মিয়ানমার থেকে পেঁয়াজ আমদানি করা হয়েছিল প্রতি কেজি ৪২ টাকা দরে। সেই পেঁয়াজ বিক্রি করা হচ্ছিল ৯০ থেকে ১১০ টাকায়। আজ রোববার সন্ধ্যায় দেশের বৃহত্তম পাইকারি বাজার চট্টগ্রামের খাতুনগঞ্জে আকস্মিক অভিযানে গিয়ে এই চিত্র পেয়েছেন জেলা প্রশাসনের ভ্রাম্যমাণ আদালত। এই অভিযোগে চারটি প্রতিষ্ঠানকে ১ লাখ ৩০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে। অভিযানের পর খাতুনগঞ্জে মিয়ানমারের পেঁয়াজ তাৎক্ষণিকভাবে ৭০-৭৫ টাকা দরে নেমে আসে।
খাতুনগঞ্জে পেঁয়াজের দাম নিয়ন্ত্রণে এর আগে তিনবার অভিযান চালানো হয়েছিল। এরপরেও নিয়ন্ত্রণে আনা যাচ্ছিল না বাজার। পেঁয়াজের বাজারমূল্য মাত্রাতিরিক্ত হওয়ায় আজ আবারও অভিযান চালানো হয়। বিকেল সাড়ে চারটা থেকে শুরু হয় অভিযান। অভিযানে নেতৃত্ব দেন জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মো. তৌহিদুল ইসলাম। র্যাব ও পুলিশের সদস্যরা এতে সহযোগিতা করেন।
অভিযানে খাতুনগঞ্জের শতাধিক আড়ত পরিদর্শন করা হয়। এসব আড়ত পরিদর্শন করে পেঁয়াজের দামে কারসাজির প্রমাণ পাওয়া যায়। তবে বেশি দামে বিক্রির ক্ষেত্রে কৌশল নিয়েছে প্রতিষ্ঠানগুলো। যেমন অছি উদ্দিন ট্রেডার্স নামের একটি প্রতিষ্ঠান নিজেদের আড়তে মূল্যতালিকায় মিয়ানমারের পেঁয়াজের দাম লিখে রেখেছে ৬০-৭০ টাকা। কিন্তু আড়তের বিক্রয় রেজিস্ট্রার পরীক্ষা করে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট দেখতে পান সিলেটগামী একটি চালানে পেঁয়াজের বিক্রয়মূল্য লেখা আছে ১১০ টাকা। প্রতারণা করে মূল্যতালিকা থেকে অধিক দামে পেঁয়াজ বিক্রি করার অপরাধে অছি উদ্দিন ট্রেডার্সকে ৪০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়।
খাতুনগঞ্জে এখন সবচেয়ে বেশি পেঁয়াজের মজুত আছে মেসার্স খাতুনগঞ্জ ট্রেডিংয়ে। এই আড়তটিও একইভাবে প্রতারণা করে আসছিল। এ আড়তের সামনে কুমিল্লা-ব্রাহ্মণবাড়িয়াগামী ট্রাকে পেঁয়াজভর্তি অবস্থায় দেখা যায়। ট্রাকে ওই আড়ত থেকে মিয়ানমারের পেঁয়াজ ১১০ টাকা দরে ক্রয় করে বোঝাই করা হচ্ছিল। কিন্তু নির্বাহী ওই আড়তে ঢুকে দেখেন মূল্যতালিকায় লেখা আছে ‘বার্মা পেঁয়াজের দাম ৬০-৬৫ টাকা’। এই প্রতারণার জন্য মেসার্স খাতুনগঞ্জ ট্রেডিংকে ৫০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে। এর পাশাপাশি সৌমিক ট্রেডার্স ও বেঙ্গল ট্রেডার্সকে মিয়ানমারের পেঁয়াজ আমদানি মূল্যের চাইতে মাত্রাতিরিক্তভাবে ১০০-১০৫ টাকা দরে বিক্রি করায় ২০ হাজার টাকা করে জরিমানা করা হয়। মোট চারটি মামলায় ১ লাখ ৩০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে।
অভিযানের পর মিয়ানমারের পেঁয়াজ তাৎক্ষণিকভাবে ৭০-৭৫ টাকা দরে নেমে আসে বলে জানান জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মো. তৌহিদুল ইসলাম। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, আমদানিকারক, কমিশন এজেন্ট ও আড়তদারেরা বাজারে পর্যাপ্ত পেঁয়াজ মজুত থাকা সত্ত্বেও দামে কারসাজি করে আসছিলেন। ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযানের খবর পেয়ে মিয়ানমারের পেঁয়াজ নিয়ে নতুন উপায়ে কারসাজির সঙ্গে জড়িত কমিশন এজেন্টরা এলাকা ছেড়ে পালিয়ে গেছেন। তাঁদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে র্যাব ও পুলিশকে জানানো হয়েছে।