শ্রীলঙ্কায় মাদক চোরাচালান

১৩ বাংলাদেশির জড়িত থাকার তথ্য

কলম্বোর একটি দোতলা বাড়ির ফ্ল্যাটে হেরোইনের প্যাকেট। ছবি: সংগৃহীত
কলম্বোর একটি দোতলা বাড়ির ফ্ল্যাটে হেরোইনের প্যাকেট। ছবি: সংগৃহীত
>

• কলম্বোয় নিরাপত্তা হেফাজতে তিন বাংলাদেশি
• ১৪ ডিসেম্বর গ্রেপ্তার হন বাংলাদেশি এক নারী
• ৩১ ডিসেম্বর কলম্বোয় ধরা পড়েন দুই বাংলাদেশি
• তিন জনকে জিজ্ঞাসাবাদ করেছে ঢাকার প্রতিনিধিদল

শ্রীলঙ্কার সাম্প্রতিক সময়ের সবচেয়ে বড় মাদক চোরাচালানের সঙ্গে বাংলাদেশের অন্তত ১৩ জন নাগরিকের সম্পৃক্ততার তথ্য পেয়েছেন দেশটির আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা। আটক তিন বাংলাদেশিকে জিজ্ঞাসাবাদের পর শ্রীলঙ্কার স্পেশাল টাস্কফোর্সের (এসটিএফ) সদস্যরা বাংলাদেশি মাদক বহনকারীদের সম্পর্কে এই তথ্য জানতে পেরেছেন। এই মুহূর্তে কলম্বোতে অবস্থান করা বাংলাদেশের ছয় সদস্যের প্রতিনিধিদলকে বিষয়টি জানিয়েছে শ্রীলঙ্কা। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্র এই তথ্য নিশ্চিত করেছে।

শ্রীলঙ্কার সাম্প্রতিক ইতিহাসে মাদকের সবচেয়ে বড় চালান আটকের ঘটনার তদন্তে সহায়তা করতে দেশটির অনুরোধে বাংলাদেশের ছয় সদস্যের প্রতিনিধিদল ১৬ জানুয়ারি কলম্বো যায়। প্রতিনিধিদলে পুলিশ সদর দপ্তর, পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি), র‌্যাব, মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা রয়েছেন।

শ্রীলঙ্কার সাম্প্রতিক ইতিহাসে মাদকের সবচেয়ে বড় চালান ধরা পড়ে গত ৩১ ডিসেম্বর। এ ঘটনায় গ্রেপ্তার হন দুই বাংলাদেশি—বগুড়ার মোহাম্মদ জামালউদ্দিন ও জয়পুরহাটের দেওয়ান রফিউল ইসলাম। তাঁদের কাছ থেকে ২৭২ কেজি হেরোইন ও ৫ কেজি কোকেন জব্দ করা হয়। কলম্বোর উপকণ্ঠ মাউন্ট লাভিয়ানা এলাকায় বিশেষ অভিযান চালিয়ে দুজনকে গ্রেপ্তার করে দেশটির আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। তাঁদের কাছ থেকে জব্দ করা মাদকের দাম প্রায় ১৫২ কোটি টাকা।

এর আগে ১৪ ডিসেম্বর দেহিওয়ালা-মাউন্ট লাভিয়ানা থেকে ৩২ কেজি হেরোইনসহ গ্রেপ্তার করা হয় বাংলাদেশি নারী সূর্যমণিকে। তাঁদের জিজ্ঞাসাবাদের পর ৩ জানুয়ারি শ্রীলঙ্কার কর্তৃপক্ষ মাদক চোরাচালানের সঙ্গে জড়িত বাংলাদেশি আরও তিন নারীর নাম প্রকাশ করে। তাঁরা হলেন শাহীনা আক্তার, রেহানা আখতার ও তানিয়া।

সর্বশেষ ২০১৩ সালে একটি বিশেষ অভিযানে শ্রীলঙ্কায় একসঙ্গে আটক হয়েছিল ২৬১ কেজি মাদক। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্র এই তথ্য দিয়েছে।

কলম্বোর কূটনৈতিক সূত্রে জানা গেছে, শ্রীলঙ্কার আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর তথ্য অনুযায়ী আটক মাদকের চালানগুলো আফগানিস্তান থেকে শ্রীলঙ্কায় আনা হয়েছিল। মাদকের ওই চালানের চূড়ান্ত গন্তব্য হতে পারে অস্ট্রেলিয়া।

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একটি সূত্র গতকাল শনিবার প্রথম আলোকে জানিয়েছে, ১৭ জানুয়ারি বাংলাদেশের ছয় সদস্যের প্রতিনিধিদলটি শ্রীলঙ্কায় নিরাপত্তা হেফাজতে থাকা সূর্যমণি, জামালউদ্দিন ও রফিউলকে জিজ্ঞাসাবাদ করেছে। বাংলাদেশের প্রতিনিধিদলটি যাতে নিজেদের মতো করে ওই তিনজনের সঙ্গে কথা বলতে পারেন, সেটি নিশ্চিত করতে শ্রীলঙ্কার কোনো কর্মকর্তা জিজ্ঞাসাবাদের সময় উপস্থিত ছিলেন না।

শ্রীলঙ্কায় নিযুক্ত বাংলাদেশের হাইকমিশনার এম রিয়াজ হামিদুল্লাহ গতকাল মুঠোফোনে প্রথম আলোকে বলেন, ২১ জানুয়ারি প্রতিনিধিদলটি কলম্বো ছেড়ে যাওয়ার আগে শ্রীলঙ্কা পুলিশের মহাপরিদর্শকের সঙ্গে বৈঠক করবে। এদিকে শ্রীলঙ্কার মাদক নিয়ন্ত্রণ দপ্তরের কর্মকর্তাদের বরাত দিয়ে সে দেশের গণমাধ্যম বলছে, অভিযুক্ত তিন নারীর মধ্যে শাহীনা আক্তার মাদক চোরাচালানের প্রক্রিয়ায় অন্যদের যুক্ত করেছিলেন। শাহীনার সঙ্গে এশিয়া-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের একটি দেশ থেকে এক ব্যক্তি নিয়মিত যোগাযোগের মাধ্যমে মাদক হস্তান্তরের নির্দেশ দিতেন। কলম্বোর যে ফ্ল্যাট থেকে বিপুল পরিমাণ হেরোইন উদ্ধার করা হয়, গত বছরের জানুয়ারিতে সেটি এক বছরের চুক্তিতে ভাড়া নিয়েছিলেন শাহীনা আক্তার।

শ্রীলঙ্কার অভিবাসন কর্তৃপক্ষের তথ্য অনুযায়ী শাহীনা আক্তার ২০১৭ সালের ৩০ মার্চ থেকে ২০১৮ সালের ১৬ ডিসেম্বর পর্যন্ত অন্তত ১০ বার শ্রীলঙ্কায় গেছেন। ওই সময়ের মধ্যে তিনি কখনো কুয়ালালামপুর থেকে কলম্বো হয়ে ঢাকায় ফিরেছেন, কখনো কুয়ালালামপুর থেকে কলম্বো হয়ে কুয়ালালামপুরে গেছেন। আবার কখনো ঢাকা থেকে কলম্বো হয়ে আবার ঢাকায় ফিরেছেন। ওই ১৯ মাসে তিনি মূলত শ্রীলঙ্কান এয়ারলাইনস ও মালিন্দো এয়ারে তিনটি গন্তব্যে আসা-যাওয়া করেছেন।

আরও পড়ুন: