয়ন পর্যায়ের কর্মীরা তালিকা দেন। ভাতাভোগী কেউ মারা গেলে সমাজসেবা কর্মকর্তার কার্যালয় তা সোনালী ব্যাংককে অবহিত করে তালিকা থেকে মৃত ব্যক্তির নাম বাদ দেয়। তবে ঘোগা ইউনিয়নে মৃত ব্যক্তির তালিকা দেওয়া হতো না।
উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা অসীম সরকার বলেন, ‘আমি মুক্তাগাছা উপজেলায় যোগদানের পর এ ধরনের অভিযোগ জানতে পারি। সম্প্রতি বিষয়টির প্রমাণ পাওয়া যায়। তবে আমার সময়ে কোনো অনিয়ম হয়নি।’
সোনালী ব্যাংকের মুক্তাগাছা উপজেলার কালীবাড়ি শাখায় ঘোগা ইউনিয়ন পরিষদের বয়স্ক ভাতার টাকা দেওয়া হয়। ব্যাংক সূত্র জানায়, ভাতার টাকা দেওয়ার সময় ব্যাংক কর্তৃপক্ষ শুধু ভাতাভোগী ব্যক্তির ছবি মেলায়। এ সময় ইউপি চেয়ারম্যান, সদস্য ও সমাজসেবার লোক উপস্থিত থাকেন।
সোনালী ব্যাংকের কালীবাড়ি শাখার ব্যবস্থাপক এম এ সোয়াইব বলেন, তাঁর জানামতে কমপক্ষে তিন বছর ধরে ঘোগা ইউনিয়নের বয়স্ক ভাতার তালিকায় মৃত ব্যক্তির নাম দেওয়া হয়। সম্প্রতি মৃত ব্যক্তিদের নামে ভাতা উত্তোলনের বিষয়টি জানার পর তাঁরা যাচাই–বাছাই শুরু করেন। বেশ কিছু কার্ডে ভুয়া ছবির ব্যবহার হাতেনাতে ধরেছেন। এসব কার্ডের ভাতা জুন মাস থেকে স্থগিত করা হয়েছে।
গত ২৫ জুলাই মুক্তাগাছার হাতিল গ্রামে গিয়ে কথা হয় কয়েকজন মৃত ব্যক্তির স্বজনের সঙ্গে। গ্রামের ৭০ বছর বয়সী হালেমুন নেছা বলেন, তাঁর স্বামী
হযরত আলী মারা গেছেন তিন বছর আগে। এরপর ঘোগা ইউপি চেয়ারম্যান কামরুজ্জামান কার্ডটি নিয়ে যান। সম্প্রতি তিনি জেনেছেন ওই কার্ডে টাকা তোলা হয়েছে।
সরেজমিনে আরও জানা যায়, হাতিল গ্রামের কাসেম আলী, হযরত আলী ও মকবুল হোসেন মারা গেছেন ২০১৬ সালে। ইউপি সদস্য লুৎফর রহমান স্বাক্ষরিত ওই তিন ব্যক্তির মৃত্যুসনদও রয়েছে। মৃত তিনজনের নামে গত মার্চ মাস পর্যন্ত ভাতা তোলা হয়েছে। সোনালী ব্যাংক থেকে সংগ্রহ করা ভাতার তালিকায় তিনজনের নাম রয়েছে।
এসব বিষয়ে ঘোগা ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান কামরুজ্জামান ওরফে লেবু বলেন, এসব অভিযোগ ভিত্তিহীন। তিনি এ ধরনের কোনো অনিয়মের বিষয়ে জানেন না।