নাটোরের বড়াইগ্রামে প্রবীণ রাজনীতিবিদ ও মুক্তিযোদ্ধা আয়নাল হককে হত্যার দায়ে দুই আসামিকে মৃত্যুদণ্ডাদেশ দিয়েছেন আদালত। সোমবার সকালে নাটোরের অতিরিক্ত দায়রা জজ মোহাম্মদ সাইফুর রহমান সিদ্দিক এই রায় ঘোষণা করেন।
এই দুই আসামি হলেন বড়াইগ্রামের মহিষভাঙ্গা গ্রামের তোরাপ উদ্দিন (৪৮) ও শামীম মোল্লা (৪২)। তাঁরা আদালতে হাজির ছিলেন। রায় ঘোষণার পর তাঁদের কারাগারে পাঠানো হয়।
অভিযোগ প্রমাণিত না হওয়ায় আদালত আসামি আতাউর রহমান (৪৫), লুৎফর রহমান (৫৫), সোহরাপ উদ্দিন (৫২), আবদুস সালাম (৪০), নাজমুল (৩৬), বনপাড়া পৌর এলাকার রেজাউল ইসলাম (৪২), মামুন হোসেন (৪৫), রহিম (৪৬), কামারদহ গ্রামের ভুটু (৪২), জুয়াড়ি গ্রামের আনিছুর রহমান (৪০) ও কাচুটিয়া গ্রামের বয়েন মণ্ডলকে (৫৫) খালাস দিয়েছেন আদালত।
মামলাটির তদন্ত পর্যায়ে বিএনপির তৎকালীন সাংসদ (বড়াইগ্রাম-গুরুদাসপুর) মো. একরামুল আলম ও বিএনপি নেতা সাহের উদ্দিন মারা যাওয়ায় তাঁদের মামলা থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়। বিচার চলাকাল আসামি সেন্টু ও আলামুদ্দিন মারা যাওয়ায় তাদের খালাস দেওয়া হয়েছে।
মামলার এজাহার থেকে জানা যায়, ২০০২ সালের ২৮ মার্চ রাত পৌনে নয়টার দিকে আয়নাল হক বনপাড়ার সাহেব পাড়ায় চিকিৎসক আনছারুল হকের চেম্বারে যান। সেখানে আগে থেকে ওত পেতে থাকা দুর্বৃত্তরা ধারালো অস্ত্র দিয়ে তাঁকে জখম করেন। স্থানীয় লোকজন তাঁকে উদ্ধার করে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যায়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় পরের দিনদুপুরে তিনি মারা যান। এ ঘটনায় নিহতের বড় ছেলে কে এম জাকির হোসেনের স্ত্রী নাজমা বেগম বাদী হয়ে ৩১ মার্চ বড়াইগ্রাম থানায় মামলা করেন। মামলায় বিএনপির তৎকালীন সাংসদ মো. একরামুল আলমসহ ১৭ জনকে আসামি করা হয়।
ঘটনার এক বছর পর দ্বিতীয় তদন্তকারী কর্মকর্তা বড়াইগ্রাম থানার তৎকালীন ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) গাজী সহিদুর রহমান আদালতে ১৫ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দাখিল করেন। মামলার এজাহারে আটজনকে এবং অভিযোগপত্রে ২০ জনকে সাক্ষী করা হয়। তবে আদালতে সাক্ষ্য দিয়েছেন ১০ জন।
অতিরিক্ত দায়রা জজ সোমবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে ৬১ পৃষ্ঠার লিখিত রায় পড়তে শুরু করেন। রায়ে দুই আসামিকে দণ্ডাদেশ দেন এবং ১১ জনকে খালাস দেন।
হত্যাকাণ্ড সংঘটিত হওয়ার ১৮ বছর পর দেওয়া এই রায়ের প্রতিক্রিয়ায় নিহতের ছেলে বনপাড়া পৌরসভার মেয়র কে এম জাকির হোসেন বলেন, ‘আমরা সব আসামির মৃত্যুদণ্ড আশা করেছিলাম। তাই যারা খালাস পেয়েছেন তাঁদের বিরুদ্ধে উচ্চ আদালতে আপিল করব।’ তিনি আরও বলেন, ‘মামলার রায় পেতে আমাদের ১৮ বছর অপেক্ষা করতে হয়েছে। রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করা হলে আরও কত বছর লাগবে তা জানি না।’
দণ্ডপ্রাপ্ত আসামিদের পক্ষে জেলা বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক বলেন, ‘আসামিরা সবাই খালাস পাবে—এমনটা আমাদের প্রত্যাশা ছিল। আমরা দণ্ডিতদের পক্ষে উচ্চ আদালতে যাব।’
খালাস পাওয়া আসামি রেজাউল ইসলামের ভগ্নিপতি আইনজীবী সাইদুর রহমান বলেন, রাজনৈতিক প্রতিহিংসায় এই মামলায় অনেককে আসামি করা হয়েছে। দীর্ঘদিন মামলা চালাতে গিয়ে তাঁরা আর্থিক ও মানসিকভাবে নিঃস্ব হয়ে গেছেন।